জনস্বার্থের রায় উপেক্ষিত

জনস্বার্থে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ থেকে বেশকিছু রায় ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানো অবৈধ ঘোষণা, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ, হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের নির্দেশ, ঢাকার চার নদ-নদী রক্ষায় উদ্যোগ- বিভিন্ন সময়ে দেয়া এসব রায় ও নির্দেশনার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা, উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে বছরের পর বছর ধরে তা উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে যারা রায় মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, উচ্চ আদালতের রায় যারা বাস্তবায়ন করছেন না তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার। তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আইন মেনে না চললে দেশে আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এদিকে জনস্বার্থের এসব রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষকে একটি তদারকি সেল গঠন করতে অনুরোধ করেছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু আজও তা গঠিত হয়নি। ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানো বন্ধ হয়নি : রাজধানীর ফুটপাতে প্রায়ই উঠে পড়ে মোটরসাইকেল। কখনও আবার পথচারীদের জায়গা ছেড়ে দিতে বিকট শব্দে হর্ন বাজাতেও দেখা যায়। এমনকি পুলিশ সদস্যকেও একই কাজ করতে দেখা গেছে। ২০১২ সালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানো অবৈধ ঘোষণা করেন।
সে সময় চালকদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু সরেজমিন মৎস্য ভবন, শাহবাগ, ফার্মগেট, কাকরাইল, পল্টন ও গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতে প্রায়ই মোটরসাইকেল উঠে পড়ছে। এদিকে ফুটপাতে গাড়ি নিয়ে উঠে পড়লে সাজার বিধান রেখে আইন পাস হচ্ছে। মন্ত্রিসভা এরই মধ্যে একটি আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে যাতে বলা হয়েছে- ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালালে তিন মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ হয়নি : উচ্চ আদালতের নির্দেশের ৮ বছর পার হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণে আজও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উদ্যানের ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ভাষণ দিয়েছিলেন, তা নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই অজানা। কারণ, সেই স্থানটি চিহ্নিত করা নেই। অথচ ওই স্থানটিসহ উদ্যানের মোট ৭টি ঐতিহাসিক স্থান চিহ্নিত ও সংরক্ষণ করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে ২০০৯ সালের ২৫ জুন উচ্চ আদালতে রিট করেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কেএম সফিউল্লাহ ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। ওই বছরের ৮ জুলাই বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমদের সমন্বয়ে গঠিত আদালত এ বিষয়ে রায় দেন এবং ২০১০ সালের জুলাই মাসে লিখিত রায় প্রকাশিত হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই ৭টি স্থান হল- ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দেয়া ভাষণের স্থান, ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণের স্থান, ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদে নির্বাচিত সদস্যগণের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের স্থান, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণের স্থান, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের স্থান, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেয়ার স্থান এবং ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ দেয়ার স্থান। চার নদ-নদী রক্ষায় হাইকোর্টের রায় : উচ্চ আদালতের আদেশ না মানায় ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের অবস্থা খুবই করুণ। নদীখেকোদের কারণে নদ-নদীগুলো তাদের মানচিত্রও হারাতে বসেছে। ভরাটের কারণে পানিপ্রবাহ কমে গেছে। ঢাকার চার নদ-নদী রক্ষার জন্য ২০০৯ সালের ২৫ জুন হাইকোর্ট ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে ঐতিহাসিক রায় দেন। রায়ে নদ-নদীতীরবর্তী স্থায়ী ও অস্থায়ী সব স্থাপনা উচ্ছেদ এবং সঠিক গতিপথ নির্ণয় করতে সিএস রেকর্ড অনুসারে সীমানা নির্ধারণে সরকারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১০ সালের ৩ মে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আবেদন নিষ্পত্তি করে দেন। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ওই রায় বাস্তবায়নের দাবিতে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে। অথচ সে রায় আজও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত হয়নি : ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও বিচারকদের ট্রাফিক জ্যামের ভোগান্তি দূর করতে জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশে বলা হয়, জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফুটপাত বা রাস্তার ওপর বালু, রড বা যে কোনো পণ্য রাখা, ভ্যান এবং ঠেলাগাড়ি পার্কিং, রাস্তার পাশে দোকানগুলোর পণ্য ফুটপাত বা রাস্তা দখল করে না রাখা, দোকান ও ফেরিওয়ালা, ফলের দোকান যেন না বসতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অথচ সরেজমিন দেখা গেছে, ওই এলাকায় পুলিশের সামনেই ফুটপাতের উপর বালু, রডসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাক, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। রায় কার্যকর না হওয়ায় গত বছরের ৭ নভেম্বর চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর আগে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আদালত অবমাননার মামলাটি করেন। মনজিল মোরসেদ নিজেই আদালতে শুনানি করেন। হাইড্রোলিক হর্ন পুরোপুরি বন্ধ হয়নি : চলতি বছরের ৫ নভেম্বর সারা দেশে বিভিন্ন যানবাহনে থাকা পরিবেশ দূষণকারী হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ঢাকার পাঁচটি এলাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার যেসব স্থানে শব্দদূষণ বেশি হয় সেসব স্থানে পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করে শব্দদূষণের মাত্রা নির্ধারণ ও শব্দ যাতে বেশি না হয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এর আগে রাজধানীতে হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ২২ আগস্ট হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট আবেদন করা হয়।
২৩ আগস্ট এক আদেশে ঢাকার সড়কগুলোয় চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ২৭ আগস্টের পর কোনো যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হলে গাড়িসহ তা জব্দ করা, হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধের পাশাপাশি বাজারে থাকা সব হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়। ৮ অক্টোবর এক আদেশে ঢাকা মহানগরে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারকারী যানবাহনের চালক ও মালিককে ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় সব হাইড্রোলিক হর্ন জমা দেয়া ও থানায় জমা হওয়া হাইড্রোলিক হর্ন ধ্বংস করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত। জানা গেছে, এখনও রাজধানীসহ সারা দেশে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ঢাকনা ছাড়া ট্রাক বা ভ্যান দিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহন : ১৬ অক্টোবর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে ঢাকনা ছাড়া ট্রাক বা ভ্যান দিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহন বন্ধ এবং রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলনের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু হাইকোর্টের এ নির্দেশনাও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করছে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। এখনও ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে ঢাকনাবিহীন গাড়িতে করে বর্জ্য অপসারণ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া হাইকোর্টের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ও মানা হচ্ছে না ঠিকমতো। এ বিষয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন ইউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি)প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ যুগান্তরকে বলেন, উচ্চ আদালত জনস্বার্থে বেশকিছু রায় দিয়েছেন। অধিকাংশ সময়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা পার হওয়া সত্ত্বেও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোয় আদালতের রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক হওয়া দরকার। কারণ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়িত না হলে তা আদালত অবমাননার শামিল। তিনি বলেন, দেশের নদ-নদী দখলমুক্ত করতে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। নদীগুলোর বর্তমান যে অবস্থা তা ভয়াবহ। সীমানা পিলার, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে নির্ধারিত সীমানা থেকে অনেক ভেতরে। নিয়ম ভেঙে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ ও বৃক্ষরোপণ করায় দখলদাররা এসব জায়গা ভরাট করে ফেলছে। অবিলম্বে এসবের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে বুড়িগঙ্গা, তুরাগসহ দেশের অন্য নদ-নদীগুলোর অনেক এলাকা দখলদারদের কবলে চলে যাবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণে হাইকোর্টের দেয়া রায় প্রসঙ্গে মনজিল মোরসেদ বলেন, ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণে একটি প্রকল্প বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এদিকে জনস্বার্থের রায় বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ট্রাফিকের ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ফয়সাল মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। প্রতিদিনই আমরা হর্ন ও গাড়ি জব্দ করছি। তবে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে রাতে অভিযান পরিচালনায় সমস্যা হয়। ফুটপাত দখলমুক্ত হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত আসলে মাছি তাড়ানোর মতোই। সকালে দখলমুক্ত করলে বিকালে আবার দখলে চলে যায়। তিনি বলেন, আমাদের সবার আগে মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। নইলে এ সমস্যা থেকেই যাবে। এদিকে আদালতের রায় বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃপক্ষকে একটি তদারকি সেল গঠন করার অনুরোধ করেছিলেন হাইকোর্ট। সেই সেলও এখন পর্যন্ত গঠিত হয়নি। এমন একটি সেল গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট রায় বাস্তবায়নের জন্য সুপ্রিমকোর্টের পাশাপাশি সরকারেরও তদারকি সেল গঠন করা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.