মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পক্ষে মত

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মিয়ানমার–বিষয়ক বিশেষ দূত বব রায়ে বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা রাখা উচিত। আর এই বিচার–প্রক্রিয়ায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কানাডার সমর্থন করা উচিত।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ঘুরে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ওপর অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে বব রায়ে এই অভিমত দিয়েছেন। কানাডার দৈনিক গ্লোব অ্যান্ড মেইল এবং কানাডার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিবিসি-রেডিও কানাডা গতকাল শনিবার জানিয়েছে, বব রায়ে তাঁর অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নারীদের নির্যাতনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি অপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি নিপীড়নের শিকার হওয়া লোকজনের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির অংশ হিসেবে বব রায়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেন। এ সময় তিনি সরেজমিনে কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ পেলেও তাঁকে রাখাইন সফরের অনুমতি দেয়নি মিয়ানমার সরকার। বব রায়ে তাঁর প্রতিবেদনে লিখেছেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের যে বক্তব্য আমি শুনেছি, তা একদিকে গা শিউরে ওঠার মতো। সুনির্দিষ্ট ঘটনার প্রমাণ সংগ্রহ করতে হলে নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ের ভিত্তিতে তা পদ্ধতিগতভাবে করতে হবে। এ জন্য গত কয়েক বছরের ঘটনাপ্রবাহ খতিয়ে দেখা উচিত। এসব ক্ষেত্রে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে, তাদের সম্পৃক্ততাও খুঁজে দেখতে হবে।’ রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নৃশংসতাকে কানাডা ও জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূল’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে বব রায়ে তাঁর প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নির্যাতনকে ‘জাতিগত নির্মূল’ হিসেবে উল্লেখ করেননি। রোহিঙ্গাদের নিয়ে বব রায়ে তাঁর অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে আরও লিখেছেন,
‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণ আর নৃশংসতার পাশাপাশি নারীদের যৌন নিপীড়ন, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের হত্যার বীভৎস বর্ণনা শুনেছি।’ কক্সবাজারের অস্থায়ী শিবিরগুলোতে গাদাগাদি করে রোহিঙ্গাদের বসবাস নিয়ে নিজের অসন্তুষ্টির কথাও তিনি লুকাননি। এ নিয়ে তাঁর মত হচ্ছে, ভারী বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়া আর মহামারির আশঙ্কার কারণে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশে যেহেতু সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর আর মার্চ থেকে জুলাই—এ সময়কালে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ব্যাপক প্রাণহানি রোধে কানাডাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির জন্য আগামী জানুয়ারিতে আবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করবেন বব রায়ে। কারণ, এ ধরনের ‘চ্যালেঞ্জিং’ কাজে আরও অনেক লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সুপারিশ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.