দলকে রাহুমুক্ত করতে পারবেন রাহুল?



দলের দুঃসময়ে রাহুল গান্ধী যে গুরুদায়িত্বটি পেলেন, তা হলো সভাপতির পদ। আগুয়ান বছরটা পেরোলেই লোকসভা নির্বাচন। মেলা দায়িত্ব, বিস্তর কাজ। রাজনীতির ময়দানে কংগ্রেসের যে মন্দা, গুজরাটের নির্বাচনে তুলনামূলক ভালো অবস্থান শুভযোগের আভাস দিচ্ছে। অনেকেই বলছেন, রাহুলই পারবেন দলকে রাজনৈতিক মন্দার রাহু থেকে মুক্ত করতে। তবে মতভেদও আছে।
২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো আমেথির সাংসদ হয়ে রাজনীতিতে নাম লেখান রাহুল। ২০১৩ সালে কংগ্রেসের সহসভাপতি হন। তিনি যে দলের ভবিষ্যৎ কান্ডারি হবেন, তা আগেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। এক যুগের বেশি সময় ধরে কংগ্রেসের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা রাহুলের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নেতৃত্ব নিয়ে দলের ভেতর ও বাইরে প্রশ্ন রয়েছে। এই সময়ে রাহুল কোনো বিশেষ রাজনৈতিক ‘ম্যাজিক’ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ পরপর দুবার ক্ষমতায় থেকেছে। দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও লোকসভায় রাহুলের ভূমিকা ছিল অনেকটাই ‘নিষ্প্রভ’। দলের নেতা-কর্মী তো বটেই, রাজনীতি-সচেতন সাধারণ মানুষকেও হতাশ করেছেন তিনি। ‘লাজুক’ রাজনীতিবিদের তকমাও জুটেছে তাঁর। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়। তারা মাত্র ৪৪টি আসন পায়। এমন পরাজয়ের পর বিধ্বস্ত কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু বিগত বছরগুলোয় তাদের সেই চেষ্টার দৃশ্যমান ফল খুব কমই দেখা গেছে। কেন্দ্রের ক্ষমতা হারানোর পর নানা দিক থেকে কংগ্রেসের জন্য দুঃসংবাদ আসতে থাকে। পরবর্তী সময়ে বিধানসভা নির্বাচনে একের পর এক রাজ্য হারিয়েছে কংগ্রেস। ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র এখন গেরুয়াময়। ১৯ রাজ্যের ক্ষমতা বিজেপির দখলে। কংগ্রেসের ঝুলিতে আছে মাত্র চারটি রাজ্য। এই চার রাজ্যের মধ্যে তিনটিতে আগামী বছর নির্বাচন। সেই নির্বাচনে রাজ্য তিনটি দখলের আগাম হুংকার দিয়ে রেখেছে বিজেপি। সদ্য শেষ হওয়া গুজরাট নির্বাচনকে রাহুলের নেতৃত্বের জন্য একটা বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হলেও তাদের আসন কমে গেছে। আর পরাজয়ের পরও আসন বেড়েছে কংগ্রেসের। গুজরাট নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, নিজেদের দুর্গে বিজেপি একটা ধাক্কা খেয়েছে। ২২ বছর ধরে গুজরাটের ক্ষমতায় বিজেপি। খোদ নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটির ঘাঁটিতে বিজেপিকে ধাক্কা দিতে পারা কম কথা নয়। গুজরাট নির্বাচনের ফলাফলে বিজেপির কপালের ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গুজরাটে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাহুল। তিনি পুরো গুজরাট চষে বেড়িয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম করেছেন। নির্বাচনের ফলাফলই বলে দেয়, গুজরাটে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর কাজটা রাহুল ভালোভাবেই করতে পেরেছেন। ‘এ প্লাস’ না পেলেও তিনি সম্মানজনক একটা ‘নম্বর’ পেতেই পারেন। তা ছাড়া গুজরাট হতে পারে তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনীতির প্রেরণার উৎস।
মোদির ভারতে ধর্ম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয় পেতে বিজেপি যে হিন্দুত্ববাদকে পুঁজি করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গুজরাট নির্বাচনের ফল দেখে মোদি ইতিমধ্যে নড়েচড়ে বসেছেন। দলের সাংসদদের এখনই কাজে নেমে পড়তে বলেছেন তিনি। বোঝাই যাচ্ছে, সামনে কংগ্রেসকে আরও কোণঠাসা করতে মরিয়া থাকবে বিজেপি। রাহুলের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। রাজনীতিতে ‘অনাগ্রহী’ হিসেবে তাঁর দুর্নাম আছে। বিজেপি তো বলেই বেড়ায়, টুইটার ছাড়া অন্যত্র রাহুলের উপস্থিতি নেই। লোকসভা নির্বাচনের বেশি বাকি নেই। তাই ‘কোকুন’ ছেড়ে রাহুলের বেরিয়ে আসার এখনই সময়। অল্প সময়ের মধ্যে তাঁকে দল গোছাতে হবে। নেতা-কর্মীদের সংগঠিত ও উজ্জীবিত করে কংগ্রেসের পালে হাওয়া লাগাতে হবে। অনেক দিন পর কংগ্রেস একজন তরুণ নেতা পেয়েছে। রাহুল নিজের তারুণ্য ও নতুন চিন্তাধারার মাধ্যমে কংগ্রেসকে বদলে দিতে পারেন। একই সঙ্গে জয় করতে পারেন সাধারণ ভোটারদের মন। রাহুলের তারুণ্য এবং দলের প্রবীণ নেতাদের অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটানো গেলে কংগ্রেসের পক্ষে বিজেপিকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। রাহুল ব্যর্থ হলে কংগ্রেসের পরিণতি আরও করুণ হবে। কংগ্রেস দুর্বল হলে ভারতজুড়ে উড়বে হিন্দুত্ববাদের পতাকা। দল, দেশ ও জনগণের স্বার্থেই রাহুলকে সব রাহু কাটাতে হবে। কাজটি কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.