ফের রক্তাক্ত লন্ডন by সোলায়মান তুষার

সন্ত্রাসী হামলায় ফের রক্তাক্ত হলো বৃটেন। শনিবার রাতে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে দুটি হামলায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বৃটেনজুড়ে। এ হামলায় সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে অন্তত ৪৮ জনকে। পুলিশের গুলিতে সন্দেহভাজন তিন হামলাকারী মারা গেছে। পুলিশ এক হামলাকারীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। হামলার পর বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তৃতীয় দফা হামলার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বৃটেনের নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়েও। শনিবারের হামলার পর জাতীয় নির্বাচনের প্রচার বন্ধ রাখা হয়। তবে নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে জানিয়েছেন তেরেসা মে। এদিকে ঘটনার পর প্রবাসী ও মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা ধর্মীয় বিদ্বেষ বাড়ার আশঙ্কায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বৃটেনে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হামলার পর  নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে  ফেলা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও ভবনগুলো। শনিবার রাত থেকে  মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত আর্মড পুলিশ। নিরাপত্তা বাহিনীর সবচেয়ে চিন্তা আন্ডারগ্রাউন্ড বা পাতাল রেলপথ নিয়ে। শনিবারের হামলার পর স্ট্যাম্পফোর্ড, ওয়েস্টমিনস্টার, সেন্টেজেমস পার্ক, ভিক্টোরিয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায় এসব এলাকার পাতাল রেলস্টেশনগুলোতে আর্মড পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। এ সময়টাতে বৃটেনে ট?্যুরিস্টদের আনাগোনা থাকে সবচেয়ে বেশি।
অন্য বছরের তুলনায় এবারের সময়টা বৃটেনের জন্য নানা কারণেই ভিন্ন। একদিকে জাতীয় নির্বাচন। অন্যদিকে আইসিসি  চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খেলা চলছে বিভিন্ন মাঠে। যার কারণে লোকজনের ভিড় অনেক বেশি। রক্তক্ষয়ী এ হামলার প্রভাব পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচারণায়। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি, বিরোধী লেবার পার্টি, লিব ডেম পার্টি, গ্রিন পার্টি ও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিসহ (এসএনপি) বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল রোববার প্রচারণা স্থগিত করে। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে বলেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কোনোমতেই ব্যাঘাত ঘটতে দেয়া যাবে না সন্ত্রাসী হামলার কারণে। তিনি বলেন, ঠিক সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এনাফ ইজ এনাফ’।
গত তিন মাসে বৃটেনে তৃতীয়বারের মতো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলো। গত মার্চে ওয়েস্টমিনস্টার এলাকায় একটি ভ্যান উঠিয়ে দেয়া এবং ছুরি দিয়ে হামলায় ৫ জন নিহত  ও অনেক লোক আহত হন। এছাড়া, দুই সপ্তাহ আগে ম্যানচেস্টারে বোমা হামলায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত ও অনেক লোক আহত হন। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার  ক্রেসিডা ডিক বলেছেন, পুলিশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, ৯৯৯-এ কল করার পর ৮ মিনিটের মধ্য পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান  নেয় এবং ৩ সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা? করে। তিনি স্বীকার করেন মানুষের মধে?্য আতঙ্ক দেখা দিয়েছে এটা সত্য। তবে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
শনিবারের এই হামলার সঙ্গে প্রায় দেড় মাস আগে ওয়েস্টমিনস্টারে চালানো হামলার সাদৃশ্য রয়েছে। ২২শে মার্চ খালিদ মাসুদ (৫২) নামে এক ব্যক্তি নিজের গাড়ি পথচারীদের ওপর চালিয়ে ৪ জনকে হত্যা করে। এরপর বৃটিশ পার্লামেন্টের কাছে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। খালিদ মাসুদও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। সেই হামলায় আহত হয় ৫০ জনের মতো।
বৃটেনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বাকি ১ সপ্তাহেরও কম। এর মধ্যে এই হামলাসমূহ জনমতে প্রভাব ফেলতে পারে। এই নির্বাচনের জয়ী পক্ষই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের প্রস্থান সংক্রান্ত আলোচনায় নেতৃত্ব দেবে।
এদিকে হামলার পর লন্ডনে মানুষ ক্ষুব্ধ ও স্তম্ভিত। শহরের কেন্দ্রস্থলে রাতভর কেবল সাইরেনের আওয়াজ শোনা গেছে। টেমস সেতুর পাশ ঘেঁষে এই হামলাস্থল থেকে ভক্সহল নামে আরেক স্থানে তৃতীয় ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছিল, দু’টি ঘটনা সমন্বিত। কিন্তু পুলিশ পরে জানিয়েছে, একটির সঙ্গে অপরটির কোনো সমপর্ক নেই।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, এটি নিরীহ লন্ডনবাসীর ওপর উদ্দেশ্যমূলক ও কাপুরুষোচিত হামলা। হামলার নিন্দা জানিয়েছেন প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র কার্যালয় থেকে বলা হয়, পরেরদিন (স্থানীয় সময় রোববার) প্রধানমন্ত্রী কোবরা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এই হামলায় অন্তত দুইজন ফরাসি ও অস্ট্রেলীয় নাগরিক হতাহত হয়েছেন বলে দেশ দু’টি জানিয়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপকে হামলা সমপর্কে অবহিত করেছেন তার জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টারা। তিনি প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র সঙ্গে কথা বলেছেন। ট্রাম্প বৃটেনের উদ্দেশ্যে টুইট করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আপনাদের (বৃটেন) সঙ্গে আছে। আমাদেরকে আরো স্মার্ট হতে হবে। আরো নজরদারি বাড়াতে হবে। আরো কঠোর হতে হবে। পরে তিনি আরেক টুইটে বলেছেন, নিরাপত্তায় বাড়তি মাত্রা যুক্ত করতে আমাদের প্রয়োজন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লন্ডন হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছে। ওদিকে কোনো কোনো দেশের তরফ থেকে লন্ডনে ভ্রমণ সতর্কতা দেয়া হয়েছে। নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করা হয়েছে এর মাধ্যমে। বলা হয়েছে বিভিন্ন স্টোর, মার্কেট, কনসার্ট ভেন্যু ও রাজনৈতিক র‌্যালিতে চোখ খোলা রেখে নজরদারি করে চলতে। এমন সতর্কতা দিয়েছে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। টুইট করে সমবেদনা জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন। তিনি বলেছেন, নতুন এই ট্র্যাজেডির প্রেক্ষিতে ফ্রান্স আগের চেয়ে অনেক বেশি পাশে আছে বৃটেনের। হতাহত ও তাদের নিকটজনদের প্রতি আমার সমবেদনা। নিন্দা জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি টুইট করে জানিয়েছেন, লন্ডন পরিস্থিতি মনিটরিং করছে কানাডা। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ এ হামলাকে বেদনাদায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এ হামলার পর বৃটিশ সরকারের সমর্থনে আমরা প্রস্তুত আছি। হতাহত ও তাদের নিকটজনদের প্রতি আমাদের সমবেদনা। লন্ডনের সর্বশেষ এই হামলাকে ভয়াবহ অভিহিত করেছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের নেতা জ্যাঁ ক্লাউড জাঙ্কার।
এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের কোনো উদ্দেশ্য জানা যায়নি। তবে টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা একটি পোস্টার শেয়ার করেছে যেখানে সমর্থকদের প্রতি পবিত্র রমজান মাসে বন্দুক, ছুরি ও ট্রাক ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করতে বলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা হামলার বর্ণনা দিয়েছেন। ট্রাক নিয়ে যখন হামলা চালানো হচ্ছিল, বিবিসি’র প্রতিবেদক হলি জোনস লন্ডন ব্রিজে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ঘণ্টায় প্রায় ৫০ মাইল বেগে ট্রাকটি চালানো হচ্ছিল। ফুটপাথে এই ট্রাক দিয়ে মানুষকে পিষে দেয়ার চেষ্টা চালায় হামলাকারী। এতে অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। জোনস বলেন, ‘সে হঠাৎ ডানে মোড় নেয় এবং প্রায় ৫-৬ জনকে আঘাত করে। আমার সামনে দুইজনকে ও এরপর তিনজনকে পেছন দিয়ে আঘাত করে।’ অ্যান্ড্রু নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তিনি ওই এলাকার একটি পানশালায় ছিলেন। হঠাৎ শব্দ শুনে উঠে তাকিয়ে দেখেন একটি ট্রাক সড়কের রেলিং-এ ধাক্কা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘১০ সেকেন্ড পরে দেখি বড় ছুরি নিয়ে এক লোক বের হয়েছে।’ অ্যান্ড্রু ওই লোককে একটি বেড়া পেরিয়ে ফুটপাথে ঢুকে যেতে দেখেছেন। তার আগে ঘটনাস্থলে এক লোকের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
বোরো বাজারে এক লোককে ছুরিকাঘাত করতে দেখেছেন বেন ও তার স্ত্রী নাতালি। তিনি বলেন, ‘আমি লাল রঙের জামা পরিহিত এক লোককে বেশ লম্বা একটি ছুরি হাতে এক লোককে কোপাতে দেখলাম। প্রায় ১০ ইঞ্চি হবে ওই ছুরিটি। অনেকটা শান্তভাবেই সে ওই লোকটাকে প্রায় ৩ বার কোপায়। আর লোকটা ধপাস করে মাটিতে পড়ে যায়।’ তিনি বলেন, এরপরই কেউ একজন ছুরিধারীর দিকে একটি টেবিল ও বোতল ছুড়ে মারে। এরপরই তিনটি গুলির আওয়াজ শুনতে পাই আর আমরা দৌড়ে চলে যাই।
জেরাল্ড নামে এক লোক বিবিসিকে বলেছেন, তিনি এক হামলাকারীকে দেখেছেন যতজনকে সম্ভব ছুরিকাঘাত করছে। আর চিৎকার করে বলছে ‘দিস ইজ ফর আল্লাহ’ (এটা আল্লাহর জন্য)। জেরাল্ড ছুরি হাতে তিনজনকে দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা এক মেয়েকেও কোপাচ্ছিল। তাই আমি তাদের অনুসরণ করি বোরো মার্কেটের দিকে। তারা পানশালা ও বারে দৌড়ে ঢুকছিল আর সবাইকে ছুরিকাঘাত করছিল। তারা দৌড়াচ্ছিল আর বলছিল এটা আল্লাহর জন্য। এরপর আবার দৌড়ে আরেকজনকে কোপায়। ওই মেয়েকে তারা প্রায় ১০-১৫ বার আঘাত করেছে।’
লর্না মুরে (৪৪) নামে একজন বলেন, তিনি লন্ডন ব্রিজ দিয়ে যেতে চাইছিলেন, কিন্তু ট্রাফিক তাকে আটকে দেন। এ সময় কিছু লোক তার গাড়ির দিকে দৌড়ে আসে। তিনি বলেন, আমরা বুঝে যাই এটা হামলা। এরপর এক তরুণ জুটি আমাদের দরজা খোলার জন্য বলে। তারা গাড়িতে ঢুকতে চায় নিরাপত্তার জন্য। আমরা তাদেরকে ঢুকতে দেই, কিন্তু আর কাউকে ঢুকাতে পারিনি, কারণ পেছনে আমাদের নিজেদের বাচ্চা ছিল।’ আমি যখন গাড়ি থেকে বের হই, সবকিছু কেমন যেন অসপষ্ট। আমি এক নারীকে দেখি, তার চোখে-মুখে রক্ত।
স্থানীয় অফিস ভবনের নিরাপত্তারক্ষী টিম হজ (৩৭) বলেন, ঘটনার সময় বহু মানুষ চিৎকার করতে করতে দৌড়াচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘খুব বেশি আতঙ্ক ছিল। আর অনেকে আবার মাতাল ছিলো। ফলে সব কিছু বিচ্ছিরি অবস্থা ধারণ করে।’ অ্যালেক্স শেলাম নামে একজন লন্ডন ব্রিজের নিচে অবস্থিত মাদলার্ক পানশালায় ছিলেন। তিনি বলেন, এক আহত নারী পানশালায় প্রবেশ করে। তার ঘাড় থেকে ভয়াবহভাবে রক্ত বের হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, তার গলা কেটে দেয়া হয়েছে।
হুমকির লেভেল নামিয়ে আনা নিয়ে প্রশ্ন: ম্যানচেস্টারে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলার পর বৃটেনজুড়ে জারি করা হয়েছিল সর্বোচ্চ সতর্কতা। কয়েকদিন আগে সেই সতর্কতার লেভেল বা মাত্রা কমিয়ে আনা হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। স্কাই নিউজের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রতিবেদক অ্যালিস্টার বাঙ্কাল এ প্রশ্ন তুলে এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ম্যানচেস্টার হামলার পর জাতীয় পর্যায়ে সন্ত্রাসী হামলার লেভেল কমিয়ে আনা হয়। ওই হামলার এক সপ্তাহেরও কম সময়ে এবার লন্ডনে হামলা হলো। এ বিষয়ে চোখ এড়িয়ে যাওয়ার নয়। তিনি লিখেছেন, কেন এমনটা হচ্ছে তা যদি আমি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি তাহলে এরকম শোনাবে। বৃটেনে কার্যত চার রকম সন্ত্রাসী হুমকির লেভেল বা মাত্রা আছে। এর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের হুমকি। উত্তর আয়ারল্যান্ড সংক্রান্ত সন্ত্রাসী হুমকি। একই রকম হুমকি গ্রেট বৃটেন থেকে। এই তিনটি হুমকির কথা প্রকাশ্যে বলা হয়। কিন্তু চতুর্থ মাত্রার হুমকির লেভেল বা মাত্রাটি গোপনই থেকে গেছে। এগুলো হলো বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রেল নেটওয়ার্কের মতো জাতীয় অবকাঠামোর ক্ষেত্রে হুমকি। ২০১৬ সালের অক্টোবরে লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে হুমকির মাত্রা বাড়িয়ে ইংরেজিতে ‘সেভার’ বা মারাত্মক পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছিল। ওই সময় গ্রিনউইটে ও-টু এরিনার কাছে টিউব ট্রেনে পাওয়া গিয়েছিল সন্দেহজনক ডিভাইস। একটি ই-মেইল থেকে এ খবর ভুল করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের হুমকির লেভেল নির্ধারণ করে জয়েন্ট টেরোরিজম এনালাইসিস সেন্টার (জেটিএসি)। তারা গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৫ এর সঙ্গে কাজ করে এবং তারা সরকার থেকে স্বাধীন। নিত্যদিন হুমকির লেভেল পর্যালোচনা করে জেটিএসি। বিদ্যমান গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা বা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তারা সন্ত্রাসী হামলার হুমকির লেভেল উন্নীত বা অবনমন করে। এটা রাজনৈতিক ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। ২০১৪ সালের ২৯শে আগস্ট থেকে বৃটেনজুড়ে হুমকির লেভেল রয়েছে হয়তো ‘সেভার’ অথবা ‘ক্রিটিক্যাল’ পর্যায়ে।
অ্যালিস্টার বাঙ্কাল আরো লিখেছেন, এখন এই পর্যায়ে ম্যানচেস্টার হামলার সঙ্গে লন্ডনের এই হামলার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা আমরা তার কিছুই জানি না। তবে হামলাকারীর সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা এবং যাকে সামনে পাবে তাকেই হত্যা করা। এক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই হামলাকারীদের আদর্শ একই, অভিন্ন। উদ্দেশ্য একই হলেও এ হামলার ধরন আলাদা। ম্যানচেস্টারে হামলা চালিয়েছে আত্মঘাতী বোমারু। লন্ডনে হামলা চালিয়েছে তিন সশস্ত্র ব্যক্তি। তাদের হাতে ছিল ছুরি। বুকে বাঁধা ছিল ভুয়া বিস্ফোরক। কিন্তু এখন এই পর্যায়ে আমরা যা জানতে পারছি তাতে এ দুটি হামলাকে আলাদাভাবেই আমাদের দেখতে হবে। ম্যানচেস্টার হামলার পর হুমকির লেভেল উন্নীত করা হয়েছিল। তখন নিরাপত্তা সার্ভিসগুলো অনেক অজানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল। অ্যালিস্টার বাঙ্কাল লিখেছেন, আমার মতে, হুমকির লেভেল কমিয়ে আনা অবশ্যই ঠিক হয় নি। তাই হুমকির লেভেল ‘ক্রিটিক্যাল’-এ উন্নীত করা উচিত। এ সময় তাই হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.