অনেক সহ্য করেছি, আর না: তেরেসা মে

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে বলেছেন, উগ্রপন্থাকে অনেক সহ্য করেছি, আর না। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সবাইকে একত্রিত হবার এখনই সময়। খবর বিবিসির। লন্ডন ব্রিজ ও বারো মার্কেটে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তেরেসা মে রোববার একথা বলেছেন। লন্ডন ব্রিজ ও বারো মার্কেটে শনিবার রাতে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ জনে। আহত অন্তত ৪৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওই হামলার পর রোববার ডাউনিং স্ট্রিটে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী টেরেজা মে বলেন, ব্রিটেনে গত তিন মাসেরও কম সময়ে এটি তৃতীয় সন্ত্রাসী হামলা। প্রথম হামলাটি হয় মার্চ মাসে ওয়েস্ট মিনস্টার ব্রিজে। দুই সপ্তাহ আগে ম্যানচেস্টার অ্যারেনায় আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। আর গত শনিবার লন্ডনের কেন্দ্রস্থলেই হলো আরো একটি হামলা। তিনি বলেন, এ হামলাগুলোতে সন্ত্রাসীদের যে পরিকল্পনা তা দেখে মনে হচ্ছে এসব হামলা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলার নতুন নতুন ধরণ দেখছি আমরা। সন্ত্রাসীরা যেভাবে কাজ করছে যেভাবে হামলা চালাচ্ছে তা ব্রিটেন যথেষ্ট সহ্য করেছে, আর নয়। তিনি  সন্ত্রাসী হামলা নিয়ন্ত্রণে নতুন পরিকল্পনার কথাও জানান। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিটেনের মূল্যবোধ বজায় রেখেই চলতে হবে কিন্তু যখন চরমপন্থা, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের বিষয় আসবে তখন কিছু বিষয় পরিবর্তনের কথা ভাবতে হবে। নির্বাচনের চারদিন আগে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে হামলার ঘটনায় রোববার নির্বাচনী প্রচারণাও বন্ধ রেখেছে রাজনৈতিক দলগুলো। সোমবার থেকে আবারও পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণা চলবে এবং নির্ধারিত দিনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তেরেসা মে। তিনি ইসলামী চরমপন্থা প্রতিরোধে ৪টি প্রস্তাবনার কথা জানিয়ে বলেন, প্রথমত সাম্প্রতিক হামলাগুলো কোনো একটি নেটওয়ার্কে সম্পৃক্ত নয়, তারা একটি সাধারণ ধারণার অনুসারী। এককভাবে ধ্বংসাত্বক ইসলামী চরমপন্থাকে লালন করে তারা। তারা বলতে চায় স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পাশ্চাত্য ধ্যানধারণা ইসলামের ধ্যানধারণার পরিপন্থী। এ ধারণা প্রতিরোধ করাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সেটা শুধু সামরিক শাসন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তাদের মানসিকতা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে সম্ভব বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। দ্বিতীয় প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি বলেন, উগ্রপন্থার এসব ধ্যানধারণা যেন আরও ছড়িয়ে না যায়, তারা যেন কোথাও আশ্রয় না পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
ইন্টারনেটনির্ভর সেবাগুলো নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে একত্রে কাজ করার পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,ইন্টারনেটে তারা উগ্রপন্থী কর্মকান্ডের পরিকল্পনা করে। এগুলো রুখতে আন্তর্জাতিক চুক্তি করতে হবে যেখান থেকে এসব নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তৃতীয়ত, এসব চরপন্থীদের শুধুমাত্র অনলাইনে বাধা দিলেই হবে না। বাস্তব জীবনেও এসব চরমপন্থীদের নিরাপদ স্থান রয়েছে সেগুলো ধ্বংস করতে হবে। সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের অবস্থান নির্মূলে সামরিক অভিযান হচ্ছে। সে ধরনের অভিযান এখানেও হতে হবে। এছাড়া চতুর্থ পরিকল্পনায় তেরেসা মে কাউন্টার টেরোরিজম স্ট্র্যাটেজির কথা উল্লেখ করেন। তাঁর মতে এখনকার সন্ত্রাসী হামলাগুলো আরও বেশি জটিল হয়ে উঠছে। হামলা বা হুমকিগুলোর বিষয়ে ব্রিটেনের 'স্ট্র্যাটেজি' নিয়ে পুনরায় ভাবার সময় এসেছে বলছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি বিবেচনায় ব্রিটেনে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে। তবে ম্যানচেস্টার অ্যারেনায় বোমা হামলার পর যে মাত্রায় সতর্কতা জারি ছিল এবার সেই মাত্রায় জারি করা হয়নি। এদিকে, যুক্তরাজ্যের লন্ডন ব্রিজ ও বারা এলাকায় শনিবার রাতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হামলাকারীদের মধ্যে একজনের পূর্ব লন্ডনের ফ্ল্যাট থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ম্যানচেস্টারে হামলার দুই সপ্তাহ পরই লন্ডনে এ হামলা হলো। ম্যানচেস্টারে আত্মঘাতী হামলায় ২২ জন ও এর আগে গত মার্চেই লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে পথচারীদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় পাঁচজন নিহত হন। মাত্র ১২ দিনের মাথায় শনিবার রাতে লন্ডনের অন্যতম বিনোদন আকর্ষণ লন্ডন ব্রিজে ফুটপাতের পথচারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। এরপর কিছু দূর এগিয়ে বারা মার্কেট এলাকায় চালায় এলোপাতাড়ি ছুরি হামলা। এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে সাতজনে পৌঁছেছে। পুলিশের গুলিতে সন্দেহভাজন তিন হামলাকারীও নিহত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা।

No comments

Powered by Blogger.