আওয়ামী লীগ নয় বিএনপির পায়ের নিচেই মাটি নেই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছে। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য কথা বলতেই এ দলের জন্ম হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপি দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে। সংবিধান ক্ষতবিক্ষত করাসহ রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আর এ দলটির জন্ম ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট থেকে। অবৈধভাবে জন্ম নেয়া এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দলের জন্ম, সেই দলের (বিএনপি) পায়ের নিচে মাটি থাকে না, সেটিই হল বাস্তবতা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘আওয়ামী লীগের পায়ের নিচে নাকি মাটি নেই’ বক্তব্যের জবাব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৯ সালে এদেশের মাটি ও মানুষের মধ্য দিয়ে, জনগণের অধিকার আদায়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের জন্ম। আওয়ামী লীগের শিকড় এদেশের মাটির অনেক গভীরে। প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট আমরা দিয়েছি।
এ বাজেট নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। বাজেটে কোনো সমস্যা থাকলে সংসদে আলোচনা হবে। আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা হবে। জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, যারা আন্দোলনের নামে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যার হুকুম দিয়েছে- বাংলার মাটিতেই তাদের বিচার করা হবে। কেউ-ই রেহাই পাবে না। বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক ও ডিইউজে সভাপতি শাবান মাহমুদ। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান মোনাজাত পরিচালনা করেন। নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা সংক্রান্ত সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তার ইতিবাচক অবস্থান তুলে ধরে বলেন, আমরা এরই মধ্যে নবম ওয়েজবোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কিন্তু মালিক পক্ষ থেকে তাদের প্রতিনিধি না দেয়ায় প্রক্রিয়া থেমে আছে। এখানে সরকারের কোনো দোষ নেই। এখানে অনেক গণমাধ্যম মালিক রয়েছেন। আপনাদের বলব, আপনারা প্রতিনিধি দিন। প্রতিনিধি পেলেই আমরা ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করব। আর ইলেকট্রুনিক গণমাধ্যমকেও এ নবম ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতাই শুধু নয়, মাতৃভাষা বাংলার অধিকার এনে দিয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আওয়ামী লীগ কোনো অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে জন্ম রাজনৈতিক দল নয়। তখন অন্য কোনো রাজনৈতিক দল এদেশে ছিল না। বিএনপির জন্মই অবৈধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে প্রথমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক দলই হচ্ছে বিএনপি। এদেশের মাটি ও মানুষের মধ্যে থেকে এ দলটির জন্ম হয়নি। নীতিহীন সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নীতিহীন সাংবাদিকতা কিংবা হলুদ সাংবাদিকতা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ সময় বঙ্গবন্ধুর একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, নীতিহীন রাজনীতি দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পারে না। তেমনি নীতিহীন সাংবাদিকতা দেশের কোনো কল্যাণ করতে পারে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সাংবাদিক হত্যাসহ অত্যাচার-নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় সাংবাদিকরা সত্যিই এক বিভীষিকাময় অবস্থা পার করেছেন। শত শত সাংবাদিক অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অসংখ্য সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও ওই সময় একটি সাংবাদিক হত্যার বিচার করা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার করেছি ও করছি, তেমনি প্রতিটি সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছি। অন্যায় করে কেউ পার পাবে না। আত্মবিশ্বাস নেই বলেই বিএনপি নেত্রী মামলা মোকাবেলা করতে ভয় পান উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন।
সেই মামলা মোকাবেলা করতে উনি ভয় পান। মামলাকে বিলম্বিত করতে ১৪৬ বার রিটসহ নানা প্রকারে সময় চেয়েছেন। তার কিসের এত ভয়? সরকারপ্রধান এ সময় আরও বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারার অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের বিচার হবে, হুকুমদাতাসহ সবার বিচার হবে। অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সিনিয়র সাংবাদিক রাহাত খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, সিনিয়র সহসভাপতি যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কামরুল আহসান খান, সানজিদা খানম এমপি, ওয়াসার পরিচালক হাসিবুর রহমান মানিক প্রমুখ। বিকাল ৬টার বেশ কিছু সময় আগেই ইফতার মাহফিলে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পুরো প্যান্ডেল ঘুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.