শূন্য থেকে কোটিপতি

মেধা, যোগ্যতা ও অধ্যবসায়ের ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন এমন নজির স্থাপনকারীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। যারা নজির স্থাপন করেছেন তারা সবার কাছে অনুকরণীয়, অনুসরণীয়। তাদেরই একজন কুমিল্লার ছাতিয়ানি গ্রামের অলি আহম্মদ মজুমদার। যিনি শূন্য থেকে শুরু করে আজ কোটিপতি। স্থানীয় তরুণদের আদর্শ অলি আহম্মদ এখনো ছুটে চলেন ভালোর সন্ধানে। স্বপ্ন দেখেন ব্যবসা ছড়িয়ে দেবেন সারা দেশে। কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। তিনি ব্যবসার শুরুর কথা, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন যুগান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি আবদুল জলিল রিপন
প্রশ্ন : ব্যবসা শুরুর কথা জানতে চাই। কত টাকা মূলধন দিয়ে শুরু। এখন মাসিক টার্নওভার কত?
অলি আহম্মদ : শুরুটা ১৯৭৮ সালে। ১৩ বছর বয়স থেকেই টুকিটাকি ব্যবসা শুরু করি। ১৯৮০ সালে কৃষি ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ, এলাকার মানুষের থেকে ধার করে ও মহাজনের কাছ থেকে বাকি এনে মুন্সিরহাট ইউনিয়নের খিরনশাল বাজারে ব্যবসা শুরু করি। শুরুর মূলধন ছিল ৫০ হাজার টাকার কাছাকাছি। আস্তে আস্তে ব্যবসার উন্নতি হওয়ায় ১৯৮৭ সালে খিরনশালেই সার ও কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। পরে ব্যবসা বড় হলে ১৯৯০ সালে আমার বড় মেয়ে ফাতেমার নামে ফাতেমা ট্রেডার্স নাম দিয়ে মুন্সিরহাট বাজারে সার, বীজ ও কীটনাশকের ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে সার, সিমেন্ট, ঠিকাদারি, ব্রিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি। মাসিক টার্নওভার ১২ কোটি টাকা।
প্রশ্ন : আপনার সফলতার গোপন সূত্র কী?
অলি আহম্মদ : সততার সঙ্গে অধ্যবসায় ও পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। সেটা অনেকের ক্ষেত্রে একটু দেরি করে আসে। কিন্তু মনোবল ভাঙলে চলবে না। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ন্যায় ও সঠিক পথে জীবনকে পরিচালিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে সফলতার শর্টকাট রাস্তা নেই। আমার সফলতার পেছনে কিছু ভালো ও পরোপকারী মানুষের সহযোগিতাও কাজ করেছে। শুরুতে নানান জন নানান কথা বলেছে। সেদিকে কান না দিয়ে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যেতে হবে। আমি যে ব্যবসা ধরেছি, সে ব্যবসাতেই থাকার চেষ্টা করেছি। এর মাঝে কত ধরনের লোভ-লালসা দেখিয়েছে এটা না ওটা ভালো হবে, বেশি লাভ হবে, কিন্তু আমি নীতিতে অটল ছিলাম বলেই আজকে এতটুকুতে আসতে পেরেছি। ইতিমধ্যে রুবি সিমেন্টের পক্ষ থেকে ইউরোপের ৭টি দেশ ঘুরেছি। বিএসআরএমের পক্ষ থেকে মিসর, মালয়েশিয়া ও চায়না ভ্রমণ করেছি। তার মধ্যে আমার পরিবারও কয়েকটি রাষ্ট্রে গিয়েছে। ৫ বার বিএসআরএমের সেরা ডিস্ট্রিবিউটর নির্বাচিত হয়েছি।
প্রশ্ন : প্রথম ব্যাংক ঋণের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
অলি আহম্মদ : প্রথম ব্যাংক ঋণ নেই কৃষি ব্যাংক থেকে। অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর ছিল না। বেশ হয়রানি হতে হয়েছিল। আগে ১০ শতাংশ টাকা জমা দিতে হয়েছে। পরে ৯ হাজার টাকা ঋণ পেয়েছি। আবার যে টাকা পেয়েছিলাম সেখান থেকে কর্মকর্তাদের খুশি করতে কিছু দিতে হয়েছে। পরে বেসরকারি ব্যাংকগুলো আসার পর তারা ডেকে ডেকে ঋণ দিয়েছে। এখন আর ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সমস্যা হয় না।
প্রশ্ন : বর্তমান সময়ে একজন উদ্যোক্তার কী কী বাধা আছে?
অলি আহম্মদ : ব্যবসার এ পর্যায়ে ভ্যাট-ট্যাক্সকে ঝামেলা মনে হয়। এত কঠিন ও জটিল সব আইন বুঝতে সমস্যা হয়। যদিও ২০১৫ সালে কুমিল্লা অঞ্চলের সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, যারা সরকারকে ট্যাক্স দিতে চায় তাদেরই হয়রানি করা হয়। আর যারা দেয় না তাদের কাছে জিজ্ঞাসাও করা হয় না কেন ট্যাক্স দেয় না। এটা মফস্বল এলাকার সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য বাধা বলে মনে হয়।
প্রশ্ন : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
অলি আহম্মদ : বর্তমানে যেসব ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি সেগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে চাই। নতুন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা আছে। সঠিক ব্যবসার জন্য অপেক্ষা করছি। আরেকটা স্বপ্ন আছে, তা হল নিজের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল আরও মজবুত করতে চাই।
প্রশ্ন : তরুণ উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সফল হতে কোন পরামর্শ দেবেন কিনা?
অলি আহম্মদ : সঠিক কর্মপরিকল্পনা, সৎ উদ্দেশ্য, কঠোর পরিশ্রম, মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার, কথা কাজের মিল, সঠিকভাবে লেনদেন, আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যয় করতে পারলেই একজন তরুণ উদ্যোক্তা সফলতা অর্জন করতে পারবে বলে আমি মনে করি। এর ব্যত্যয় হলে সফল হওয়া কষ্টকর হবে।

No comments

Powered by Blogger.