যশোরে রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল থেকে ৩৭ নারী আটক

যশোরে পরহিতৈষী অসুস্থ নারীর রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল থেকে ৩৭ নারীকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৭০-৮০ বছরের তিন বৃদ্ধাও রয়েছেন। পুলিশের অভিযোগ, তারা জামায়াতের নারী কর্মী। সেখানে জড়ো হয়ে গোপন মিটিং করছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে যশোর সদর উপজেলার বিনিময়পাড়ায়। রোববার সেখান থেকে ধরে আনা বয়োঃজ্যেষ্ঠ নারীদের অনেকেই প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গ্রামবাসী বলছেন, এলাকার মুসলমান নারী-শিশুদের কেউ মারা গেলে লাশের গোসল করানোর কাজ করেন আমেনা নামে ওই বর্ষিয়ান নারী। সম্প্রতি তিনি নিজেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার সুস্থতার জন্য রোববার দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয় নারীরা। সেখানে জড়ো হয়েছিলেন ৭০-৮০ বছরের কয়েক বৃদ্ধাসহ প্রায় অর্ধশত নারী। কিন্তু ওই দোয়ার অনুষ্ঠানে আচমকা হানা দেয় পুলিশ। প্রায় ৮০ বছর বয়সী তিন বৃদ্ধাসহ ৩৭ জন নারীকে আটক করে তারা। তাদের অনেকের কোলে রয়েছে শিশুসন্তানও। কেউ কেউ অন্তঃসত্ত্বা। প্রচ- গরমে তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই ফজর আলী রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফোর্স নিয়ে বিনিময়পাড়ার জনৈক লুৎফর রহমান মনির বাড়িতে হানা দেন। ওই বাড়িতে তখন দোয়া মাহফিলের জন্য জড়ো হয়েছিলেন প্রায় অর্ধশত নারী। পুলিশ তাদের ঘিরে রেখে কোতয়ালী থানায় খবর দেয়। এরপর থানা পুলিশের এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। এরপর বসুন্দিয়া ক্যাম্প আর থানা পুলিশের সদস্যরা বাড়িটিতে অবস্থানরত বৃদ্ধাসহ ৩৭ নারীকে আটক করে বিকেল দিকে থানায় আনে। আটক নারীদের কয়েক স্বজনের ভাষ্য, যে নারী সারা জীবন লাশ গোসল করানোর কাজ করলেন, তিনি এখন অসুস্থ। এলাকার নারীদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে তার সুস্থতার জন্য দোয়া করা। সে আয়োজনই হয়েছিল বাড়িটিতে। কিন্তু পুলিশ অসুস্থ আমেনার জন্য দোয়া পড়তে দেয়নি নারীদের। জড়ো হওয়া নারীদের ‘জামায়াত’ আখ্যা দিয়ে খাঁচায় পুরেছে; যাদের মধ্যে অশীতিপর বৃদ্ধা, অন্তঃসত্ত্বা নারীও রয়েছেন। তারা এই ঘটনাকে ‘পুলিশের অতিবাড়াবাড়ি’ বলে মত দেন। বলেন, ‘দোয়া মাহফিলে বিভিন্ন মত-পথের মানুষ আসতেই পারেন। কিন্তু দোয়া বানচাল করে তাদের ধরে গারদে পুরতে হবে? মানুষ কি ধর্ম-কর্ম করতেও পারবে না?,’ প্রশ্ন করেন ধরা পড়া এক নারীর স্বজন। বসুন্দিয়া ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই ফজর আলীর দাবি, আটক নারীরা জামায়াত করেন। তারা লুৎফর রহমান মনির বাড়িতে গোপন বৈঠক করছিলেন। সেখান থেকেই তাদের আটক করা হয়েছে। কোতোয়ালী থানার ওসি একেএম আজমল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামায়াতের নারী কর্মীদের গোপন বৈঠক চলছে বলে খবর পেয়ে ওই নারীদের আটক করা হয়েছে। এখন বিস্তারিত বলা সম্ভব হচ্ছে না। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

No comments

Powered by Blogger.