সিরিয়ায় মার্কিন হামলা: রুশ-মার্কিন সম্পর্ক কোন পথে

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে রুশ সামরিক বাহিনী ময়দানে থাকার পরও সিরীয় বিমানঘাঁটিতে ওয়াশিংটনের টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের সিরিজ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সিরিয়ার ইদলিবে রাসায়নিক হামলার জবাবে হোমস প্রদেশের শায়রাত বিমানঘাঁটিতে এ হামলার পর আগামী সপ্তাহে রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। এই প্রথম দেশটিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। অনেকেই মনে করেন ওই রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে আসাদ বাহিনী। টিলারসন এমন এক সময়ে রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন, যখন এ মার্কিন হামলার পাশাপাশি রুশ-সম্পৃক্ত বিভিন্ন ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে চলছে তদন্ত। অনেকেই মনে করছেন, স্নায়ুযুদ্ধকালীন এই শত্রুকে এবার বন্ধুত্বের বাঁধনে জড়াতে চান ট্রাম্প। তবে সিরিয়ায় মার্কিন হামলা ও রুশ সংযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত প্রক্রিয়া টিলারসনের এ সফরে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। মস্কো থেকে আল জাজিরা প্রতিনিধি রোরি চালান্দস জানান, সিরিয়াতে ওয়াশিংটন এই একবার হামলা চালিয়ে অন্যদের বার্তা দিতে চান, নাকি সামনে আরও হামলা চালানো হবে- তার ওপর নির্ভর করছে আগামীদিনে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ। চালান্দস বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুর দিকে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক ছিল তুঙ্গে। তবে আমার মনে হয়, মস্কো কর্তৃপক্ষ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে কতটা ইতিবাচক হওয়া যায়- সে সম্পর্কে পুনর্মূল্যায়ন করছে। যেভাবেই হোক তাদের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠছে এবং এ হামলা দেশ দুটির সম্পর্কে কোনো সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না।’ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক ও রাশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক ম্যাথিউ শিমিদ মনে করেন, আসাদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা অব্যাহত রাখলে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়াতে পদক্ষেপ নেবে। তিনি জানান, ওয়াশিংটন যদি মানবচালিত বিমান হামলার সিদ্ধান্ত নিত, তবে রাশিয়া তাদের রাডারে সেগুলোর উপস্থিতি শনাক্ত করে বলতে পারত, ‘আমরা যদি তোমাদের বিমান ভূপাতিত করতে চাইতাম, সেটা করতে পারতাম।’ এখন পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বৃদ্ধি এবং হুমকি দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
এদিকে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেস’র জ্যেষ্ঠ গবেষক লরেন্স কর্ব মনে করেন, এ ঘটনার পর আসাদকে নিয়ে গোপনে গোপনে মর্মাহত থাকবে রাশিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আসাদকে পিছু হটানোর জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো সুযোগ দিতে রাজি হবে না।’ এই হামলায় সিরিয়া ইস্যুতে জেনেভা শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন করে গুরুত্ব বাড়বে বলেও মনে করেন এ বিশ্লেষক। কর্ব বলেন, ‘রাশিয়ার জনগণ বলতে শুরু করবে, আমরা এটাকে আর বাড়তে দিতে চাই না। তাই মনে হচ্ছে, একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হতে পারে। এর মধ্যে বিভিন্ন পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং দেশটিকে ভাগ করবে। এরপর ২০২০ সালের মধ্যে আসাদের সম্ভাব্য পদত্যাগের ব্যাপারে কথা বলবে।’ মার্কিন হামলার পরপরই টিলারসন তার এক বক্তব্যে বলেন, সিরিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্রমুক্ত করতে ২০১৩ সালের চুক্তি পালনে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়া। তিনি আরও বলেন, ‘তাই হয় রাশিয়াকে কুকর্মের সহযোগী হতে হবে, অথবা তার সামর্থের ব্যাপারে নিজের অদক্ষতা স্বীকার করতে হবে।’ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে ট্রাম্পের নানা কথা শোনা গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই এ ব্যাপারে সাড়া পাওয়া যায়নি। রাশিয়াকে সামান্য ছাড় দিলেও তাকে দেশটির প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের বাধ্যবাধকতা হিসেবে দেখবে বিরোধী দল। টিলারসনকে বন্ধুত্বের স্বীকৃতি হিসেবে একবার ‘অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ’ পদকে ভূষিত করেছিলেন পুতিন। এ কারণে মন্ত্রী হিসেবে টিলারসনের শুনানির সময় রাশিয়ার সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক নিয়ে কথা উঠেছিল। শুরু থেকে মস্কোর ব্যাপারে অনেকটা নমনীয়ও ছিলেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.