রোহিঙ্গা নিধন অস্বীকার সুচির

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের কথা অস্বীকার করেছেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি। বিবিসিকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ দাবি করেন তিনি। দেশটির রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিধন করা হচ্ছে বলে ব্যাপকভিত্তিক অভিযোগ রয়েছে। তবে সুচি এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট ওই রাজ্যে যে সমস্যা রয়েছে, তা স্বীকার করেছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে 'জাতিগত নিধন' শব্দগুলো ব্যবহার করার বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানান। একই সঙ্গে শান্তিতে নোবেলজয়ী এই নেত্রী বলেন, 'দেশ থেকে চলে যাওয়া রোহিঙ্গারা ফিরে এলে তাদের স্বাগত জানাবে মিয়ানমার।' তিনি বলেন, 'আমি মনে করি না, সেখানে (রাখাইন) জাতিগত নিধন চলছে। যা ঘটছে, তা প্রকাশে 'জাতিগত নিধন' কথাটা ব্যবহার কড়া হয়ে যাচ্ছে।' 'আমি মনে করি রাখাইনে অনেক বৈরিতা রয়েছে। সেখানে মুসলিমরাও নিজেদের হত্যা করছে। তারা প্রয়োজন মনে করলে সরকারকে এসব বিষয়ে সহায়তা করতে পারে', যোগ করেন সুচি। তিনি আরও বলেন, 'এটিকে আপনি শুধুমাত্র জাতিগত নিধন বলতে পারেন না। নানা কারণে সেখানে মানুষে মানুষে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। আমরা এই বিভক্তি রেখা কমিয়ে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।' মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের দেশটির নাগরিক বলে মেনে নেয়নি। তারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এমনকি মুক্তভাবে চলাফেরার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। ২০১২ সালে জাতিগত সহিংসতায় লাখো রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়।
এরপর গত বছর অক্টোবরে দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে। জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই অভিযানের নামে রাখাইনে শত শত রোহিঙ্গাকে হত্যা এবং নারী-শিশুরা ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে বরাবরের মতো এবারও অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার সরকার। তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অভিযোগগুলো অতিরঞ্জিত। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সবশেষ এই অভিযানকালে প্রাণ বাঁচাতে ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নসহ সহিংসতার ঘটনাগুলো তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। তবে জাতিসংঘের ভাষ্যে, তাদের এই কাজেও সহায়তা করছে না মিয়ানমার সরকার। এদিকে, রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে সব সময় নীরব থেকেছেন সুচি। এতে তিনি সমালোচিত হয়েছেন। এমনকি তার নোবেল পুরস্কার কেড়ে নিতে বিশ্বব্যাপী দাবিও ওঠে। সাক্ষাৎকারে সুচি এ বিষয়েও কথা বলেন। 'আমি মার্গারেট থ্যাচার নই, আবার মাদার তেরেসাও নই। আমি একজন রাজনীতিবিদ।' তিনি দাবি করেন, ২০১৩ সালের পর থেকেই এ বিষয়ে তিনি কথা বলে আসছেন। কিন্তু সবাই তার কাঙ্ক্ষিত জবাব পায় না দেখেই এ ধরনের অভিযোগ করেন। সুচি বলেন, 'মানুষ চায় আমি যেকোনো একটি সম্প্রদায়ের নিন্দা জানাই। সেটা করছি না বলে সবাই ভাবছে আমি কিছু বলি না।'

No comments

Powered by Blogger.