জলাবদ্ধতার আতঙ্কে বাসিন্দারা

অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫১ নম্বর ওয়ার্ড। সড়কগুলো এবড়ো-খেবড়ো গর্তে ভরা। কয়েকটি সড়ক ব্যতীত বাকিগুলোর করুণ দশা। অকেজো হয়ে রয়েছে অনেক সড়কবাতি। এ কারণে সন্ধ্যা নামলে ওই ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। আর সড়কের যত্রতত্র পড়ে থাকে আবর্জনা। এ কারণে পথচারীদের পথ চলতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। সড়ক, ড্রেন, ফুটপাত অপরিচ্ছন্ন থাকায় মশা-মাছির উপদ্রবে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। তবে সব দুর্ভোগ ছাপিয়ে যায়, বর্ষার জলাবদ্ধতায়। বর্ষা মৌসুম সন্নিকটে হওয়ায় ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এখন জলাবদ্ধতার আতঙ্কে ভুগছেন। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি, গ্যাস, মাদকের সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করেছে এ ওয়ার্ডে।
ওয়ার্ড পরিচিতি : ডিএসসিসির ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের আয়তন ০.৬৫৭ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার। ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৭০০। যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর ও গেণ্ডারিয়া চার থানার অংশ বিশেষ নিয়ে এ ওয়ার্ড। পূর্ব দোলাইর পাড়-১, ২, ৩ নম্বর গলি, পশ্চিম দোলাইর পাড়, মীর হাজীরবাগ-১, ২, ৩, ৪, ৫ ও পাড় গেণ্ডারিয়া এলাকা নিয়ে এ ওয়ার্ড গঠিত। ওয়ার্ডের পশ্চিমে মীর হাজীরবাগ রেল লাইন ও গেণ্ডারিয়া, পূর্বে দোলাইর পাড় ৩ নম্বর গলি, দনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, উত্তরে জিলানী খাল মীর হাজীরবাগ সড়ক, দক্ষিণে মীর হাজীরবাগ চৌরাস্তা মুন্সীবাড়ি। ডিএসসিসির ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ মন্থর গতিতে চলায় জনগণের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে হলেও আধুনিক অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। সড়কের তেমন কোনো উন্নয়ন কাজ না হওয়ায় বিনোদনেরও কোনো সুযোগ নেই। স্থানীয়দের আক্ষেপ বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় সব সময় ট্রাক আর মালবাহী গাড়ির সাইরেনই তাদের কানে বাজে। একটুখানি স্বস্থির নিঃশ্বাস নেয়ার মতো নেই নির্মল পরিবেশ। আর কিশোর-কিশোরীদের খেলাধুলার জন্যও নেই উন্মুক্ত কোনো খেলার মাঠ। ফলে শিশু-কিশোররা প্রযুক্তিনির্ভর বিনোদনের দিকে ঝুঁকছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কগুলোর বেহাল দশা। এলাকার বাসিন্দাদের নানা দুর্ভোগের চিত্র ফুটে উঠে। বিশেষ করে দোলাইরপাড় উচ্চ বিদ্যালয় হতে বড়বাড়ি এলাকা হয়ে মীরহাজিরবাগ ঘুন্টিঘর সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বর্ষা ও শুষ্ক সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী আজগর আলী জানান, তুলনামূলকভাবে নিচু হওয়ায় এবং নিয়মিত বড় বড় ট্রাক চলাচলের কারণে বর্তমানে এ সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আর বর্ষা মৌসুম আসলে দুর্ভোগ আরও চরম আকার ধারণ করে । বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকার আশপাশের নর্দমার ময়লা পানি অধিকাংশ আবাসিক বাসার নিচতলায় ঢুকে পড়ে। ওই এলাকার ড্রেনেজ সিস্টেম কার্যকর না থাকায় বর্ষা মৌসুমেই এলাকার বেশিরভাগ এলাকার বাসিন্দাদের জলজট ও জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,
২০১৬ সালে উত্তর জুরাইন মুন্সীবাড়ি এলাকার সড়কে পাইপ স্থাপনের কাজ শেষে সড়ক কার্পেটিং করায় এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়। তবে একই বছরের ১৭ এপ্রিল ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাইদ খোকন মধ্যপাড়া ও ১ নম্বর হাজীরবাগ গলির পাইপ এবং নর্দমার উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করলেও এখনো চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। মূলত থেমে থেমে কাজ করায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে । অথচ নিয়মিত কাজ করলে আরও আগেই কাজ শেষ হয়ে যেত বলে মনে করেন তারা। অভিযোগ মিলেছে, দেরিতে সড়কের আবর্জনা পরিষ্কার করায় ময়লা ও পচা আবর্জনায় সড়কের অর্ধেকাংশ ভরে যায়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে দয়াগঞ্জ বাঁশপট্টি তিন রাস্তার মোড়ের তিনটি ময়লার গাড়ি। কারণ এ ডাস্টবিন ঘেঁষা সড়ক দিয়ে চলে বাবু বাজার, গুলিস্তান ও জুরাইনগামী অধিকাংশ গাড়ি। তাছাড়াও এর আশপাশে রয়েছে একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ব্যাংক। দুর্গন্ধে নাকাল হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। এছাড়াও দোলাইপাড় থেকে নতুন সড়কের মাথার ডাস্টবিন, রেলব্রিজের নিচের ডাস্টবিনটিও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ওয়ার্ডে গ্যাসের চরম সংকটে ভুগছে বাসিন্দারা। মীর হাজীরবাগ এলাকার কাজী আতিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা গ্যাস সংকটের কারণে সিলিন্ডার কিনে রান্নার কাজ সারছি। পানি সমস্যাও প্রকট। মীর হাজীরবাগ ইঞ্জিনিয়ার গলির শিউলি আক্তার মিলি যুগান্তরকে বলেন, আমরা পানিতে প্রচুর কষ্ট পাই। পানির অভাবে ভাত রান্না করতে পারি না, গোসল করতে পারি না।

No comments

Powered by Blogger.