হাসিনা-মোদির বৈঠকে থাকছেন মমতা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাজধানী দিল্লি আসছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ৮ এপ্রিল হায়দরাবাদ হাউসে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকেও মমতা উপস্থিত থাকবেন। বিশ্বস্ত সূত্রে এই খবর জানা গেছে। শেখ হাসিনার সফরের সময় মমতাকে দিল্লি আসার আমন্ত্রণ জানানো হয় তিন তরফে। হাসিনার সম্মানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি রাষ্ট্রপতি ভবনে যে নৈশভোজের আয়োজন করেছেন, সেখানে আসার জন্য তিনি প্রথম মমতাকে আমন্ত্রণ জানান। তারপর দিল্লি আসার অনুরোধ আসে প্রধানমন্ত্রীর তরফে। গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ফোন করেন মমতাকে। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, মমতাকে হায়দরাবাদ হাউসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে বিশেষভাবে বলা হয়। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি আসার সিদ্ধান্ত নেন। হাসিনা যেদিন দিল্লি আসছেন, সেই ৭ এপ্রিল মমতাও আসছেন। পরের দিন সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনার পর হাসিনা যাবেন রাজঘাটে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানাতে। হায়দরাবাদ হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক তারপর। প্রথমে দুই প্রধানমন্ত্রীর নিভৃত আলোচনা। তারপর বৈঠক দুই দেশের প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে নিয়ে। এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজ। বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী, হায়দরাবাদ হাউসের এই আসরেই মমতার সঙ্গে হাসিনা ও মোদির কথা হবে। হাসিনার সঙ্গে মমতার ফের দেখা হবে পরের দিন রাষ্ট্রপতি ভবনের নৈশভোজের আসরে। তার আগে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দেখা করবেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির সঙ্গে। সন্ধ্যায় কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও সহসভাপতি রাহুল আসবেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে।
হাসিনার এই সফর থেকেই খুলনা-কলকাতা বাস চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার কথা। শোনা যাচ্ছে, একটি ভিডিও কনফারেন্স মারফত তা শুরু করা হবে। সেই অনুষ্ঠানেও মমতা থাকবেন বলে সূত্রের খবর। সূত্র অনুযায়ী, তিস্তা পানি চুক্তি ও গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে দুই নেত্রীর মধ্যে কথা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। মমতার দিল্লি আসার খবর প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই হাসিনার সফর ঘিরে অন্য এক আশা সঞ্চারিত হয়েছে। যদিও মমতার দিল্লি আসা ও হায়দরাবাদ হাউসে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কিছু জানা নেই। হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানি না। তবে উনি যদি আসেন, তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে যদি মতবিনিময় করেন, তাহলে ভালোই।’ তিস্তার পানির ন্যায্য প্রাপ্য নিয়ে বাংলাদেশের দাবির কোনো পরিবর্তন নেই। এই মন্তব্য করে হাইকমিশনার বলেন, ‘গ্রীষ্মকালে এই নদীতে পানিপ্রবাহ যদি কমেই যায়, তা হলে শুকনো মৌসুমে সেই প্রবাহ বাড়ানোর বিষয়টি নিয়েও ভাবার অবকাশ রয়েছে। সে জন্য উজানে কোনো জলাধার তৈরি করা যায় কি না, যা প্রয়োজনের সময় দুই দেশকেই বাড়তি পানি জোগাবে, তা বিবেচনার মধ্যে আনা প্রয়োজন।’ গঙ্গা ব্যারাজ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘এটা ভবিষ্যতের চাহিদা। বাংলাদেশ ও ভারতকে এখন থেকেই এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে।’ হাসিনা ৯ এপ্রিল যাবেন রাজস্থানের আজমির শরিফ। ১০ এপ্রিল ঢাকা ফেরার আগে দুই দেশের শিল্পপতি ও বণিক সভার অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। মমতা কলকাতা ফিরবেন তার পরের দিন। এর অর্থ বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে দিল্লি তাঁর সঙ্গে আরও আলোচনা করতে চাইলে সে সুযোগও থাকছে।
তিস্তায় পানি নেই: মমতা
ভারতের বার্তা সংস্থা আইএএনএস জানিয়েছে, তিস্তায় পানি নেই বলে মন্তব্য করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের বাকুড়ায় গতকাল এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘তিস্তায় যদি পানি না থাকে, তাহলে আমি কী করব? তিস্তায় পানিই নেই। মুকুটমানিপুর শুকিয়ে গেছে... মহানন্দা শুকিয়ে গেছে। এটা কেবল এপ্রিল মাস। সামনে মে, জুন। বৃষ্টি শুরু হতে সেই জুন মাস। কাজেই এই তিন মাস...পানির জন্য হাহাকার।’ মমতা বলেন, ‘দামোদরের উজানে বেড়িবাঁধ তৈরির জন্য তিন হাজার কোটি রুপির একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেচের জন্য ৫০০ কোটি রুপির একটি বাঁধ তৈরির প্রকল্পও আমরা হাতে নিয়েছি। আগস্ট নাগাদ বাকুড়ার আরও আটটি ব্লকে পানি সরবরাহের একটি নতুন প্রকল্প আমরা শুরু করব।’

No comments

Powered by Blogger.