আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সিরিয়া

সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে সম্ভাব্য রাসায়নিক গ্যাস হামলায় শতাধিক মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার। বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এ ঘটনাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বিবেচনা করে তদন্ত করার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। খবর বিবিসির। মঙ্গলবার দেশটির বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিবের খান শেইখৌন শহরে ওই হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৬০০ জন। নিহতদের মধ্যে ১১ শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। এ হামলার জন্য সিরিয়ার সরকারকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিশ্বশক্তি। অপরদিকে দামেস্কের কর্মকর্তারা এ ধরনের (রাসায়নিক) কোনো অস্ত্র ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত ম্যাথিউ রাইক্রফট এ হামলাকে ‘সিরিয়ার শান্তির জন্য অত্যন্ত খারাপ খবর’ বলে মন্তব্য করেছেন। নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটি পরিষ্কারভাবে একটি যুদ্ধাপরাধ। আমি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের আহ্বান জানাচ্ছি- যারা এর আগে সমর্থনের অযোগ্যদের রক্ষা করতে তাদের ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছিলেন।’ বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের ডাক দিয়েছে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। স্থানীয় সময় বুধবার বৈঠকটি হওয়ার কথা। এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘সিরীয় সরকারের এই জঘন্য কাজের’ নিন্দা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ‘নির্দয়, নির্লজ্জ বর্বরতার’ জন্য সিরীয় সরকারকে দায়ী করছেন।
সিরিয়াবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্তেফান দ্য মিসতুরা বলেছেন, ‘এটি একটি ভয়াবহ হামলা এবং এ হামলার জন্য দায়ীদের পরিষ্কারভাবে শনাক্ত করে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’ অন্যদিকে এ হামলার জন্য তাদের বাহিনী দায়ী নয় বলে দাবি করেছে সিরিয়া। রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিদ্রোহীদের একটি অস্ত্রাগারে সিরীয় বিমান হামলা চালিয়েছে। ওই অস্ত্রাগারেই রাসায়নিক অস্ত্র ছিল। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকার একটি ওয়ার্কশপে ল্যান্ড মাইন তৈরির একটি কারখানায় ওই রাসায়নিক দ্রব্য ছিল। হামলায় কী ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সিরিয়ার সরকারবিরোধীরা দাবি করেছে, তাদের বিশ্বাস- হামলায় নার্ভ এজেন্ট সারিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে বেসামরিকদের শ্বাসরোধ হয়ে আসার ও মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে আসার দৃশ্য দেখা গেছে। তারপর আহতদের যেসব ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল সেখানে বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ হামলার কারণে বেলিজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিতব্য একটি সম্মেলন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ সম্মেলনে সিরিয়ায় ত্রাণ সহায়তা সরবরাহের উদ্যোগ নিয়ে ৭০টি দাতা দেশের আলোচনার কথা রয়েছে। এ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে আটকে পড়া হাজার হাজার বেসামরিকের জন্য মানবিক ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ নিশ্চিত করতে চান। ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ অবসানের কোনো রাজনৈতিক সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। প্রায় ৫০ লাখ সিরীয় দেশটি থেকে পালিয়ে অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে, ৬০ লাখেরও বেশি সিরীয় অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন এবং জাতিসংঘের হিসাবে গৃহযুদ্ধে দেশটিতে এ পর্যন্ত আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.