কাফনে ঢাকা সভ্যতার মুখ by সাজেদুল হক

মানুষের জীবনে নানা গল্প থাকে। এ যেন এক আনন্দ-বেদনার কাব্য। সুপ্ত নামের ছেলেটির গল্পে অবশ্য কোন আনন্দ নেই। মুহূর্তের মধ্যেই মাটি হয়ে গেল তার সারা জীবনের আনন্দ। নিজের চোখের সামনে মা, বোন আর নানীকে পিষ্ট হয়ে মরতে দেখলো ছেলেটি। আচ্ছা ওদের জীবনে কি আসলেই কোন আনন্দ আছে? আনন্দ থাকলে মানুষ কি ‘জাকাতের কাপড়’ আনতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা যায়।
সত্যি এও বাংলাদেশেরই অংশ, যে দেশে কান পাতলেই উন্নয়নের গল্প শোনা যায়। নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের সার্টিফিকেট পেয়ে ধন্য হই আমরা। চারদিকে খুশির ঝিলিক। কিন্তু ময়মনসিংহে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া ২৭ বঙ্গসন্তানের জন্য এ সার্টিফিকেট কোন আনন্দই বয়ে আনেনি। কেন মানুষ ‘জাকাতের কাপড়’ আনতে গিয়ে মারা যায় সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় বোধহয় চলে এসেছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, এত বড় নিষ্ঠুরতার পরও কোথাও কোন শোকের মাতম দেখা যায় না। যেন আমরা মেনেই নিয়েছি, এভাবে মরার জন্যই ওদের জন্ম হয়েছে।
আজকের বাংলাদেশে উন্নয়নের গল্প যা শোনা যায় তা একেবারে মিথ্যা নয়। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। গড় বয়স বেড়েছে। এসবই মুদ্রার একটি পিঠ। মুদ্রার উল্টো পিঠে দৈত্যের মতো সমাজে যে বৈষম্য বাড়ছে সে গল্প তেমন শোনা যায় না। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ধর্মের নামে প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতা। বহু আগে কবি লিখে গেছেন, ‘মসজিদগুলো ক্রমশ পাকা হয়েছে, বিপরীতে মুসল্লিরা হয়েছেন কাঁচা। মসজিদে মসজিদে আজান হচ্ছে, কিন্তু হযরত বেলালের (রা.) মতো মুয়াজ্জিন আর পাওয়া যাচ্ছে না।’ ধর্ম পালনের নামে প্রদর্শনীর অংশ হিসেবেই অনেকে জাকাত প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। এ যেন তাদের ব্যবসা- প্রচারেই প্রসার।
শুধু প্রবৃদ্ধি আর মাথাপিছু আয়েই উন্নয়ন লেখা থাকে না। বৈষম্যের ভিত্তিতে নির্মিত সমাজে উন্ন্নয়ন শেষ পর্যন্ত ফাঁকা বুলিই থেকে যায়। আর সভ্যতার মুখ ঢেকে যায় কাফনে।

No comments

Powered by Blogger.