কুমিল্লা সিটি করপোরেশন: পুকুর, দিঘি, খালে আবর্জনার স্তূপ

কুমিল্লা নগরের রানীরবাজার কো-অপারেটিভ কারখানার
ভেতরকার পুকুর ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। পুকুরটির
তিন পাশের সব বাড়িঘরের ময়লা এখানে ফেলা হয়।
এতে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। -প্রথম আলো
কুমিল্লা নগরের রাণীরবাজার পুকুরের পশ্চিম ও উত্তর অংশে নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধে ওই পুকুরের আশপাশের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
শুধু রাণীরবাজার পুকুর নয়, নগরের রাণীর দিঘি, নানুয়া দিঘি, উজির দিঘি, আমের দিঘি, বাদুরতলা এলাকার পুকুর, রামঘাট আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনের পুকুর ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় লাগোয়া পুকুরসহ নগরের বিভিন্ন খাল-নালায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে এককালের ট্যাঙ্কের শহর (প্রাচীনকাল থেকে কুমিল্লায় প্রচুর পুকুর ও দিঘি থাকায় একে ট্যাঙ্কের শহর বলা হয়) কুমিল্লায় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মো. নূরুল্লাহ বলেন, নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে ১৭৭ দশমিক ১৪ কিলোমিটার নালা ও ১৫৫টি ডাস্টবিন আছে। নগরের অসচেতন বাসিন্দারা ডাস্টবিনে ময়লা না ফেলে নালার মধ্যেই ফেলেন। কেউ কেউ বাসার সামনের পুকুর, দিঘি ও খালের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা ফেলেন। এতে পানি দূষিত হচ্ছে। ডাস্টবিনে ময়লা ফেলা হলে প্রতিদিনই দফায় দফায় পরিষ্কার করে সিটি করপোরেশন। নগরবাসী নিজেরা সচেতন ও অন্যদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিলে কুমিল্লার ময়লা-আবর্জনা এভাবে পুকুরে পড়ত না।
৫ জুলাই সরেজমিনে নগরের বাদুরতলা ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শহীদ মিনার লাগোয়া ডাস্টবিনের ময়লা সড়কের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা যায়। রেসকোর্স ডিসি সড়কের খালের মধ্যে ময়লা জমে পানির প্রবাহ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সামনের ডাস্টবিনের ময়লার গন্ধে সেখানে আসা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা বিরক্ত। রাণীরবাজার পুকুরের পাড় দিয়ে গন্ধে হাঁটাই যায় না। সেখানে ময়লার ভাগাড়। উজির দিঘির দক্ষিণ পাড়ে ময়লার স্তূপ জমে আছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার আহ্বায়ক চিকিৎসক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুকুর ও দিঘির শহর হিসেবে কুমিল্লার পরিচিতি আছে। বাড়ির আঙিনার পুকুরে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে সেখানে মশা, মাছি বংশ বিস্তার করছে। এতে নানা ধরনের রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে। অথচ এখনো শহরের একটা অংশের লোকজন পুকুরের পানিই ব্যবহার করেন। সিটি করপোরেশন নজরদারি বাড়ালে এবং নগরের বাসিন্দারা সচেতন হলে কুমিল্লার সব পুকুর ও দিঘি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি আইনজীবী নাজমুল আলম চৌধুরী নোমান বলেন, নগরের রামঘাট আওয়ামী লীগ কার্যালয় লাগোয়া পুকুর, বাদুরতলা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের পুকুরে ময়লা-আবর্জনা ফেলে কেউ কেউ ভরাটের সুযোগ খুঁজছেন। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এক শ্রেণির ভূমিখেকো চক্র জড়িত। এগুলো করে নগরের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, নগরের বাসিন্দারা কেউ কেউ ডাস্টবিনে ময়লা না ফেলে যেখানে-সেখানে ফেলছেন। এ কারণে দিঘি, পুকুর, খাল ও নালা ভরাট হয়ে যায়। সিটি করপোরেশন প্রতিদিনই ডাস্টবিন থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে। জনগণ একটু সচেতন হলে এই নগরকে আরও সুন্দর করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.