মামলা নিতে দুই থানার ঠেলাঠেলি

‘আমরা আইনের লোক’ পরিচয় দিয়ে আটক করা হয়েছিল এক ব্যবসায়ীকে। তারপর চোখ বেঁধে ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ৩ দিন নিখোঁজ থাকার পর রাজধানীর পল্লবী থেকে ওই ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের নাম মমিন বখত (৪৪)। গতকাল ভোরে পল্লবীর কালশীর বাইতুল জান্নাত মসজিদের পাশের রাস্তা থেকে গলায় রশি প্যাঁচানো অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানা হয়। লাশ উদ্ধারের পরও মামলা নিতে ঠেলাঠেলি করছে দুই থানার পুলিশ। নিহতের স্বজনরা জানান, অপহরণের পর পরই মোহাম্মদপুর থানায় বিষয়টি অবগত করা হয়। ওই দিন রাতে মামলা করতে চাইলেও তা গ্রহণ করেনি পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পরও দুই থানা দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টায় আছে। গত ৮ই জুলাই সকালে মোহাম্মদপুর তাজমহল রোড থেকে মোমেন ও তার গাড়ির চালক সোহেলকে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা বিকালে সোহেলকে ছেড়ে দিলেও মোমেনকে আটকে রাখে। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে মোমেনের পরিবারকে অপহরণের বিষয়টি জানায় সোহেল। তার কথা ‘অসংলগ্ন’ হওয়ায় তাকে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় আসেন মোমেনের স্বজনরা। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ পারভেজ জানান, ওই সময়ে সোহেলের কথা অনুসারে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি। সোহেলের বরাত দিয়ে তিনি জানান, হয়েছে মাইক্রোবাস দিয়ে তাদের গতিরোধ করা হয়। এ সময় কয়েক যুবক সাদা পোশাকে নিজেদের আইনের লোক পরিচয় দিয়ে মোমেনকে গাড়িতে উঠতে বলে। পরে জোর করে হাতকড়া পরিয়ে কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। আর মোমেনের মাইক্রোবাসটি সেখানেই পড়ে ছিল। পরে তা উদ্ধার করে পুলিশ। এসআই মাসুদ পারভেজ বলেন, তখন কথা শুনে মনে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ তাকে আটক করতে পারেন। সোহেলকে উদ্ধৃত করে মোমেনের আত্মীয় মোহাম্মদ বাবু বলেন, ঘটনার দিন সকালে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে যান মোমেন। সেখানে কাজ শেষে অন্যরা নেমে যান এবং চালকসহ মোমেন মোহাম্মদপুরে এক আইনজীবীর বাসায় যান। সেখান থেকে বের হওয়ার পর পরই একদল লোক মোমেন ও সোহেলকে ধরে নিয়ে যায়। মাইক্রোবাসে তোলার পর মোমেনকে মারধর করা হয় বলেও পুলিশকে জানিয়েছেন সোহেল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল জানান, তুলে নেয়ার পর ওই দিনই অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দেয়। ওই সময়ে সন্দেহমূলকভাবে ৫৪ ধারায় সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। সোহেলকে গ্রেপ্তার করলেও মোমেনকে অপহরণের বিষয়ে কোন মামলা নিতে চায়নি মোহাম্মদপুর থানা। এ বিষয়ে তারা গড়িমসি করে বলে মোমেনের ভাগ্নি জামাই মিনাল জানান। তিনি জানান, গভীর রাত পর্যন্ত বসিয়ে রাখে পুলিশ। মামলা নিচ্ছি, নেব বলে তারা আমাদের শুক্রবার সকালে আসতে বলেন। কিন্তু শুক্রবার সকালে গেলে থানা থেকে বলা হয়, আমরা যেন আদালতে মামলা করি। লাশ উদ্ধারের পরও এ ঘটনায় মামলা নিতে দুই থানা ঠেলাঠেলি করছে। এ ঘটনায় কেউই মামলা নিতে চাচ্ছে না। এ ঘটনায় মামলা হচ্ছে কিনা জানাতে চাইলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দবির উদ্দিন ফকির বলেন, ঘটনা তো আমার থানায় না। এখানে শুধু লাশ ফেলে গেছে। ঘটনা তো মোহাম্মদপুর থানা এলাকার। নিয়ম অনুযায়ী মামলা মোহাম্মদপুর থানায় হওয়ার কথা। সেখানে একজন গ্রেপ্তার আছে। যাকে হত্যা করা হয়েছে তার গাড়ি সেখানে পড়েছিল। সুতরাং মামলা সেখানেই হবে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে মোহাম্মদপুর থানার ওসির ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। কর্তব্যরত কর্মকর্তা এসআই মাসুদ জানান, এ বিষয়ে কোন মামলা গ্রহণ করা হয়নি। নিহতের স্বজনরা উল্টো দায়িত্ব এড়াতে পুলিশ মোমেনকে সন্ত্রাসী সাজানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন।

No comments

Powered by Blogger.