এবার ছিনতাইয়ে পুলিশের এসআই

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে গিয়ে পুলিশের হাতেই ধরা খেলো আরেক পুলিশ সদস্য। তার নাম রফিকুল ইসলাম। সে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাফরুল থানায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত। গ্রেপ্তারের পর ওই এসআই ও লুৎফর রহমান নামে এক গাড়িচালককে আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দুপুরে। তবে গতকাল সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। এ ঘটনায় ছিনতাইকারী ওই চক্রের আরও চার সদস্যকে ধরতে ও ছিনিয়ে নেয়া টাকা উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানায়, কাফরুল থানায় কর্মরত এসআই রফিক শনিবার সকালে তার চার সহযোগীকে নিয়ে ছিনতাইয়ের এ পরিকল্পনা করে। এক সোর্সের মাধ্যমে সে জানতে পারে নাজমুল নামে এক ঝুট ব্যবসায়ী ১৯ লাখ টাকা নিয়ে একটি বাসে করে শনির আখড়ার দিকে যাচ্ছেন। এসআই রফিকসহ অন্যরা মাইক্রোবাস নিয়ে শনিরআখড়া গিয়ে ওই বাসটিকে আটকায়। এসময় পোশাকধারী এসআই রফিক বাসের ভেতরে গিয়ে আসামি ধরার নাম করে ব্যবসায়ী নাজমুলকে ধরে মাইক্রো বাসে তুলে। মাইক্রোবাসে ওঠানোর পরপরই নাজমুলের সঙ্গে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়া হয়। নাজমুল চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গিয়ে মাইক্রোবাসটিকে আটকায়। এসময় এসআই রফিকসহ অন্যরা টাকার ব্যাগটি নিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন মাইক্রোবাসচালক লুৎফরকে ধরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের একটি টহল দলের কাছে সোপর্দ করে। যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ ছিনতাইয়ের বিষয়টি তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানায়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই মাইক্রোবাসচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে ছিনতাইয়ের এই ঘটনার সঙ্গে পুলিশের এক কর্মকর্তা জড়িত। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারের নির্দেশে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম এসআই রফিককে কাফরুল থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল দু’জনকে আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ১০ দিনের রিমান্ডই মঞ্জুর করে। এর আগে ব্যবসায়ী নাজমুল বাদী হয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এসআই রফিক ও গাড়িচালক লুৎফরের সঙ্গে আরো চারজন ছিনতাইকারী ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ওই চারজনের বিস্তারিত পরিচয় দিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ ইতিমধ্যে অভিযান চালাচ্ছে। সূত্র জানায়, ঘটনার পর এসআই রফিক পালিয়ে কাফরুল এলাকায় ফিরে গেলেও অপর চারজন টাকার ব্যাগটি নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, টাকাগুলো হুন্ডির কাজে ব্যবহৃত বলে তারা জানতে পেরেছেন। বিষয়টি এসআই রফিক জানতেন। তার এও জানা ছিল নাজমুল টাকা নিয়ে লোকাল বাসে করে শনিরআখড়ার দিকে যাচ্ছে।
গ্রেপ্তারকৃত এসআই রফিকের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে বলে জানা গেছে। ১৯৮৬ সালে সে কনস্টেবল হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেয়। এরপর ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে সে পুলিশের এসআই হয়েছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃত পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া তার সহযোগীদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.