পদপিষ্ট হয়ে ২৭ জনের মৃত্যু- এই নির্দয় দায়িত্বহীনতা বন্ধ করুন

জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে ২৭ জন অভাবী মানুষের মৃত্যুর মর্মান্তিকতা ও নির্দয় দায়িত্বজ্ঞানহীনতা মেনে নেওয়া যায় না। ইসলামের বিধান অনুসারে জাকাত দরিদ্রের অধিকার; সম্পদবানের জন্য তা বাধ্যবাধকতা। তাই জাকাত দিতে গিয়ে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ফেলা তো দূরের কথা, অসম্মান ও হয়রানিও অনুচিত। ফি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে জাকাতঘটিত কারণে গণমৃত্যু বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া তাই জরুরি।
ময়মনসিংহ শহরে জাকাতের কাপড় নেওয়ার হুড়োহুড়িতে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের ২২ জনই নারী এবং বাকি পাঁচজন কোলের শিশু। এক ধনীর দানবিলাসের খেসারত কি এই ২৭ প্রাণের অপচয়? নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের ঈদ কে কেড়ে নিল? জাকাত দেওয়ার চেয়ে এলাকায় ‘দাতা’ হিসেবে নাম করার ইচ্ছা কি এর জন্য দায়ী নয়?
ইসলামি দানের শর্ত হলো যাতে ডান হাতের দান বাঁ হাতও জানতে না পারে। অর্থাৎ জাকাতগ্রহীতাকে খাটো না করেই তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। এ জন্য ডেকে আনার চেয়ে তাদের কাছে গিয়ে জাকাতের অর্থ বা সামগ্রী দেওয়াই শ্রেয়। তাহলে পদদলিত হয়ে মৃত্যুঝুঁকি প্রায় পুরোটাই লোপ পেত। দ্বিতীয়ত, যেখানে প্রতিবছর জাকাত নিতে গিয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটছে, সেখানে ধনশালী ব্যক্তিদের উচিত সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, যেখানে আগাম ঘোষণা দিয়ে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত ঘটানো হচ্ছে, সেখানে পুলিশ উপস্থিত থাকেনি কেন?
জাকাতসহ বড় আকারের দান-খয়রাতের জমায়েতে প্রায়ই গণমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পদপিষ্ট হয়ে ১৯৮০ সালে ঢাকার জুরাইনে ১৩ জন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে তিন শিশু, ১৯৮৭ সালে চারজন, ১৯৮৯ সালে চাঁদপুরে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটে ১৯৯০ সালে, চট্টগ্রামে নিহত হন ৩৫ জন। দরিদ্রদের পায়ের নিচে দরিদ্রদের এমন মৃত্যু দারিদ্র্যের প্রতি মারাত্মক উপহাস নয় কি?
শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে দরিদ্রদের প্রাপ্য তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হোক। এ ধরনের ঘটনাকে সজ্ঞান অবহেলা হিসেবে নিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার হোক।

No comments

Powered by Blogger.