ঢাকা দক্ষিণে সমাধান হয়নি, সমস্যা বেড়েছে by অরূপ দত্ত

বাংলাবাজার মোড়ে প​দচারী–সেতুটি কেউ ব্যবহার করে না,
এভাবে খালি পড়ে থাকে। নিচে যানজট। ছবি: হাসান রাজা
আবর্জনার কনটেইনার দুটি ভরে উপচে পড়ছে রাস্তায়। চারদিকে ছড়িয়ে আছে পয়োলাইনের ফুটো নিংড়ানো নোংরা পানি। বাস, মিনিবাস, লেগুনা চলছে বেপরোয়া। বাসগুলো হঠাৎ যাত্রী তুলছে রাস্তার মাঝ থেকে। দাঁড়িয়ে পড়ছে যেখানে সেখানে। বেঁধে যাচ্ছে যানজট। ফাঁকফোকরে ছুটছে ঘোড়ার গাড়ি। পথচারীরা হাঁটছেন রাস্তায়। প্রায় শূন্য চতুর্মুখী পদচারী-সেতুতে অলস সময় কাটাচ্ছে ভবঘুরেরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউর একটি উঁচু ভবন থেকে চরম অব্যবস্থাপনার এমনই চিত্র দেখা যায়। কাছে এলে পরিবেশ আরও দুর্গন্ধময়। গত বুধবার দুপুরে ও বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে বাসিন্দা ও দোকানিদের সঙ্গে এসব সমস্যা নিয়ে কথা বললে তাঁরা কিছুটা বিরক্তই হন। তাঁদের কথা হচ্ছে, বছরের পর বছর এ অবস্থাই চলছে। কোনো প্রতিকার নেই।
নবনির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান মিয়াজী নির্বাচনের আগে গত ১১ এপ্রিল প্রথম আলোকে শুনিয়েছিলেন আশার কথা। ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দ্রুত নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার। প্রথম আলোকে তিনি বলেছিলেন, ‘সদরঘাট ওয়াইজঘাটসহ চারদিকে নোংরা পরিবেশ, রামকান্ত নন্দী লেন থেকে শাঁখারীবাজারের সুয়ারেজ লাইন খুবই খারাপ। এই পাইপলাইন সংস্কারের জন্য আগে সিটি করপোরেশনে গিয়েছিলাম, তখন বলা হয়েছিল নির্বাচিত প্রতিনিধি না বললে কাজ হবে না। এখন আমি কাউন্সিলরের জন্য নির্বাচন করছি। জিতলে তাদের কাছে ভালোভাবেই যাব।’
প্রায় তিন মাস পর গত বুধবার যখন কাউন্সিলর আবদুর রহমান মিয়াজীকে বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হলো, তিনি প্রথমে খানিকটা খেপে গেলেন। বললেন, ‘শপথ নেওয়ার পর মাত্র দুই মাস হলো, এত তাড়াতাড়ি কি সমস্যা সমাধান সম্ভব?’
উদ্যোগ তো নিতে পারেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছু পয়োলাইন পরিষ্কার করিয়েছি। কিছু করার চেষ্টা করছি।’
কিন্তু এলাকায় গিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে তরল পয়োবর্জ্য। শাঁখারীবাজারের সঙ্গে যুক্ত রমাকান্ত নন্দী লেনের পয়োলাইন থেকে উপচে পড়ছে ময়লা পানি। রমাকান্ত নন্দী লেনের বাসিন্দা অখিল লাল সাহা, কবিরাজ গলির হরিভূষণ ঘোষসহ কয়েকজন বাসিন্দা বললেন, সুইপার ডেকে লাইন পরিষ্কার করলে কোনো কাজ হবে না। মান্ধাতার আমলের লাইন, পুরো লাইনই পাল্টাতে হবে।
এই ওয়ার্ডের কবিরাজ লেন, জিএল গার্থ লেন, কৈশাল ঘোষ লেন, কুমারটুলী লেন, পাটুয়াটুলী লেনসহ বেশির ভাগ এলাকারই এ অবস্থা। গত বুধবার দুপুর এবং বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের বৃষ্টিতে কুমারটুলীসহ ওয়ার্ডের কিছু রাস্তায় স্থায়ী জলাবদ্ধতাও হয়।
সদরঘাট টার্মিনাল এলাকা থেকে বাকল্যান্ড বাঁধ রোড ধরে ওয়াইজঘাট। পুরো রাস্তায় ময়লা-আর্বজনার স্তূপ দেখা যায় আগের মতোই। কাউন্সিলর বলেন, ‘সুইপাররা পরিষ্কার করার কিছু সময় পর আবার ময়লা জমে যায়। বিশেষ করে মৌসুমি ফল ও সবজির বর্জ্য বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে। প্রতিকারের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তবে একজন ফলবিক্রেতা বলেন, অন্য আবর্জনাও নিয়মিত পরিষ্কার না করে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়।
ওয়ার্ডের বেশির ভাগ রাস্তা অলিগলি আরও ভেঙে গেছে। কোতোয়ালি থানার সামনের রাস্তা, সদরঘাট, ওয়াইজঘাট স্নানঘাট, আহসান উল্লাহ রোড, সিমসন রোড, পাটুয়াটুলী রোড, ইসলামপুর লিয়াকত অ্যাভিনিউ, পি কে রায় রোড (বাংলাবাজার), চিত্তরঞ্জন অ্য্যাভিনিউ, নর্থব্রুক হল রোড, লয়াল স্ট্রিট—প্রায় সব রাস্তার অবস্থাই বেহাল। কোনো কোনো রাস্তায় সৃষ্ট গর্ত বন্ধ করতে ইটের খোয়া ফেলা হয়েছে।
ইসলামপুর, নবাববাড়ী এলাকায় তৈরি পোশাক আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে রাস্তা সব সময়ই খারাপ—এমন যুক্তি দেখালেন কাউন্সিলের তিন সহযোগী। তবে ইসলামপুর নবাববাড়ির আবদুল হক, মিজানুর রহমান, বখতিয়ার আহমেদসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ওই সড়কটি ঠিক কবে মেরামত করা হয়েছে, তাঁরা স্মরণ করতে পারেন না। নির্বাচনের আগে বর্তমান কাউন্সিলর বলেছিলেন, রাস্তা মেরামত করে দেবেন।
জানতে চাইলে কাউন্সিলর বলেন, ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি রাস্তা খারাপ। জরুরি ভিত্তিতে কিছু রাস্তা মেরামতের জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।
ওয়াইজঘাট স্নানঘাটের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। দখল, অবৈধ স্থাপনা আর অব্যবস্থাপনার সাক্ষী হয়ে আছে যেন ঘাটটি। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক তাপস পাল প্রথম আলোকে বলেন, দুর্গাপূজার পর শতাধিক প্রতিমা এবং কালীপূজার দুই শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন হয় এই ঘাটে। সে সময় বোঝা যায়, দিন দিন এখানে অব্যবস্থাপনা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
কাউন্সিলর বলেন, আগামী দুর্গাপূজার আগে স্নানঘাটের সমস্যা দূর করার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া সেখানে একটি গভীর নলকূপ বসানোর কাজ করবে ঢাকা ওয়াসা।
ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাস ও নীরব চাঁদাবাজি অ্যাবহত আছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা বলেন। তাঁরা বলেন, ‘মুঠোফোনের মাধ্যমে নিয়মিত চাঁদা চাওয়া হয়। না দিলে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।’

No comments

Powered by Blogger.