লতিফ ইস্যুতে সংসদের ধীরগতি by কাজী সোহাগ

ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়ে দল ও পদ হারানো লতিফ সিদ্দিকী এখনও সংসদ সদস্যপদে বহাল আছেন। দল থেকে বহিষ্কারের চিঠি স্পিকারের দপ্তরে পৌঁছলেও দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত জানাচ্ছে না সংসদ সচিবালয়। এ বিষয়ে ‘ধীরে চলার’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই এ পথে হাঁটছেন স্পিকার। তবে চলতি সপ্তাহে বিষয়টির চূড়ান্ত সুরাহা করা হবে বলে জানিয়েছেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, এত দিন সংসদের অধিবেশন ছিল। ব্যস্ততা ছিল বেশি । অধিবেশন শেষের দিকে ৫ই জুলাই তাকে বহিষ্কারের বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানতে পারি। চলতি সপ্তাহে এ নিয়ে সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এ প্রশ্নে স্পিকার মানবজমিনকে বলেন, সেটা সময় হলেই দেখতে পারবেন। জানতেও পারবেন। নিয়ম অনুযায়ী সংসদ সচিবালয়ে পাঠানো আওয়ামী লীগের চিঠি স্পিকার নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন। নির্বাচন কমিশন তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশনের নির্দেশনা পেলে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে সংসদ সচিবালয়। তবে সংসদ সচিবালয় থেকে ওই চিঠি কত দিনের মধ্যে কমিশনে পাঠানো হবে সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। সংসদ সচিবালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে স্পিকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। স্পিকার চলতি সপ্তাহের মধ্যে সুরাহার কথা বললেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ নিয়ে কৌশলী অবস্থান নেবে সংসদ সচিবালয়।
দল থেকে যেখানে বহিষ্কারের ৮ মাস পর স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর ইস্যুতে একই নীতিতে পথ চলবে সচিবালয়। সে ক্ষেত্রে তিনি আর আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি হিসেবে পরিচিতি পাবেন না। স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে রেকর্ড বইয়ে তার নাম থাকবে। এরই অংশ হিসেবে সরকারদলীয় এমপিদের সঙ্গে থাকা সামনের সারি থেকে তার আসন চলে যাবে পেছনের সারিতে। সদ্য শেষ হওয়া বাজেট অধিবেশনে লতিফ সিদ্দিকী সংসদ অধিবেশনে আসার চেষ্টা করেছিলেন। স্পিকার ও আইন শাখায় তিনি যোগাযোগ করেন। আসন সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরে তাকে ওই অধিবেশনে যোগ দেয়া থেকে বিরত রাখা হয়। কারণ স্পিকারের কাছে চিঠি না যাওয়া পর্যন্ত তার আসন পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় তিনি অধিবেশনে যোগ দিলে বসতে হতো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা সামনের সারিতে। যেখানে আশপাশে বেশির ভাগ সদস্য মন্ত্রিপরিষদের সদস্য। বিব্রতকর ওই পরিস্থিতি এড়াতে লতিফ সিদ্দিকীকে সংসদে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়। এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটেছেন সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা। আইন শাখা, সংসদ সচিব থেকে শুরু করে চিফ হুইপ ও হুইপরাও এ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন। ওপর থেকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে বলে তারা জানান। পুরো বিষয়টি সম্পর্কে কথা বলা বা মন্তব্য করার একমাত্র এখতিয়ার স্পিকারের বলে তারা জানান। নৌকা প্রতীক নিয়ে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বর্তমান সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। গত ২৯শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে তিনি মহানবী (সা.), হজ ও তাবলিগ নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিলে তা নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ব্যাপক সমালোচনা ও বিক্ষোভের মুখে তাকে গত ১২ই অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ ও পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ থেকে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ গত ২৪শে অক্টোবর তার দলের সাধারণ সদস্য পদও খারিজ করা হয়। দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্পিকারের কাছে আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠি দীর্ঘ ৮ মাস পর গত ৫ই জুলাই সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছায়। অতীতের নজির অনুযায়ী তার সংসদ সদস্যপদ বাতিলের সুযোগ নেই। তবে নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান আইনের বিধান অনুযায়ী তার সদস্যপদ বাতিল হবে। এ বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া জানান, বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু দল থেকে বহিষ্কার হলে কারও সংসদ সদস্যপদ যাবে না। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে না। অতীতে তেমন রেকর্ড নেই। উল্লেখ্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে প্রায় দুই ডজন মামলা হয়। বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের আন্দোলনের হুমকি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার মুখে ২০১৪ সালের ২৩শে নভেম্বর রাতে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। পরদিন তিনি আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। গত ২৯শে জুন উচ্চ আদালতের জামিনে তিনি মুক্তি পান।

No comments

Powered by Blogger.