বিটিভি যাচ্ছে কোথায় by এ কে এম হানিফ

বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি তার প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করল গত ২৫ ডিসেম্বর। ঘটা করে উদযাপন করল প্রতিষ্ঠার স্বর্ণজয়ন্তী। সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে অন্তত দু’টি উদ্বোধনী এবং সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে।
অনুষ্ঠানগুলোর ত্রুটি-বিচ্যুতি এত দিন পর আলোচনা করা শোভন নয়। আলোচনা করতে চাই বিটিভির মূল সমস্যা নিয়ে। বিটিভির বর্তমান কর্মকর্তারা এবং বিটিভির নিয়ন্ত্রক তথ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি স্বীকার করবেন কি না জানি না; তবে বিটিভি যে ধীরে ধীরে তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে, এটা এ সম্পর্কে যারা ভাবেন তারা সবাই স্বীকার করবেন।
বিটিভি একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, এটা সবাই স্বীকার করলেও মানেন বলে আমার মনে হয় না। একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পঞ্চাশ বছর পার করা সামান্য ব্যাপার নয়; কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ে বিটিভি তার নিজস্বতা ধরে রাখতে পারেনি। না পারার কারণ বিটিভি নয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর জনবল সেভাবে গড়ে তোলা হয়নি। এ কারণে বিটিভি এখন মানুষ বাধ্য না হলে দেখেন না। যাদের ঘরে বা বাড়িতে ক্যাবল নেটওয়ার্ক নেই, তারাই এখন বিটিভির অনিবার্য দর্শক। যাদের ক্যাবল আছে, আর আছে রিমোট কন্ট্রোল, তাদের কেউই বিটিভি দেখেন না। বিটিভিপ্রাণ লোকজনও ‘ইত্যাদি’র মতো অনুষ্ঠান ছাড়া বিটিভিমুখী হন না।
বিটিভি যাদের দিয়ে ষাটের দশকের শুরুতে বর্তমান বাংলাদেশ নামের ভূ-খণ্ডে বিশ্বের প্রথম বাংলাভাষী টিভি হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল, তাদের কেউই আজ বিটিভিতে নেই। থাকারও কথা নয়। কেউ গেছেন পরপারে আর কেউ আছেন অবসরে। কিন্তু তাদের যোগ্য উত্তরসূরি বিটিভি তৈরি করতে পারেনি। বিভিন্ন সময় কর্তাব্যক্তিদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বিটিভির নিজস্ব লোকবল গড়ে ওঠেনি বা গড়তে দেয়া হয়নি। একটি সৃজনশীল মাধ্যম হিসেবে বিটিভিতে যে ধরনের লোকবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার ছিল, তা যথাযথভাবে করা হয়নি। বিষয়টি অনেকে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু বাস্তব অবস্থার দিকে একবার নজর দিলে সবাই উপলব্ধি করতে পারবেন। বিটিভির অনুষ্ঠান, বিশেষ করে সাপ্তাহিক নাটক দেখার জন্য সারা দেশের টিভি দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়ত। এখন তা আর দেখা যায় না। সেকালের প্রযোজক যেমন নেই, তেমনি নেই নাটক আর প্রযোজক।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের ইতিহাসে ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪২ বছরে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৩৫ জন। এর মধ্যে ১৯৭২ সালে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন জামিল চৌধুরী। তারপর বিটিভির লোক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করেন মোস্তাফিজুর রহমান ২০০২-২০০৪ পর্যন্ত, এ কে এম হানিফ ২০০৫-২০০৬, কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী ২০০৯-২০১২ এবং ম হামিদ ২০১২-২০১৪ পর্যন্ত। বাকি সময়ে ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের আমিরুজ্জামান খান ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ এবং সাইফুল বারী ১৯৮৪ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত। অবশিষ্ট সময় মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিভিন্ন ক্যাডার থেকে আগত কর্মকর্তারা। এসব কর্মকর্তার অনেকেই খুবই স্বল্প সময়ের জন্য বিটিভি পরিচালনা করেছেন। অনেকে বিটিভি বোঝার আগেই অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। ফলে বিটিভির বিকাশ ও উন্নয়নে তারা তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। সত্যিকার অর্থে, বিটিভির রঙিন সম্প্রচার থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন এবং বিটিভিকে দর্শকনন্দিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সিএসপি কর্মকর্তা এম এ সাইদ। তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবেও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আমার দৃষ্টিতে, বিটিভির প্রধান সমস্যা এর নিয়োগনীতি। এ নীতির দুর্বলতার কারণে বিটিভির বিভিন্ন পদে বিশেষ করে অনুষ্ঠান, প্রশাসন, হিসাব, বিজ্ঞাপন, লাইসেন্সসহ প্রায় সব ক’টি শাখায় এখন আর বিটিভির লোক নেই। বিভিন্ন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা বিটিভি চালাচ্ছেন। প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা বিটিভি বোঝার আগেই অন্যত্র বদলি হয়ে যান। ফলে সামগ্রিকভাবে দক্ষ লোকবলের অভাবে বিটিভি প্রতিনিয়ত হোঁচট খাচ্ছে।
অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের মধ্য থেকে কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির হার ৩০ শতাংশ হলেও বিটিভিতে তা ৫০ শতাংশ। এ কারণে ১৯৮২ সালের পর বিটিভির অনুষ্ঠান শাখার প্রযোজক পদে কোনো সরাসরি নিয়োগ হচ্ছে না। যখনই কোনো পদ খালি হচ্ছে, তা কর্মচারীদের পদোন্নতি দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে। ১৯৮২ সালের পর সম্ভবত ২০০৬ সালে অনুষ্ঠান শাখার দু’জন প্রযোজক পিএসসির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ পেয়েছেন। স্রোত বা প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে নদী যেমন মরে যায়, তেমনি সৃজনশীল ও মেধাবী তরুণ-তরুণীদের নিয়মিত নিয়োগ না হওয়ায় বিটিভির সৃজনশীলতা এখন মৃতপ্রায়।
শুধু তা-ই নয়, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধ থাকায় বিটিভিতে মাঝারিপর্যায়ে কর্মকর্তা পাওয়াও এখন অনেক কঠিন। যেসব কর্মচারী পদোন্নতি পেয়ে প্রযোজক গ্রেড-২, সহকারী পরিচালক প্রশাসন গ্রেড-২ এবং সহকারী অ্যাকাউন্টস অফিসার গ্রেড-২ পদে দায়িত্ব নেন; গ্রেড-১ পার হতে তাদের অবসরের সময় হয়ে যায়। ফলে ডেপুটি ডিরেক্টর ও নির্বাহী প্রযোজক মর্যাদার পদগুলো পূরণ করা সম্ভব হয় না। চলতি দায়িত্ব বা অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কোনো রকমে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়। প্রোগ্রাম ম্যানেজার, অনুষ্ঠান পরিচালক পদের বেশির ভাগই কার্যত শূন্য থাকে। পরিচালক ও উপপরিচালক পদগুলোতে এখন প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা আছেন। নিজেদের ‘আখের গোছানো’ ছাড়া বিটিভির কোনো কাজে তারা আসেন না বলেই অনেকের ধারণা।
অনুষ্ঠান পরিচালক এবং জিএম মর্যাদার সাতটি পদ এখন কাদের দখলে আছে, জানা নেই। তবে এসব পদে ওঠার জন্য বয়স ও যোগ্যতা কোনোটাই কর্মচারী থেকে পদোন্নতি পাওয়া লোকদের কখনো হবে বলে মনে হয় না।
বিটিভির প্রকৌশল শাখায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একচেটিয়া আধিপত্য। পদার্থবিদ্যার দু-একজন স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ছাড়া প্রকৌশল শাখায় প্রায় সবাই ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। বিএসএসি প্রকৌশলীদের প্রবেশ বিটিভিতে যেন নিষিদ্ধ। আমার চাকরি জীবনে দু’জন বিএসসি প্রকৌশলী বিটিভিতে চাকরি নিয়েছিলেন। কিন্তু ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অধীনে কাজ করতে হওয়ায় তারা শেষ পর্যন্ত বিটিভি ছেড়ে গেছেন।
বিটিভিতে সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিভাগ হচ্ছে, বার্তা বিভাগ। এই বিভাগে কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়নি। কর্মচারীরা কখনো দাবিও করেননি। কারণ এই বিভাগে চাকরি করতে হলে ইংরেজি ও বাংলা দু’টি ভাষায় সমান দক্ষতা প্রয়োজন। কর্মচারীরা তাই ভুলেও কখনো বিটিভির বার্তা প্রযোজক হওয়ার চেষ্টা করেননি। তবে দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিটিভির বার্তা বিভাগে পদকাঠামো খুবই সঙ্গিন। একজন উপমহাপরিচালক বার্তা, একজন পরিচালক বার্তা, একজন মুখ্য বার্তা সম্পাদক, তিনজন বার্তা সম্পাদক, পাঁচজন নির্বাহী প্রযোজক এবং ১৭ কী ১৮ জন প্রযোজক নিয়ে বার্তা বিভাগ। রিপোর্টারের কোনো পদ নেই। ‘অতিথি প্রযোজক’ নামে প্রায় ৬৬ জন রিপোর্টার এখন বার্তা বিভাগে কর্মরত। ‘অতিথি প্রযোজক’ যেহেতু বিটিভির অর্গানোগ্রামে নেই, সে কারণে তাদের চাকরি একেবারেই অস্থায়ী। যেকোনো দিন তাদের বাদ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু একজন উপমহাপরিচালকের পদের বিপরীতে অনুষ্ঠান শাখায় যেখানে পরিচালকের সমমর্যাদার সাতটি পদ রয়েছে, বার্তা শাখায়ও এর প্রতিফলন দরকার ছিল। পরিচালক ও মুখ্য বার্তা সম্পাদকের পদমর্যাদা একই। দু’টি পরিচালক পদের ফিডার পদে মাত্র তিনটি বার্তা সম্পাদক আবার তিনটি বার্তা সম্পাদকের ফিডার পদে মাত্র তিনজন নির্বাহী প্রযোজক এবং নির্বাহী প্রযোজকের ফিডার পদে অর্থাৎ প্রযোজক বার্তা পদে ১৮টি পদ রয়েছে। ফলে প্রযোজকদের বেশির ভাগেরই একই পদে চাকরির মেয়াদ পূর্ণ করা ছাড়া কোনো গতি থাকবে না। এখনকার টেলিভিশন বিশেষ করে বার্তা বিভাগ পুরোপুরি রিপোর্টিং-নির্ভর, তাই ‘অতিথি প্রযোজক’ নামের, ব্যক্তির পছন্দ অপছন্দের সুযোগ না রেখে পদ সৃজন করে নিয়মিত রিপোর্টার হিসেবে উপযুক্ত পুরুষ-মহিলাদের নিয়োগ করলে বিটিভি অনেক লাভবান হতো।
সরকার বিটিভির বার্তা বিভাগকে প্রেষণে আনা দলান্ধ লোকদের দিয়ে ভারী করে রেখেছে। বিটিভির নিজস্ব লোকদের নেহায়েত যেন দয়া করে চট্টগ্রাম ও নিমকোতে ডাম্প করেছে। অথচ এদের বেশির ভাগই বেতনভাতা নিচ্ছেন বিটিভি তহবিল থেকে। কিন্তু বিটিভি সংবাদের মান উন্নয়নে তারা কোনো অবদান রাখতে পারছেন না। এদের ‘অপরাধ’ এরা ১৯৯১-এর বিএনপি সরকারের আমলে নিয়োগ পেয়েছিলেন। বর্তমান সরকারের আমলে যারা বিভিন্ন ক্যাডার ও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন, পরবর্তী সরকার এসে তাদের সবাইকে কাজ থেকে বিরত রাখলে কিংবা বের করে দিলে সরকার চালানো সম্ভব হবে কি? সরকার আসবে এবং যাবে, সরকারের প্রয়োজনেই শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হবে। তবে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছাড়া বিধিবিধান লঙ্ঘন করে কাউকে নিয়োগ দেয়া হলে সেটা ভিন্ন কথা। অন্য কোনো বিভাগ বা দফতরে আছে কি না আমার জানা নেই; বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে বিটিভির প্রযোজকদের নিয়োগ দেয়া হয় ‘খ’ গ্রেডে। পাঁচ বছর পর অন্য অফিসের কর্মকর্তারা উচ্চতর স্কেলে এবং গ্রেডে পদোন্নতি পেলেও বিটিভির প্রযোজকেরা পদোন্নতি পান ‘ক’ গ্রেডে। এ জন্য বিটিভির বেতন স্কেল ওভাবেই রাখা হয়েছে। সহকারী সচিব হিসেবে যারা নিয়োগ পান, তাদের পদোন্নতি সিনিয়র সহকারী সচিব এবং পরে উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে। কিন্তু বিটিভির ওপরে ওঠার সিঁড়ি সহকারী সচিবদের মতো নয়। তাদের ‘খ’ গ্রেড থেকে যেতে হবে ‘ক’ গ্রেডে, তার পর সিনিয়র প্রডিউসার বা নির্বাহী প্রযোজক, তারপর বার্তা সম্পাদক বা অনুষ্ঠান অধ্যক্ষ। এরপর মুখ্য বার্তা সম্পাদক, পরিচালক বার্তা বা পরিচালক অনুষ্ঠান, তারপর উপমহাপরিচালক এবং মহাপরিচালক। এই সিঁড়িগুলোর বেতনক্রমও সচিবালয়ের মতো নয়। সচিবালয়ের মতো হলে বিটিভির বার্তা সম্পাদক বা অনুষ্ঠান অধ্যক্ষ এবং সমমানের অন্যান্য পদ উপসচিব মর্যাদার হতো। পরিচালকদের মর্যাদা যুগ্ম সচিব এবং উপমহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক পদটি সচিব মর্যাদার হতো। কিন্তু বাস্তবে বিটিভির কর্মকর্তারা কোন পদস্তরের সাথে সমমর্যাদার, তা-ও জানেন না। বিটিভিতে যারা নিয়োগ পান, তারাও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আওতায় অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পান। তাহলে এই প্রকট বৈষম্য কেন? বিটিভির মহাপরিচালক হিসেবে গত ৫০ বছরে ক্যাডার থেকে যেসব কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার। কেউ কেউ আবার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বিটিভির মহাপরিচালকের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ যেমনÑ বাংলাদেশ বেতার, ডিএফপি, মাসকমিউনিকেশন ও পিআইডির প্রধানকে গ্রেড ওয়ান পদ মর্যাদা অর্থাৎ সচিবের মর্যাদা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অথচ বিটিভির মহাপরিচালককে গ্রেড-২ বা অতিরিক্ত সচিবের মর্যাদা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিটিভি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ অবমাননার কারণ কী?
অথচ প্রতিটি সরকার তাদের দলীয় প্রচার-প্রোপাগান্ডার মেশিন হিসেবে সর্বাধিক ব্যবহার করেছে এবং করছে বিটিভিকে। বাংলাদেশ বেতারের শ্রোতার চেয়ে কি বিটিভির দর্শক কম? বাংলাদেশ বেতারের যে পদবিন্যাস বিটিভিতেও তাই। ডিএফপি, পিআইডি, মাসকমিউনিকেশনে পরিচালক ও উপমহাপরিচালক মর্যাদার পদ কি আছে? থাকলে তা কি বিটিভির চেয়ে বেশি? যে বা যারা তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিটিভিকে খাটো করেছেন, তাদের বিষয়টি আরেকবার ভেবে দেখার অনুরোধ করব।
বিটিভিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই এর নিয়োগবিধি পরিবর্তন করতে হবে এবং তা অতি শিগগিরই। না হলে বিটিভি প্রেষণ কর্মকর্তাদের পেষণে পিষ্ট হতে হতে একদিন তার অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। সব বিভাগের পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে শূন্য পদ পূরণ করা হলে সৃজনশীল এবং মেধা ও মননের অধিকারী তরুণ-তরুণীদের জন্য বিটিভির দ্বার চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন বিটিভি সৃজনশীলতার অভাবে স্যাটেলাইট চ্যানেলের সাথে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়ে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বিটিভি।

No comments

Powered by Blogger.