মাউশিতে নিয়োগ বাণিজ্য

দেশে নিয়োগ বাণিজ্যকে বলা যায় সবচেয়ে বড় বাণিজ্য। কারণ এ বাণিজ্যে কোনো ইনভেস্ট নেই, আছে সীমাহীন ইনকাম। পুলিশের কনস্টেবল পদে নতুন লোক নিয়োগ করা হবে- সেখানে সুপারিশ আর তদবিরের স্তূপ। মন্ত্রী, এমপি, সচিব- কেউ বাকি নেই তদবিরে। আর বলাই বাহুল্য, এসব সুপারিশ আর তদবিরের পেছনে থাকে নগদ-নারায়ণের মন্ত্রণা। এমনই ঘটনা ঘটছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি)। সেখানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর প্রায় ২ হাজার পদে নিয়োগের জন্য শুরু হয়েছে নিয়োগ বাণিজ্য। এসব পদে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছিল ২০ মাস আগে। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন নথি জব্দ করেছিল মন্ত্রণালয়। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম খুঁজে পায় এবং অনিয়মের সঙ্গে মাউশির শীর্ষ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি শনাক্ত করে। কিন্তু সেই তদন্ত রিপোর্টসহ এ সংক্রান্ত ফাইলটি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে গায়েব হয়ে যায়। নিয়োগ বাণিজ্যের সুবিধার্থে মাউশিবহির্ভূত একটি অবৈধ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কাজ করছিল। অনিয়মের অভিযোগের কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সে অবৈধ কমিটি ভেঙে দেয়। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় সেই স্থগিত হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠি পেয়ে মাউশির নিয়োগ বাণিজ্যের হোতারা আবার পূর্ণ উদ্যমে তাদের অসমাপ্ত দুর্নীতির কাজ সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়নে নেমে পড়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, একেকটি পদের জন্য ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাতিল উপকমিটিই এখন অলিখিতভাবে অসমাপ্ত কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।
বলা হয়ে থাকে, যারা ঘুষ খায় এবং যারা ঘুষ দেয় তারা উভয়েই গুনাহগার। অর্থাৎ মাউশির নিয়োগ বাণিজ্যে সেই গুনাহ্গারির বাণিজ্যই চলছে। এই বাণিজ্য থেকে ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়েই হয়তো লাভবান হবে; কিন্তু এর মাশুল কড়ায়-গণ্ডায় মেটাতে হবে দেশ ও দেশের অসহায় মানুষদের। আমরা এই ঘুষ সংস্কৃতি বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। মনে রাখা দরকার, এ অপসংস্কৃতির দায়ভার সরকারের ওপরই বর্তায়। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করে সরকার কঠোরভাবে এ দুর্নীতি রুখে দেবে, এটাই কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.