যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে এতিম শিশু ইয়াসিন

পেট্রলবোমা থেকে রক্ষা পেল না ১১ বছর বয়সী শিশু বাস হেলপার ইয়াসিনও। পেট্রলবোমার আঘাতে ঝলসে গেছে তার দেহ। থেঁতলে গেছে দু’হাত, মুখ, বুক-পেটসহ প্রায় সারা শরীর। রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে এ শিশু। ৪৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া শরীরের সমস্ত শক্তি জড়ো করে বলছিল ‘আমি মইরা যাচ্ছি, আমারে বাঁচাও। আমি বাঁচব তো, তোমরা আমার লগে থাক, লগে বইসা থাক। আমারে ছাইরা যাইয়ো না।’ শিশু ইয়াসিনের এ আর্তিতেও কোনো সান্ত্বনা বা জবাব দিতে পারেননি ডাক্তার, নার্সসহ মিডিয়াকর্মীরা। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন সবাই। অপরদিকে আইসিইউতে ভর্তি শিশু শাকিলের শরীরের ৭৬ শতাংশ পুড়ে গেছে। জানা গেছে, তারা দু’জনই একই বাসে হেলপার ও কন্ডাক্টরের কাজ করত। শিশু ইয়াসিন লোকাল বাসে হেলপারের কাজ করত। বুধবার মধ্যরাতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের গাউছিয়া এলাকায় বাসে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয় সে। পুড়ে যায় শরীরের ৪৫ শতাংশ। যে বাসটিতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হয়, সেই বাসটিতেই শিশু ইয়াসিনসহ কন্ডাক্টর শাকিল (১৬) ঘুমিয়ে ছিল। শাকিলের শরীর পুড়ে যায় ৭৬ শতাংশ। দু’জনকেই বৃহস্পতিবার ভোররাতে ঢামেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দু’জনই চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। শাকিলকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রতিদিনের মতো বুধবারও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের একটি বাসে হেলপারের কাজ করেছে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই রুটের গাউছিয়া বরাবর রাস্তার পাশে বাসটি দাঁড় করিয়ে ড্রাইভার চলে যান। পাহারাদার হিসেবে ইয়াসিন ও শাকিলকে রেখে যান। রাত ১টার দিকে দু’জনই বাসটির ভেতর ঘুমিয়ে পড়ে। মধ্যরাতের দিকে পরপর দুটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হয় বাসটিতে। প্রাণ বাঁচাতে দু’জনই নিচে নামতে চাচ্ছিল। ততক্ষণে দু’জনই পুড়ে গেছে। একজনের ৪৫ শতাংশ অপরজনের ৭৬ শতাংশ।
শিশু ইয়াসিনের চাচা সুলতান মিয়া জানান, ইয়াসিনের বয়স যখন ২ বছর তখন তার মা জোসনা বেগম ক্যান্সারে মারা যান। তার বাবা মুকুল মিয়া গত বছরের শবেবরাতের রাতে খুন হন। বেঁচে থাকার জন্যই ইয়াসিন বাসে হেলপারের কাজ করত। রাতে বাসেই থাকত। বললেন, তিনিও অনেক দরিদ্র। দিনমজুরের কাজ করেন। এতিম একটা ছেলের ওপর এমন নৃশংসতা মেনে নেয়া যায় না। তার মৃত্যু হলে ওই মৃত্যুর জন্য দায়ী হবে কে?
আইসিইউতে ভর্তি বাসের কন্ডাক্টর শাকিলের অবস্থা খুবই খারাপ জানিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন, শাকিলের শরীরের সঙ্গে শ্বাসনালিও পুড়ে গেছে। সে চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। শাকিলের বেডের পাশে থাকা দাদি জরুহা বেগম জানান, শাকিলের বয়স যখন ১ বছর তখন তার মা শিল্পী বেগম তাকে ফেলে অন্যত্র চলে যায়। মাহারা শাকিলকে তিনিই বড় করেছেন। ৫ বছর ধরে বাসে কন্ডাক্টরের কাজ করে। নিজে খেয়ে-পরে চলার পাশাপাশি তাকেও আর্থিক সহায়তা করতেন। তার বাবা জসিম সিকদারও তার (শাকিল) খোঁজখবর নেয় না।
এদিকে শিশু ইয়াসিন ও শাকিলসহ বর্তমানে ঢামেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে ৪৯ জন ভর্তি রয়েছেন। যাদের মধ্যে আইসিইউতে চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় ভর্তি আছে ৭ জন। যাদের শরীর ৫৬ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ পোড়া রয়েছে। একই সঙ্গে তাদের শ্বাসনালিও পুড়ে গেছে। বার্ন ইউনিটের প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন বিভাগপ্রধান প্রফেসর ডা. সাজ্জাদ খোন্দকার জানান, শিশু ইয়াসিন ও শাকিলের অবস্থা খুবই খারাপ।

No comments

Powered by Blogger.