ব্যাংক-বীমায় অস্থিরতার চাপ

আড়ষ্ট বুদ্ধি আর সীমাবদ্ধ জ্ঞান শুধু মুক্তিকেই অসম্ভব করে তোলে না, বরং তা জীবনকে করে বিপন্ন আর সেই বিপন্ন জনপদে দেশের শ্রমজীবী, পেশাজীবী, মেহনতি মানুষ উৎকণ্ঠার জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। রাজনীতি মানুষের জীবনকে দেয় দিশা আর ভুল রাজনীতি তাকে করে দিশাহারা। সেই দিশাহারা রাজনীতির শিকার হয়ে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ ক্ষতিপূরণ চেয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখার পথ খুঁজছে। কিন্তু এটা কোনো স্থায়ী সমাধানের পথ নয়। এ সত্য জানেন বলেই ব্যবসায়ীদের এক নেতা বলেছেন, আমরা আর ক্ষতিপূরণ চাই না। আমরা চাই ব্যবসা করতে। দয়া করে আমাদের সে পরিবেশ দিন।
দেশে বিদ্যমান ভুল রাজনীতির কারণে সবকিছু ভেঙে পড়ছে। এই ভাঙন চোখে দেখা যায় না। নদীভাঙনের শিকার যে মানুষ কাজ করে প্রাণ বাঁচাতে শহরে এসেছিল, জীবন বাঁচাতে সেই মানুষই এখন কাজের অভাবে রাজধানী ছেড়ে আবার গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। দেশের ব্যবসা গুটিয়ে ব্যবসায়ীরা ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ে ব্যবসা শুরু করছেন। যারা তা পারছেন না, সেই সিংহভাগ ব্যবসায়ী ব্যবসার ক্ষতিপূরণের জন্য দেন দরবারে বসার উদ্দেশ্যে ক্ষতির হিসাবের তালিকা করছেন। কারণ একটাই- দেশে বিদ্যমান অস্বাভাবিক রাজনীতি। দেশব্যাপী চলতে থাকা হরতাল-অবরোধের কারণে অর্থনীতিতে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ২ হাজার ৪শ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা ক্ষতি মোকাবেলায় ঋণের সুদ মওকুফ, ঋণ শোধের সময় বাড়ানো, কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করা, সুদের হার কমানো, স্বল্পমেয়াদি ঋণকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর করার সুপারিশ প্রণয়ন করেছেন। এসব সুপারিশ নিয়ে তারা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আগামী ২ মার্চ বৈঠক করবেন। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সাবেক গভর্নর বলেছেন প্রণিধানযোগ্য কথা। তিনি বলেছেন, হরতাল-অবরোধের কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হচ্ছে সেগুলো নীতি সহায়তা দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়। এগুলোর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান। অর্থাৎ সত্য এটাই যে, দেশের রাজনীতিকে জুতা আবিষ্কারের কর্মযজ্ঞ না বানিয়ে স্বাভাবিক এবং সুস্থ রাজনীতি করে তোলার কোনো বিকল্প নেই। সব পক্ষের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই, অস্বাভাবিক রাজনীতি ত্যাগ করে স্বাভাবিক রাজনীতির চর্চা করুন। দেশ, ব্যবসা ও মানুষ বাঁচান।

No comments

Powered by Blogger.