সর্বাধিক ‘ক্রসফায়ার’ রাজশাহী যশোর মিরপুর ও যাত্রাবাড়ীতে- ২৭ দিনে ৩০ জন নিহত by আবু সালেহ আকন

২৭ দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশ-র‌্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘গাড়িচাপায়’ ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই রাজনৈতিক নেতাকর্মী। এর মধ্যে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় চারজন, যশোরে তিনজন, কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় তিনজন, রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় তিনজন, যাত্রাবাড়ীতে তিনজন ও রামপুরায় দুইজন নিহত হয়েছেন। রাজধানীর মিরপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় কেউ গ্রেফতার হলেই তাদের স্বজনেরা এখন উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রাসেল নামের এক যুবক নিহত হন। ৮ জানুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন জসিম উদ্দিন নামের এক শিবির নেতা। ওই দিন কুমিল্লায় নিহত হন স্বপন মিয়া নামের এক বিএনপি নেতা। যশোরে ৮ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের হাতে নিহত হয়েছেন রাজু নামের এক যুবক।
৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন কাটাখালি বাজারে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য গবেষণা সম্পাদক শাহাবুদ্দিন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এই ঘটনায় আহত হন আরো দুই শিবির নেতা। শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ধরে নিয়ে গুলি করা হয়েছে। তবে মতিহার থানার ওসি বলেছেন, তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাহাব উদ্দিন পাটওয়ারী (২৪) পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। নিহতের মা ছাকিনা বেগম বলেছেন, তার ছেলেকে গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার পরে সাদাপোশাকধারী পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। সকালে হাসপাতালে তার লাশ পাওয়া যায়।
ওই দিন যশোরে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন সাতক্ষীরার জামায়াত কর্মী শহিদুল ইসলাম (৫০)। শহিদুলের পরিবার থেকে বলা হয়েছে ধরে নিয়ে শহিদুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অজ্ঞাত (২৩) নামের এক যুবক নিহত হন। ৪ ফেব্রুয়ারি ভাষানটেক থানা এলাকা থেকে আল আমিন (৩০) নামের এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। ৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাখাওয়াত হোসেন রাহাত ও মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ নামের দুই যুবক নিহত হন।
৩ ফেব্রুয়ারি যশোরের মনিরামপুর থেকে যুবদল কর্মী লিটনকে বোমা হামলাকারী সন্দেহে আটক করা হয়। পরে পুলিশ হেফাজতে ‘ট্রাকচাপায়’ তার মৃত্যু হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি মনিরামপুরের যুবদল কর্মী ইউসুফকে বোমা হামলাকারী সন্দেহে পুলিশ আটক করে। পরে পুলিশ হেফাজতে ‘ট্রাকচাপায়’ তার মৃত্যু হয়। ১ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সাইদুল ইসলাম নামের এক জামায়াত নেতা পুলিশের গুলিতে আহত হন। পরের দিন তিনি মারা যান। ১ ফেব্রুয়ারি ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকার শাহআলী থানা সভাপতি এমদাদ উল্লাহ পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়। ২৯ জানুয়ারি সদরঘাটের লঞ্চ থেকে সাদা পোশাকের লোকজন নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ছাত্রদল নেতা আরিফুল ইসলাম মুকুলকে তুলে নিয়ে যায়। পর দিন তার লাশ পাওয়া যায় রূপনগর এলাকায়। গত ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শিবিরকর্মী সাকিবুল ইসলামকে পুলিশ আটক করে। পরে পুলিশি নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৯ জানুয়ারি তার মৃত্যু হন। ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী মহানগর বিএনপি নেতা আইনুর রহমান মুক্তাকে পুলিশ আটক করে নির্যাতন করায় তার মৃত্যু হয় বলে দলীয় সূত্র জানায়। ২৭ জানুয়ারি সাতক্ষীরার তালায় রফিকুল ইসলাম নামের একজনকে ডাকাত সন্দেহে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে ক্রসফায়ারে তার মৃত্যু হয়। ২৭ জানুয়ারি রাজশাহীর বিনোদপুরে জামায়াত নেতা অধ্যাপক নুরুল ইসলাম শাহীনকে আটকের পর ‘ক্রসফায়ারে’ তার মৃত্যু হয়। ২৭ জানুয়ারি ইসলামী ছাত্রশিবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিটি কলেজ শাখা শিবিরের সভাপতি আসাদুল্লাহ র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার পরে র‌্যাব হেফাজতে থাকা অবস্থায় ট্রাকচাপায় নিহত হন। ঝিনাইদহের শৈলকুপার কুসুমবাড়ি গ্রামের হাশেম আলী বিশ্বাসের ছেলে সুলতান আলী বিশ্বাস ৩৫ দিন নিখোঁজ থাকার পরে ২৬ জানুয়ারি রামপুরার বনশ্রী এলাকায় র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন। পেশায় নির্মাণশ্রমিক ছিলেন বলে জানা গেছে। ওই দিনই বনশ্রীতে ক্রসফায়ারে আবুল কালাম নামের আরো একজন নিহত হন। তার বাড়ি ভোলা সদরে। বাবা মৃত খোরশেদ আলম। পেশায় তিনি গাড়িচালক ছিলেন বলে জানা যায়। লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা জিসান গত ২২ জানুয়ারি দাউদকান্দি এলাকায় র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন।
গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর খিলগাঁও জোড়পুকুর পাড় থেকে উদ্ধার করা হয় খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনির (৩০) লাশ। নিহতের বাবা ইয়াকুব আলী জানান, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মহানগর পুলিশের দাবি জনির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারের পর তাকে নিয়ে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধারে বের হলে খিলগাঁও জোড়পুকুর পাড় এলাকায় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পাল্টা গুলি চালালে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গত সোমবার ভোর রাতে নিহত হয়েছেন নড়াইল পৌরসভা ১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ইমরুল কায়েস (৩৪)। তিনি ওই ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত থকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
১৭ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পূর্ব টিমের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইমরুল নিহত হন বলে জানা যায়। ইমরুলের স্ত্রী জান্নাতুল বলেছেন, তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, তার স্বামী জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি ছিলেন। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাকে হত্যা করা হয়। তার স্বামী নির্দোষ। তবে পুলিশের দাবি কায়েসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে।
১৯ জানুয়ারি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সভাপতি মোহাম্মদ এসলাম পুলিশ হেফাজতে ট্রাকচাপায় নিহত হন।
গত ১৬ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট এলাকায় র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন ছাত্রদল নেতা মতিউর রহমান (৩০)। ঘটনার পর র‌্যাব-৫ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষ অভিযানে মতিউরসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে নাশকতার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে তাকে নিয়ে র‌্যাব অভিযানে বের হলে মতিউরের সহযোগীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির একপর্যায়ে মতিউর গুলিবিদ্ধ হয়। তবে মতিউরের পরিবারের দাবি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.