অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাজিমাত

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করলেন আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আপের ঝাড়ুতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কংগ্রেস। যে বিজেপি নরেন্দ্র মোদির ক্যারিশমায় ভর করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মাত্র নয় মাস আগে ভারতের মসনদে বসেছে তারাও দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আপ-এর জনপ্রিয়তায় ঝড়ের মতো উড়ে গিয়েছে। বিজেপি পেয়েছে মাত্র তিনটি আসন। ৭০ সদস্যের দিল্লি বিধানসভার বাকি ৬৭টি আসন পেয়েছে আপ। জনমত সমীক্ষা ও বুথ ফেরত সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণিত করে কেজরিওয়াল গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। ভারতের ইতিহাসে এমন বিজয় আগে কোন রাজ্যে হয়নি। বুথ ফেরত সমীক্ষা বলেছিল, আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ  কেজরিওয়াল সরকার গঠন করবেন। কিন্তু তার পক্ষে এমন ঝড় উঠবে তা কিন্তু কেউ ভাবতে পারেননি। পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপি’র মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা কিরণ বেদী। অজয় মাকেনের নেতৃত্বে রাজধানীর নির্বাচনে কংগ্রেস একটি আসনও না পাওয়ায় পরাজয়ের দায় নিজের কাঁধে নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মাকেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই অভূতপূর্ব বিজয়ে কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক বছর আগে ঠিক এমনই এক ফেব্রুয়ারির দিনে দিল্লির মসনদ  ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি সেই বিদায়ের বর্ষপূর্তি। তার ঠিক চারদিন আগে দিল্লির মানুষ কেজরিওয়ালের হাতেই তুলে দিলেন মসনদ। দিল্লিতে আপের দিকে যে মানুষের সমর্থনের ঢল নেমেছে তা আগে থেকে বোঝা গেলেও বিজেপি’র নেতারা বুঝতে চাননি তা। আর তাই কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে তারা নানা অপবাদ দিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভোট ফলাফলে দেখা গেছে, আম আদমি পার্টির ভোট গত এক বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে ছিল ২৯ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৫২ শতাংশ। অবশ্য লোকসভা নির্বাচনে তা  ছিল ৩৩ শতাংশ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,  ধারাবাহিকভাবেই ভোট  বেড়েছে কেজরিওয়ালের। তবে এই ভোট বৃদ্ধির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে কংগ্রেসের অবক্ষয়কে। কংগ্রেসের ভোট (২৫ শতাংশ থেকে কমে এবার হয়েছে ৯ শতাংশ) প্রায় সবটাই আপের দিকে যাওয়ায় কেজরিওয়ালের শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। পাশাপাশি মুসলিম ভোটও এবার কংগ্রেস ছেড়ে আপের দিকে গিয়েছে। সেই সঙ্গে এবারের দিল্লির নির্বাচনে কেজরিওয়াল বিজেপি বিরোধী ভোটকে কোন আনুষ্ঠনিক  জোট ছাড়াই এককাট্টা করতে সক্ষম হয়েছেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, নরেন্দ্র মোদি সরকারের কাজকর্ম নিয়ে মানুষের যে বিপুল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল তা সরকারের কাজকর্ম তেমনভাবে পূরণ করতে পারেনি।  ফলে এবারের ভোটে মানুষ মোদির বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছেন। অন্যদিকে কেজরিওয়ালের কথায় বিশ্বাস রেখেছেন। কেজরিওয়াল আম আদমির জন্য উন্নয়ন করে দেখাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিরণ বেদিকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করায় দিল্লি বিজেপি’র অভ্যন্তরীণ কলহ ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র হয়েছিল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কেজরিওয়াল মানুষের কাছে বার্তা দিয়েছেন, তিনি হলেন গরিবের বন্ধু, সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। প্রতিপক্ষকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার রাজনীতিও তিনি পরিহার করেছিলেন। গত বার যে ভুলগুলো তিনি করেছিলেন এবার তা এড়িয়ে গেছেন। ফলে ধীরে ধীরে  কেজরিওয়াল শুধু নিম্নবর্গ নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিলেন। আর সেটাই সকলের অজান্তে ভোটবাক্সে আপের পক্ষে ঝড় তুলেছে।
দিল্লির রায়কে টার্নিং পয়েন্ট বললেন মমতা
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জয়কে ভারতের রাজনীতিতে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল দিল্লির ফল প্রকাশের পর থেকে মমতা একের পর এক টুইট করেন। দিল্লিতে ভোটের ঠিক আগে সবাইকে চমকে দিয়ে আম আদমি পার্টিকে ভোট দেয়ার জন্য সকলকে আবেদন জানিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।  আর ভোটের ফল বের হওয়ার পর একের পর এক টুইট করেছেন মমতা। প্রথমে টুইটে লিখেছেন দিল্লি ভোটে আপ-এর বড় জয়ের জন্য অভিনন্দন। সেই সঙ্গে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে শুভেচ্ছাও জানান। কিছুক্ষণ পরে দ্বিতীয় টুইটে লেখেন দিল্লির ভোট দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে টার্নিং পয়েন্ট। সারদা কেলেঙ্কারিতে একের পর এক তার দলের নেতাকে জড়ানোর কথা মনে করিয়ে লিখেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কোনও জায়গা গণতন্ত্রে নেই। দেশের জন্য এই পরিবর্তন দরকার ছিল।
দিল্লিতে ঝাঁটা এখন মহামূল্যবান
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এখন ঝাঁটা মহামূল্যবান হয়ে উঠেছে। গতকাল আপ-এর জয় ঘোষণার পর থেকে দিল্লিতে ঝাঁটার চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। ঝাঁটা প্রতীক চিহ্নের উপর ভর করে দিল্লিতে এক কথায় বিরোধীদের ‘ঝেঁটিয়ে বিদায়’ করেছে আম আদমি পার্টি। আপ-এর জয়জয়কারের দিনে আপ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনী প্রতীক হাতে বিজয় উৎসবের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই দিল্লিতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঝাঁটার দাম। সাধারণভাবে যে ঝাঁটা বিক্রি হতো খুব বেশি হলে ৩০ থেকে ৫০ রুপিতে, গতকাল সেই ঝাঁটার দামই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ রুপি। রাজধানীতে এক দিনেই ঝাঁটার চাহিদা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে আপ সমর্থকরা অভিযোগ করেছে দোকানে দোকানে ঘুরে বেশি টাকা খসাতে রাজি থাকলেও আর পাওয়া যাচ্ছে না ঝাঁটা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বুথ ফেরত সমীক্ষায় আপ-এর জয়ের গন্ধ পেয়ে সোমবার থেকেই বিক্রি হয়েছে ঝাঁটা। এখন তাদের ভাঁড়ার শূন্য। তাই কিনতে চেয়েও যোগানের অভাবে দোকান থেকে ঝাঁটা ছাড়াই ফিরতে হচ্ছে বহু মানুষকে। তবে দাম বাড়লেও এবং যোগান কমলেও, হাল ছাড়তে নারাজ কেজরিওয়ালের দলের কর্মী-সমর্থকরা। রাস্তায় রাস্তায় এবং পার্টি হেডকোয়ার্টারের সামনে উৎসবে শামিল হতে এখন যেনতেন প্রকারে ঝাঁটা জোগাড়ে ব্যস্ত তারা।

No comments

Powered by Blogger.