মাদক পাচার দিনমজুর থেকে কোটিপতি ফরিদ by মো. রফিকুল ইসলাম

ভৈরবে একসময়ে বাবার সঙ্গে যে ছেলেটি দিনমজুরের কাজ করতো। সেই ছেলেটি এখন কোটিপতি বনে গেছে। আলিশান ৫ তলা বাড়ি, ৫/৬টি দামি গাড়ি, মুরগির ফার্ম, ভৈরব ও ঢাকায় বাড়ি- এত সব সম্পদের মালিক হয়েও তার সুখ নেই। পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তাকে সবসময় নজরদারি করে রাখে। তার বিরুদ্ধে ভৈরব, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে মাদক পাচারের মামলা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৈরব পৌর এলাকার দড়ি চণ্ডিবের গ্রামের মনা মিয়ার ছেলে ফরিদ ১৫/১৬ বছর ধরে সীমান্ত এলাকা আখাউড়া থেকে ভারতীয় ফেনসিডিল এনে ভৈরব সহ রাজধানী ঢাকায় পাচার করতো। ফেনসিডিল পাচারে তার রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। নিজস্ব একাধিক মাইক্রোবাস নিয়ে পাহারা দিয়ে তার মাদক চালান বিনা বাধায় চলে যায় রাজধানীতে। মাদক ব্যবসায়ী ফরিদ এতই শক্তিশালী যে, পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, রীতিমতো পুলিশরাই ফরিদ ও তার সহযোগীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ফরিদ র‌্যাব সদস্যদের হাতে ধরা পড়লেও তাকে আটক রাখা যায়নি। গাড়ির গ্লাস ভেঙে র‌্যাব সদস্যদের কাছ থেকেও পালিয়ে যায় সে।  ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা ফরিদকে তার ১২ সহযোগী সহ গ্রেপ্তার করে। র‌্যাব তাদের কাছ থেকে ২টি মাইক্রোবাস, ১৩ শ’ বোতল ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজা আটক করে। কিন্তু র‌্যাব সদস্যের চোখ ফাঁকি দিয়ে গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফরিদ পালিয়ে যায়। পালিয়ে গেলেও তার ব্যবসা একদিনের জন্য বন্ধ থাকেনি। সে দীর্ঘ দিন ধরে মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছে। এলাকায় তার নাম  ফেন্সি সম্রাট ফরিদ।
এলাকাবাসী জানায়, ১০/১২ বছর আগে ফরিদের বাবা যেখানে দিনমজুরের কাজ করতো। ফরিদ যোগালির কাজ করতো সে ফরিদ এখন কোটিপতি। এলাকার লোকজন জানায়, মাদক ব্যবসা করে এখন সে বিত্তবৈভের মালিক হয়েছে। ফরিদ ও তার বাহিনী সীমান্ত এলাকা আখাউড়া থেকে মাইক্রোযোগে ফেনসিডিল রাজধানীতে পাচার করে। তার অন্যতম সহযোগী ভৈরব গাছতলা ঘাটের হাসিম ঘড়ি মেকারের ছেলে জাকির ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকায় সেই ফেনসিডিল গ্রহণ করে তা রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে সরবরাহ করে। ফরিদ পুলিশ হেফাজতে গেলেও এলাকায় কেউ মুখ খুলে না। কারণ হিসেবে জানা যায়, সে মাদক ব্যবসা করে এলাকার কয়েক জন প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায়। তার কোন দল নেই, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সে দলের কিছু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে চলে তার ব্যবসা।
মাদক সম্রাট ফরিদ সামান্য যোগালি থেকে ২৫/৩০ কোটি টাকার মালিক হলেও বন্ধ হয়নি তার মাদক ব্যবসা। মাদক ব্যবসার নাম মুছতে এলাকায় তার রয়েছে বিশাল পোল্ট্রিখামার। ভৈরবে একাধিক বাড়িসহ রাজধানীতে ৩/৪টি বাড়ি, চকবাজারে ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিশাল বিত্তবৈভের মালিক হওয়ায় তার অর্থের কাছে রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ এলাকার প্রভাবশালী মহল ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ম্যানেজ হয়ে যায়। ফলে বন্ধ হয় না তার মাদক ব্যবসা। এব্যাপারে ফরিদের বক্তব্য চাওয়া হলে তার আত্মীয়স্বজন জানান, ফরিদ একটি হত্যা মামলায় পলাতক রয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তবে ফরিদ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এ কথা স্বীকার করেন তারা। ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি বদরুল আলম তালুকদার বলেন, ফরিদ এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে মাদক, হত্যা ও নাশকতার অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.