অশান্ত দেশ- মানবসৃষ্ট দুর্যোগ রুখে দাঁড়ান

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট তাদের টানা অবরোধের মধ্যেই ৭২ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচির মেয়াদ আরও ৪৮ ঘণ্টা বৃদ্ধি করেছে। আগের সপ্তাহেও এমনটিই করা হয়েছিল_ প্রথমে রবি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত হরতাল আহ্বান এবং পরে উপযুক্ত কোনো কারণ ব্যতিরেকেই সপ্তাহের পরের দুটি দিনকে হরতালের আওতায় নিয়ে আসে। এই কর্মসূচি সফল করার জন্যও 'আন্দোলনকারীরা' জনগণের ওপর তো নয়ই, এমনকি তাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপরেও নির্ভর করবে না। তাদের ভরসা নির্বিচারে পেট্রোল বোমার হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা কিংবা নিদারুণ যন্ত্রণাদগ্ধ জীবনের পথে ঠেলে দেওয়া। অর্থনীতিরও মারাত্মক ক্ষতি করতে চাইছে তারা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর হিসাবে বলা হয়েছে, প্রথম ৩০ দিনের হরতাল-অবরোধে অন্তত ৭৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে অর্থনীতির। বাংলাদেশকে অভিহিত করা হয় ঝড়-বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এ ধরনের দুর্যোগের সঙ্গে মানিয়ে চলতে শিখেছে দেশবাসী। কিন্তু এখন হরতাল-অবরোধের নামে যা চলছে, সেটাকে আমরা বলতে পারি মানুষের সৃষ্ট দুর্যোগ। সোমবার ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মানবসৃষ্ট' এ দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো অমানবিক কাজ যারা করছে তারা মানবতার শত্রু। আমরা মনে করি, দেশবাসীকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে হলে অবিলম্বে দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সক্রিয় হতে হবে। দেশের স্বার্থ সবার ওপরে। এ কেমন আন্দোলন যা অর্থনীতিকে ধ্বংস করে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে? এ পথ ছাড়তেই হবে। এটা ঠিক যে, জনগণ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতোই 'মানবসৃষ্ট দুর্যোগ' অনেক ক্ষেত্রে কাটিয়ে ওঠার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারীদের মোকাবেলায় দেশব্যাপী সক্রিয় রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তারা জনগণের কাছে সহায়তা চেয়েছে এবং তাতে ভালো সাড়া মিলছে। বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা জনগণের এ মনোভাব উপলব্ধি করতেই হবে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করছি। বিএনপি সভা-সমাবেশের অধিকার দাবি করছে এবং সেটা যৌক্তিক। সভা-সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হলে তাতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনকে জঙ্গিবাদী অপশক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে সেটা স্পষ্ট, যা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ সমর্থন করতে পারে না। ব্রাসেলসভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ সোমবার এক বিবৃতিতে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে_ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে জঙ্গি শক্তি সুবিধা নিতে সক্রিয় হতে পারে। তারা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে চায়। এ বিষয়ে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে সচেতন থাকতে হবে। বিভিন্ন মহল থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি, এজন্য চাই উপযুক্ত পরিবেশ। সন্ত্রাস-বোমাবাজি বন্ধ করা হলেই কেবল এ ধরনের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হতে পারে। বাস-ট্রাক-লঞ্চ-ট্রেনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে কোনো আন্দোলন সফল করা যায় না। এটা স্রেফ নাশকতা, যা দমন করতে সরকারের কাছে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া বিকল্প থাকে না। এতে ব্যর্থ হলে সরকার দেশ পরিচালনার অধিকার হারায়। আমরা বারবার বলছি, আলোচনার পথে যে কোনো জটিল সমস্যারও সমাধান হওয়া সম্ভব। এজন্য সব পক্ষের আন্তরিকতা চাই, সদিচ্ছা চাই। তবে বর্তমান সময়ে এর দায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বের ওপরই বর্তাবে। তারাই পারেন মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় আলোচনার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে।

No comments

Powered by Blogger.