পশু চিকিৎসক ও অবহেলিত চিকিৎসা শাস্ত্র! by মোছা. সালমা ছেতারা

আমরা সবাই জানি, আমাদের বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের পূর্ববর্তী ফোর্থ জেনারেশন বা পরদাদারা মূলত কৃষক ছিলেন। এ নিয়ে আমরা আমাদের অতীত স্বয়ংসম্পূর্ণতায় রীতিমতো গর্ববোধ করতে পারি। সে সূত্রে এখনও এ দেশের মানুষ সুখীচিত্র সংজ্ঞায়িত করে এই বলে যে, গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ, গোয়ালভরা গরু_ এই হলেই তো 'সোনার বাংলা' আর কী চাই? আবাদ কৃষির সঙ্গে যে পশুসম্পদ ওতপ্রোতভাবে জড়িত এ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও এখন ট্রাক্টরের কল্যাণে জোয়াল কাঁধের আবাল বলদগুলো সব অসহায় 'জনহেনরি' হয়ে পড়েছে। আর দেশি গাভীগুলোকে পুষ্টিহীনতায় রেখে ফ্রিজিয়ানা অস্ট্রেলিয়ান গাভীকে খাইয়ে খাইয়ে পানির মতো মণকে মণ দুধ উৎপাদন করে বাণিজ্য করি। আমরা ধান হারিয়েছি, সুস্বাদু মাছ হারিয়েছি, হয়তো পশু চিকিৎসকের অভাবে পশুসম্পদও হারাব। কারণ এই পশুসম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও স্বাস্থ্যরক্ষা ব্যবস্থা যাদের হাতে তারা হলেন ভিভিএম, ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন অর্থাৎ পশু চিকিৎসক। আগে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগ ছিল 'পশু চিকিৎসা বিজ্ঞান' নামে। এখন তো রীতিমতো পূর্ণাঙ্গ ভেটেরিনারি ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চিটাগাং-ঢাকা ও সিলেটের টিলাগড় ভেটেরিনারি ইউনিভার্সিটি অন্যতম। প্রতি বছর এ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বহুসংখ্যক পশু ডাক্তার অত্যন্ত কৃতকার্যতার সঙ্গে বের হয়ে থাকেন। দুঃখজনক হলেও বলতেই হয়, পশুসম্পদের মতোই এই শাস্ত্রবিদরাও যারপরনাই অবহেলিত। ২০১০ সালের জরিপের হিসাবে গরুর সংখ্যা দুই কোটি ৩০ লাখ। ছাগল দুই কোটি ২৫ লাখ। মহিষ ১৩ লাখ ও ভেড়া রয়েছে ৩০ লাখ। এই পরিমাণ পশুসম্পদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রতিটি উপজেলায় মাত্র একজন করে ভেটেরিনিয়ান আছেন। তারপর ২০১৪ পর্যন্ত এ জরিপ আপডেট হয়নি। এখন কেউ জানতে চাইলে মোগল সম্রাট আকবরের রাজসভার মোল্লা দোপেয়াজার মতো বলতে হবে_ জাঁহাপনা, ৯ হাজার ৯৯৯টি কাক এ শহরে আছে। যদি এর চেয়ে বেশি হয় তাহলে অন্য শহর থেকে এখানে বেড়াতে এসেছে। আর যদি কম হয় তাহলে বুঝতে হবে অন্য শহরে বেড়াতে গেছে। পশুসম্পদ জরিপের এ অবস্থায় পশু ডাক্তারদের অবস্থা দেখা যাক। দেশের প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে উপজেলা সেক্টর পর্যন্তই পশু ডাক্তারের পদ আছে; কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, উল্লেখযোগ্য হারে নিয়োগ নেই! এ তো গেল সরকারি খাতের কথা, বেসরকারি কোম্পানিগুলোতে যেমন আইসিডিডিআরবি, হেইপার, অভয়ারণ্য, এসিআই বা চিড়িয়াখানাতে ডিভিএম নিয়োগ একে তো অপ্রতুল, তার ওপর সম্মানজনক কোনো অফিসরুমও বরাদ্দ থাকে না। এটি একটি সম্মানজনক পেশার যারপরনাই অবমাননা। এ পরিস্থিতি থেকে ডিভিএমদের এবং সে সঙ্গে পশু চিকিৎসা শাস্ত্রকে উচ্চ পর্যায়ের সম্মানে সম্মানিত করা উচিত দেশের সম্মান ও পশুসম্পদের সমৃদ্ধির জন্যই। আশা করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী অন্য প্রতিটি সেক্টরের উন্নয়ন চিন্তার মাঝে ডেইরি মৎস্য পোলট্রি খামার ও তার স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যাপারে সযত্ন ভাবনা ও আন্তরিক দৃষ্টি প্রদান করবেন।

No comments

Powered by Blogger.