বিএনপির ভাগ্যে দিল্লিকা লাড্ডুও জুটল না by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

পৃথিবীটা ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। যার ফলে ইউরোপ বা আমেরিকায় যখন পরমাণু বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হতো, তখন তার বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ত সারাবিশ্বে। মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হতো। ফলমূল, শস্য, এমনকি গরুর দুধেও সেই তেজস্ক্রিয়ার বিষ ছড়িয়ে পড়ত। পৃথিবী ছোট হয়ে যাওয়ার দরুন এক দেশের রাজনীতির প্রভাবও শুধু একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না, দেশটি শক্তিশালী হলে তার রাজনীতির প্রভাব তেজস্ক্রিয়ার মতো সহজেই কাছে-দূরের দেশগুলোকেও প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত। আবার বড় দেশও। সুতরাং এই বিশ্বায়নের যুগে ভারতের রাজনীতির প্রভাব ছোট প্রতিবেশী বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশেও বর্তাবে, এটা স্বাভাবিক। তবে পরমাণু তেজস্ক্রিয়ার মতো এই প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া ক্ষতিকর না হলেই বাঁচোয়া। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মিত্র ভারত। সুতরাং ধরে নেওয়া গিয়েছিল, দুই দেশের মধ্যে নদীর পানি, স্থল সীমান্ত, ছিটমহল ও সীমান্ত বাণিজ্য নিয়ে নানা দ্বিপক্ষীয় সমস্যা থাকা সত্ত্বেও দিলি্ল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান গ্রহণ করবে না। এই আশাটায় বড় রকমের চিড় ধরানো হয়েছিল ভারতের গত সাধারণ নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির বিশাল জয়লাভের সম্ভাবনার মুহূর্তে। প্রচারণাটি চালিয়েছিল বাংলাদেশের বিএনপি ও জামায়াত চক্র। বিজেপি একটি সাম্প্রদায়িক দল। সুতরাং তারা ভারতে ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক হাসিনা সরকারের এবং কংগ্রেস দলের ট্রাডিশনাল মিত্র আওয়ামী লীগের প্রতি মিত্রতার হাত বাড়াবে না, বরং বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে_ এই প্রচারণায় বিএনপি বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস মুখর করে তুলেছিল। নরেন্দ্র মোদিকে অযাচিতভাবে অভিনন্দনবার্তা পাঠানো, বিজেপির নির্বাচন-জয়ে মিষ্টান্ন বিতরণ ইত্যাদি কাজ তারা করেছে, যা পরে তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি তার পূর্ববর্তী বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন এবং ক্ষমতায় বসে এমন কিছু করতে চাননি, যা বিজেপি সরকার সম্পর্কে বিশ্বের সাধারণ মানুষের ধারণাকে মলিন করে ফেলবে এবং বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলো শঙ্কিত হতে পারে। বাংলাদেশের মন থেকে এই শঙ্কা দূর করার জন্য ঢাকার হাসিনা সরকারের দিকে প্রথমেই মৈত্রীর হাত বাড়িয়েছেন মোদি। যদিও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের যে প্রতিশ্রুতি মোদি দিয়েছিলেন, সে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন এখনও হয়নি; কিন্তু হাসিনা সরকারের প্রতি তার সরকারের মৈত্রীর নীতি পরিবর্তিত হয়েছে_ এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই।
তথাপি দিলি্লতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর 'গভীর অন্তরঙ্গতার মধ্যে অনুষ্ঠিত' বৈঠক সম্পর্কে বিএনপির আশার দামামা আবার বেজে উঠেছিল। জামায়াতের সঙ্গে জোট পাকিয়ে দেশে আবার মানুষ পুড়িয়ে মারার সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা সফল না হওয়ায় বিএনপি আবার আশায় বুক বেঁধেছিল, মোদি-ওবামা বৈঠকে বাংলাদেশ সম্পর্কে আলোচনা হবে এবং সেই আলোচনার সিদ্ধান্ত হাসিনা সরকারের অনুকূলে যাবে না। অর্থাৎ নিজেদের শক্তিতে ক্ষমতায় যেতে না পেরে বিএনপি আবার বিদেশি শক্তির সাহায্যপ্রার্থী। ঢাকার প্রথম আলো পত্রিকার ভাষ্যমতে, 'বিএনপি অতীতের মতোই বিদেশের দিকে তাকিয়ে আছে' (জানুয়ারি ২৪, ২০১৫)।
দিলি্লতে মোদি-ওবামা বৈঠক শুরু হওয়ার আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান তো বলেই ফেলেছেন, 'এই বৈঠকে বাংলাদেশ সম্পর্কে আলোচনা হবে এবং দুই নেতা যদি বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একমত হন, তাহলে বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।' মাহবুবুর রহমানের অনুক্ত আশাটি ছিল দিলি্ল বৈঠকের সিদ্ধান্ত হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যাবে। সম্ভবত এমন একটি আশা থেকেই বিএনপি নেত্রীর পুত্র কোকোর আকস্মিক মৃত্যু এবং তাদের মানুষ পুড়িয়ে মারার আন্দোলন সম্পর্কে জনমনে ধিক্কার দেখা দেওয়া সত্ত্বেও এই অবরোধ-হরতালের কর্মসূচি বাতিল বা স্থগিত না করে দলটি ঘাপটি মেরে আছে। তাদের হয়তো মনের গভীরে আশা, এই সন্ত্রাস চালিয়ে গেলেই ওবামা ও মোদি বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার অজুহাতে হাসিনা সরকারের ওপর জোরালো চাপ সৃষ্টি করবেন; যার ফলে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম হবে।
কথায় বলে, 'ধন্য আশা কুহকিনী'। মোদি-ওবামা দিলি্ল বৈঠক সম্পর্কে বিএনপির মনের গোপন আশা সফল হয়নি এবং এ সম্পর্কিত তাদের প্রচারণাও সত্য প্রমাণিত হয়নি। বাংলাদেশ সম্পর্কে মোদি ও ওবামা কানে কানে কথা বলে থাকতে পারেন, কিন্তু প্রকাশ্যে কোনো আলোচনা হওয়ার কথা নেই এবং প্রকাশিত যুক্ত বিবৃতিতেও তার কোনো উল্লেখ নেই। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে যে বর্তমান স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চান, তা দুই সরকারের কার্যক্রম থেকেই স্পষ্ট। প্রেসিডেন্ট ওবামার হোয়াইট হাউসে বসবাসের মেয়াদ আর বেশিদিন নেই। যে বিশাল জনপ্রিয়তা নিয়ে তিনি হোয়াইট হাউসে এসেছিলেন, ততোধিক জনসমর্থনহীনতা ও ব্যর্থতার অপবাদ নিয়ে তাকে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হচ্ছে। বাংলাদেশ নিয়ে বিব্রত থাকার সময় এটা তার নয়। তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে একটা শেষ চমক দেখিয়ে অর্থাৎ বিশ্বমুদ্রা হিসেবে ডলারের পতন আশঙ্কা, চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক উত্থান রোধে একটা সফল পদক্ষেপ নিয়ে তার প্রেসিডেন্সির কলঙ্ক দূর করা এবং আগামী প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলকে ভরাডুবির হাত থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করা। এই নীতি সফল করতে হলে তার প্রশাসনের নতুন এশীয় নীতির সাফল্য দরকার এবং তা একমাত্র সম্ভব ভারতের সহযোগিতা লাভ দ্বারা। ভারত সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির ক্ষেত্রে চীনের প্রতিযোগী সুপার পাওয়ার হতে চায়। মোদি দিলি্লতে ক্ষমতায় আসার পর তার সরকার চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করা সত্ত্বেও (শিগগির আবার মোদি চীন সফরে যাবেন) দুই দেশের সীমান্ত সমস্যা, এশিয়ায় সামরিক ও অর্থনেতিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। আমেরিকা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভারতকে আরও কোলে টেনে নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে তার সামরিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টির অঘোষিত পরিকল্পনা সফল করতে চায়। পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ায় মার্কিন রণনীতি ক্রমাগত মার খাচ্ছে। এখন দক্ষিণ এশিয়ায় পানি ঘোলা করে ওবামা প্রশাসন আমেরিকার মুখ রক্ষা করতে চায়। এ ক্ষেত্রে গোটা দক্ষিণ এশিয়া নিয়েই ওবামা প্রশাসনের মাথাব্যথা। এ অঞ্চলের একটি ছোট দেশ বাংলাদেশ এ মুহূর্তে স্বতন্ত্রভাবে তার প্রশাসনের চিন্তাভাবনায় আসা সম্ভব নয়। এ অসম্ভবকে নিয়ে বিএনপির মাথামোটা নেতা-নেত্রী অলীক সুখস্বপ্নে বিভোর হতে পারেন।
আমেরিকার মাথাব্যথা এখন বাংলাদেশ নয়। বরং মৌলবাদী জঙ্গি সন্ত্রাস দমনে হাসিনা সরকারের সাফল্যে তারা খুশি। আমেরিকার মাথাব্যথা এখন অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে চীনের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ এবং এশিয়া ও আফ্রিকায় তার দ্রুত প্রভাব বিস্তার নিয়ে। ওয়াশিংটনের ললাট এই ভেবে কুঞ্চিত, বিশ্বমুদ্রা হিসেবে আমেরিকান ডলারের দাপট এখন পর্যন্ত অব্যাহত থাকলেও চীন-ভারত-ব্রাজিল প্রভৃতি দেশ, বিশেষ করে চীনের উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের পাল্টা যে ব্রিকস ব্যাংক গড়ে উঠতে যাচ্ছে, তা অদূর বা দূরভবিষ্যতে ডলারের পতন ঘটায় কি-না! চীন এখন আমেরিকার অস্ত্র বিক্রির মার্কেটেও অনুপ্রবেশ করেছে এবং আমেরিকার কায়দায় হালকা থেকে ভারী মারণাস্ত্র তৈরি করছে। অস্ত্র বিক্রির বিশ্ববাণিজ্যেও যদি মার্কিন ওয়ার ইন্ডাস্ট্রি মার খায়, তাহলে কোনোভাবেই বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্য ও প্রভুত্ব টিকিয়ে রাখা যাবে না। আমেরিকা তাই মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের সম্প্রসারণ চাইছে না। আফগানিস্তানে গুড তালেবানদের সঙ্গে আপস করতে চাইছে। ইসলামিক স্টেট বা আইসিসির সঙ্গে যুদ্ধেও জোরালোভাবে লিপ্ত হচ্ছে না। সে চাচ্ছে এশিয়া ও আফ্রিকায় চীনের ক্রমবর্ধিষ্ণু প্রভাব ঠেকাতে। অন্যদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধ অব্যাহত রেখে পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় পুনর্জাগরণ ঠেকাতে।
স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতিতে আবার স্নায়ুযুদ্ধের যুগ ফিরে আসছে এবং নতুনভাবে সুপার পাওয়ার শক্তি শিবির তৈরি হতে যাচ্ছে। পঞ্চাশের দশকের দুই শক্তি শিবিরের একটিতে ছিল আমেরিকা, চীন, পাকিস্তানসহ কিছু দেশ; অন্যদিকে সোভিয়েত শক্তি শিবিরের সমর্থক ছিল ভারত, পূর্ব ইউরোপ এবং জোটনিরপেক্ষ বহু দেশ। বর্তমানে এই অবস্থানটা পাল্টেছে। সোভিয়েত পাওয়ার ব্লক এখন নেই। কিন্তু চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল প্রভৃতি কয়েকটি দেশ নিয়ে গড়ে উঠছে নতুন পাওয়ার ব্লক। চীন এখন আমেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে যে নতুন শক্তি শিবির গড়ে উঠছে, সেখানে ভারতের অবস্থান কোথায়? ওবামার সঙ্গে মোদির সাম্প্রতিক গলাগলি, ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নেহরু আমলের মতো রুশ অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল না রেখে আমেরিকা থেকে অস্ত্র আমদানি, এমনকি আমেরিকাকে ভারতে যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণের কারখানা প্রতিষ্ঠার সুযোগদান (যে অস্ত্র ভারত বিদেশেও বিক্রি করতে পারবে) ইত্যাদি পদক্ষেপ দেখে অনেক পর্যবেক্ষক অনুমান করছেন, মোদি সরকার আমেরিকার সঙ্গেই ভালোভাবে গাঁটছড়া বাঁধার দিকে এগোচ্ছে।
সম্ভবত ওবামার দিলি্ল সফর, ভারতের সঙ্গে পরমাণু সহযোগিতা এবং সামরিক সহযোগিতার বিভিন্ন চুক্তির সংখ্যা বেড়ে যাওয়া দেখেই বেইজিং সতর্কতামূলক পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রুশ নেতা পুতিনকে তাদের একটি জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। হয়তো চীন চায় দিলি্ল ও ওয়াশিংটনকে এই মেসেজটা দিতে যে, 'ভারত এবং আমেরিকা যদি চীনবিরোধী জোট বাঁধে, তাহলে চীনেরও জোট বাঁধার শক্তিশালী জুটির অভাব হবে না। বিশ্ব রাজনীতির অনেক পর্যবেক্ষকই মনে করছেন, বিশ্ব আবার শক্তি শিবির বিভক্তির দিকে এগোচ্ছে ও মোদির ভারত সেক্ষেত্রে হয়তো আজ আর কাল হোক, মার্কিন শিবিরেই অবস্থান নেবে এবং প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীনকেই বেছে নিয়ে সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তার আধিপত্য বিস্তার ঠেকানোর পদক্ষেপ নেবে। আমেরিকা এই পথেই মোদি সরকারকে টানতে চাইছে। বিশ্ব রাজনীতির কিছু পর্যবেক্ষকের ধারণার সঙ্গে আমার ধারণাটি মেলে না। ওবামার সঙ্গে বৈঠকের পর মোদি আবার চীন সফরে যাবেন_ এই সম্ভাবনার খবরে মনে হয়, আমেরিকার সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দ্বারা মোদি সরকার ভারতকে এশিয়ার অদ্বিতীয় শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চায় (যেমন এক সময় চীনও তা চেয়েছিল); কিন্তু সরাসরি চীনের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হওয়া তার পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হবে না।
মোদি সমর্থক সংঘ পরিবারগুলো যতই চীনবিরোধী হাঁকডাক শুরু করুক, মোদি চীন অথবা পাকিস্তান কোনো দেশের সঙ্গেই সহসা বিবাদে লিপ্ত হতে যাবেন মনে হয় না। চীনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যায় তিনি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিচ্ছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ভাষা ব্যবহার করলেও সংঘর্ষ সম্প্রসারণের নীতি পরিহার করে চলছেন। ভারতের মতো একটি বিরাট দেশ পরিচালনায় নরেন্দ্র মোদি যদি শেষ পর্যন্ত তার পূর্বসূরি অটল বিহারি বাজপেয়ির প্রাগমেটিজমের পরিচয় দেন, তাহলে আমি বিস্মিত হবো না। স্বাধীনতার পর ভারতে যে সেক্যুলার, গণতন্ত্রমনা ও পশ্চিমা নীতি সম্পর্কে সন্দিহান শক্তিশালী এস্টাবলিশমেন্ট গড়ে উঠেছে, সে এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রেখেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এগোতে হবে।
হোয়াইট হাউসে ওবামা ভারতের মোদির চেয়েও বিশাল জনপ্রিয়তা নিয়ে ঢুকেছিলেন। আজ তার পরিণতি তিনি দেখছেন। মোদি কুশলী ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক। আন্তর্জাতিক রাজনীতির কোনো ফাঁদেই সহসা পা দিয়ে তিনি নিজের বর্তমান ভাবমূর্তিকে এবং সব মহলের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাকে এত শিগগিরই প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইবেন না। সম্ভবত ভারতের উন্নয়নের ব্যাপারে তার আগ্রহ আন্তরিক। মোদি সরকার বিএনপির সন্ত্রাসী রাজনীতির কর্মকাণ্ড দেখার পরও হাসিনা সরকারকে বিব্রত করতে চাইবে, তা আমি আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে ধারণা করি না। মোদি সরকার ভারতের স্বার্থেই এই মুহূর্তে এ ধরনের কোনো হঠকারী নীতি গ্রহণ করতে পারে না। বাংলাদেশে বিএনপি বা বিএনপি সমর্থক যে মহলটি দিলি্লতে মোদি-ওবামা বৈঠক সম্পর্কে অতি আশায় বুক বেঁধে দেশে সন্ত্রাস চালিয়ে এখনও সাধারণ মানুষকে আগুনে পোড়াচ্ছে, তারা শিগগিরই বুঝতে পারবে আগুনে পুড়িয়ে নিরীহ মানুষ মেরে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করা যায় না। তারা নিজেদের আগুনে নিজেরাই পুড়বে।
লন্ডন, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫, শুক্রবার

No comments

Powered by Blogger.