শিশুদের নিয়ে এই নির্লজ্জ আচরণ কেন? সাংসদের জন্মদিন বিলাস!

(নিজের নির্বাচনী এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাতুয়াইল কনকর্ড সিটি মাঠে গতকাল নিজের ৭৭তম জন্মদিন উদ্‌যাপন করলেন রাজধানীর ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকার সরকারদলীয় সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লা l ছবি: প্রথম আলো) রাজধানীর ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকার সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার জন্মদিনকে ‘রাজকীয়’ করতে এলাকার শত শত শিশুকে ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ জন্য বিভিন্ন স্কুল থেকে তাদের নিয়ে আসা হয়েছে সাংসদের জন্মদিন পালনের প্যান্ডেলে। আমাদের সাংসদেরা কি এতই অজনপ্রিয় যে তাঁদের সংবর্ধনার জন্য স্কুলের শিশুদের ধরে বেঁধে নিয়ে আসতে হয়? প্রশ্ন জাগে, ৭৭ বছর বয়সী এই সাংসদ কীভাবে কোমলমতি শিশুদের এ রকম পেরেশানি দিতে পারলেন? শিশুদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার কেবল অন্যায়ই নয়, এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু সেই আইন মানার প্রয়োজন বোধ করেন না এই আইনপ্রণেতা। অনেক সময় শিক্ষকেরাও বাধ্য হন সাংসদদের এ ধরনের ব্যক্তিগত ইচ্ছে পূরণের সহযোগী হতে। কেননা, স্থানীয় সাংসদ নিজে কিংবা তাঁর মনোনীত ব্যক্তিরা এলাকার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে আসীন। কিন্তু তাই বলে তিনি অনৈতিক কাজ করতে পারেন না। যখন দেশ মহাদুর্যোগে পতিত, তখন তিনি সাড়ম্বরে জন্মদিন পালন করার মতো বিলাসিতা দেখালেন! আমরা সাংসদের এই আচরণের নিন্দা জানাই। এ বিষয়ে প্রথম আলোর মঙ্গলবারের সংবাদে যে প্রধান শিক্ষকেরা সাফাই গেয়েছেন, তাও অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়। আগেকার যুগের রাজরাজড়ারা তাঁদের নাম স্থায়ী করতে মূর্তি, স্তম্ভ ইত্যাদি নির্মাণ করতেন। এখনকার সাংসদেরা অস্থায়ী রাজন্য হিসেবে বিভিন্ন উপলক্ষে শিশুদের রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে কিংবা জনসমাবেশে নিয়ে এসে রাজকীয় আনন্দ উপভোগ করেন। জনপ্রতিনিধিরা এভাবে জনগণকে না পেয়ে শিশুদের জনতা সাজিয়ে হাজির করে নিজেদের দেউলিয়াপনাই প্রদর্শন করেন। বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-সাংসদ-মন্ত্রীরা শিশুদের দিয়ে এমন ‘বাহাদুরি’ করে আসছেন। নিরেট নির্লজ্জ না হলে কেউই এ রকম কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারেন না। এ জন্য সাংসদ ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো উচিত। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? সবাই তো একই গোত্রের!
শিক্ষার্থীদের হাজির করে সাংসদের ‘রাজকীয়’ জন্মদিন পালন > জানুয়ারি ২৮, ২০১৫
ক্লাস বন্ধ রেখে নিজ নির্বাচনী এলাকার অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে হাজির করে নিজের ৭৭তম জন্মদিনের অনুষ্ঠান করলেন রাজধানীর ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকার সরকারদলীয় সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লা। মঙ্গলবার মাতুয়াইল কনকর্ড সিটি মাঠে প্যান্ডেল করে এই অনুষ্ঠান করা হয়। জন্মদিন উদ্যাপন কমিটির নামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে  শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বর্ণমালা আদর্শ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্র প্রথম আলোকেবলে, তারা আসতে চায়নি, কিন্তু বাধ্য করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ভূঁইয়া আবদুর রহমান দাবি করেন, সকালের পালায় যাদের ক্লাস ছিল, তাদের ক্লাস শেষ করে অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। দুপুরের পালার ক্লাস হয়েছে। একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, মূলত শিক্ষকেরাই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। কমবেশি ওই এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই কিছু কিছু করে শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। বেলা ১১টায় অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত থাকলেও শুরু হয় দুপুর ১২টার দিকে। এ কে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, গতকাল তাঁর সন্তানের ক্লাস হয়নি। জানতে চাইলে সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লা প্রথম আলোকেবলেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা গান গাইতে পারে, তারা এসেছিল। সাধারণ মানুষও এসেছিল। ‘পোলাপাইন’ চাইল বলে এই অনুষ্ঠান করেছেন বলে জানান সাংসদ।

No comments

Powered by Blogger.