বিটিআরসি’র ৫ হাজার কোটি টাকার নিলাম খসড়া নিয়ে প্রশ্ন by কাজী সোহাগ

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নিলাম খসড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিলাম প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিয়ে এ প্রশ্ন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য আগামী এপ্রিলে ১৮০০ ও ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডের তরঙ্গ নিলামের পরিকল্পনা নিয়েছে বিটিআরসি। নিলামের খসড়াটি অনুমোদনের জন্য এরই মধ্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব অপারেটরের অনুকূলে জিএসএম ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডে ২০ মেগাহার্জ বা এর চেয়ে বেশি তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া আছে তারা এ নিলামে অংশ নিতে পারবে না। তবে প্রথম ধাপে নিলাম হওয়ার সময় যদি কোন তরঙ্গ ব্লক বিক্রয় না হয় তাহলে পরবর্তী ধাপে নিলাম হবে। সে ক্ষেত্রে যাদের অনুকূলে ২০ মেগাহার্জ বা এর চেয়ে বেশি তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া আছে তারাও অংশ নিতে পারবে। বিটিআরসি জানিয়েছে, খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত হলে দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন নিলামে অংশ নিতে পারবে না। গ্রামীণফোনের বর্তমানে ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ডের ২২ মেগাহার্জ তরঙ্গ রয়েছে। অন্যদিকে এ দুই মেগাহার্জ ব্যান্ডে বাংলালিংকের ১৫, রবির ১৪.৯, এয়ারটেলের ১৫ ও টেলিটকের ১৫.২ মেগাহার্জ তরঙ্গ রয়েছে। অর্থাৎ খসড়া নীতিমালা অনুসারে এই নিলামে একমাত্র গ্রামীণফোন বাদ পড়ছে। গ্রামীণফোন এরইমধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে নিলামের শর্ত নিয়ে তাদের আপত্তির কথা তুলে ধরেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে,  গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটির উপরে। এ বিপুল সংখ্যক গ্রাহককে আরও উন্নত সেবা দিতে গ্রামীণফোনের আরও স্পেকট্রাম প্রয়োজন। এ কারণে গ্রাহকের স্বার্থেই গ্রামীণফোন এই নিলামে অংশ নেয়ার সুযোগ চায়। এদিকে নিলাম সংশ্লিষ্টরা জানান, যেসব অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা বেশি এবং যারা সর্বোচ্চ দক্ষতার সঙ্গে তরঙ্গ ব্যবহার করছে তাদের জন্য এর গুরুত্ব আরো বেশি। যদি মেগাহার্জপ্রতি গ্রাহক সংখ্যা বিচার করা যায় তাহলে গ্রামীণফোন অন্যদের চেয়ে দক্ষতার সঙ্গে তরঙ্গ ব্যবহার করছে। এ অপারেটরের প্রতি মেগাহার্জে ১৬ লাখ গ্রাহক। গ্রামীণফোনকে নিলামে অংশ নিতে না দেয়া হলে তা নিশ্চিতভাবেই গ্রাহক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করবে। এ ধরনের রেগুলেটরি বৈষম্য বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক ইঙ্গিত দেবে এবং এই খাতে বিনিয়োগকে অনিশ্চিত করবে। এতে কৃত্রিমভাবে প্রতিযোগিতায় বাধা সৃষ্টি করা হবে। এতে নিলামের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে এবং সরকার বিক্রীত তরঙ্গের ন্যায্য মূল্য পাবে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রামীণফোন অংশ না নিলে নিলামে স্পেকট্রামের মূল্যও অনেক কম আসতে পারে। কারণ আগের নিলামে গ্রামীণফোনই সবচেয়ে বেশি দর দিয়েছে। সেই দর অনুযায়ীই নিলামের চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারিত হয়েছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, ২১০০ মেগাহার্টজে নিলামের জন্য তিনটি ব্লক বিন্যাস করা হয়েছে। এর মধ্যে এক অপারেটর দুটি ব্লক কিনতে পারবে। দুটি ব্লক কেনার সামর্থ্য শুধু গ্রামীণফোনেরই আছে। যদিও বিটিআরসি বলছে গ্রামীণফোনের কাছে যথেষ্ট তরঙ্গ রয়েছে তাই তাদের অংশ গ্রহণ করতে দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু গ্রামীণফোনকে অংশগ্রহণ করতে না  দেয়ায় সরকার যে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব  থেকে বঞ্চিত হবে তার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি বিটিআরসি।

No comments

Powered by Blogger.