নাশকতায় সক্রিয় ২ হাজার ৩শ' by ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন ভয়ঙ্কর রূপ দিতে নানামুখী অপচেষ্টা চলছে। সন্ত্রাস ও নাশকতায় যোগ দিচ্ছে চরমপন্থি ও একাধিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। এসব পরিকল্পনা সমন্বয় ও বাস্তবায়নে ২০ দলীয় জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ কমপক্ষে দুই হাজার ৩০০ জন সক্রিয় রয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির এক হাজার ৫৯৯, জামায়াতের ৬৯৫, এলডিপির ১, বিজেপির ১, ইসলামী ঐক্যজোটের ২, জাগপার ১ ও খেলাফত মজলিসের ১ জন রয়েছেন। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের চলমান নাশকতায় জঙ্গি ও চরমপন্থিরা যুক্ত হয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা-ভাংচুর চালাতে পারে। তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে টার্গেট করেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা ছাড়াও নেতাকর্মীদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, উপাসনালয়ে নাশকতারও ছক কষেছে। পাশাপাশি এসব গ্রুপের প্রতি অনুগত মিডিয়াকর্মীদের দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে ধ্বংসাত্মক-নাশকতাকে আরও উসকে দেওয়া হবে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা মহানগরসংলগ্ন সাভার, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল কার্যক্রম জোরদারসহ বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি করা যেতে পারে। নাশকতা হতে পারে এমন সব স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করতে হবে।
২০ দলের উদ্যোগকে 'সরকার পতনের মরণ কামড়' উল্লেখ করে প্রতিবেদেন আরও বলা হয়েছে, ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান আন্দোলনের প্রধান টার্গেটে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। অবরোধ ও হরতালের সময় দেশের অন্য জেলাগুলো থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন রাখা তাদের টার্গেট। একই সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল করার প্রচেষ্টা চালানো হবে। প্রয়োজনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ওপর এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হবে। নিজ দলের জনপ্রিয় কোনো নেতাকে হত্যা করে কৌশলে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করতে চায় বিএনপি-জামায়াত জোট। অবরোধ ও হরতালের আড়ালে নাশকতামূলক কর্মকা ের জন্য উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে সবজি ও মাছের ট্রাকে অস্ত্রের চালান রাজধানীতে আনা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়।প্রতিবেদনটির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সমকালকে বলেন, সহিংসতা ও নাশকতা বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে এবং এর ফলে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের গণবিরোধী কর্মসূচির নামে নাশকতা ও সহিংসতা সম্পর্কে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। এসব তথ্য গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'কোনো সহিংসতা ও নাশকতা বরদাশত করা হবে না। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় যা প্রয়োজন, সরকার এর সবই করবে। সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেভাবে কাজ করছে।' তিনি বলেন, 'সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসতে শুরু করেছে।'গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার পতনের জন্য চলমান অবরোধের পর লাগাতার হরতাল ও অসহযোগের মতো কর্মসূচি দিতে চায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। এসব কর্মসূচির আড়ালে বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত পলাতক আসামি ও জামিনে থাকা আসামিদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে নাশকতাকারীরা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকেন্দ্রিক বিএনপির শীর্ষ এক নেতার মাধ্যমে চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ রয়েছে। চলমান সহিংসতার পর ওই যোগাযোগ আরও বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় বেশ কয়েকজন চরমপন্থি সদস্য আত্মগোপনে রয়েছে। তাদের সহায়তায় পণ্যবাহী ট্রাকে কারওয়ান বাজার এলাকায় অস্ত্রের চালান আনা হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা ও এর আশপাশে পোশাক কারখানা, ওষুধ কারখানাসহ সরকারি-বেসরকারি বৃহত্তর কয়েকটি কারখানায় নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে প্রশিক্ষিত নাশকতাকারীদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হতে পারে। ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন তারা মরণ কামড় দিয়ে সহিংসতা করছে। সারাদেশ থেকে ত্যাগী ও প্রশিক্ষিত নেতাকর্মীদের রাজধানী এবং আশপাশের জেলায় জড়ো করা হচ্ছে। তাদের মাধ্যমেই নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের সুবিধামতো সময়ে এককভাবে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে এনে রাজধানীর আশপাশে কেরানীগঞ্জ-সাভার, আশুলিয়া অঞ্চলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বা ভাড়া করা বাড়িতে অবস্থান করছে তারা। সেখান থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনে পেট্রোল বোমা হামলা, অগি্নসংযোগসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকা পরিচালিত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার নানা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের নকশা আঁকছে তারা। রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার হিসেবে আমিনবাজার, কেরানীগঞ্জ, আশুলিয়া সংযোগ সড়ক, প্রথম এবং দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা ও বছিলা সেতুর ঢাকা জেলার অংশসহ প্রভৃতি স্থানে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.