নাটোরে লাশ নিয়ে টানাটানি by ইসাহাক আলী

নাটোরে নিহত রাকিব মুন্সি ও রায়হান আলীর লাশ নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নিহতদের নিজেদের কর্মী দাবি করে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে দলের জেলার শীর্ষনেতারা। গতকাল সকাল ১১টার দিকে শহরের কানাইখালী এলাকায় নাটোর প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপি বলেছেন, নিহত রাকিব মুন্সি ছাত্রলীগ কর্মী ও আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তিনি বলেন, তার ভাই মো. আনজুল নাটোর থানায় ভাই হত্যা কাণ্ডের জন্য যে অভিযোগ করেছেন সেখানেও নিজেদেরকে আওয়ামী লীগ কর্মী উল্লেখ করেছেন। এ সময় এমপি শিমুল সাংবাদিকদের নিহত রাকিবের ভাইয়ের মামলার এজাহারের  কপিও সরবরাহ করেন। সরবরাহকৃত ওই এজাহারে আওয়ামী লীগের সংবিধান সুরক্ষা ও গণতন্ত্রের বিজয় র‌্যালিতে যোগ দিতে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে বিএনপি নেতাকর্মীরা ওই দুইজনকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে শিমুল আরও বলেন, বিএনপি নেতারা দুলুর ছবির সঙ্গে রাকিবের ছবি কাটিং পেস্টিং করে নিজেদের কর্মী দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন ভাবে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এ সময় উপস্থিত পিপি সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাকিব মুন্সি ছাত্রলীগ কর্মী হওয়ার কারণেই গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তারা নিজেরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন, লাশ গ্রহণ করেন এবং দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেন। বিএনপি নিহতদের নিজেদের কর্মী বলে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। এ সময় নিহত রাকিবকে নিজেদের কর্মী দাবি করলেও রায়হানের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি নেতারা। তারা জানান, রায়হান রাকিবের বন্ধু সে বেড়াতে এসেছিল। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মালেক শেখ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এহিয়া চৌধুরী ও যুবমহিলা লীগের সভানেত্রী আঞ্জুমান আরা পপি। তবে সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিল না।  অপরদিকে এর পর পরই মঙ্গলবার দুপুর সোয়া একটার দিকে শহরের আলাইপুরে নাটোর জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো.  আমিনুল হক বলেন, নিহত রাকিব মুন্সি নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ শাখার ছাত্রদলের ক্রীড়া সম্পাদক এবং রায়হান সিংড়া  পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রচার সম্পাদক। রায়হানের বাবা শামসুল হক মিঠন ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর সঙ্গে অসংখ্য সভা সমাবেশে রাকিব মুন্সি অংশ নিয়েছে। যার ছবি এবং ভিডিও তাদের কাছে রয়েছে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের একটি ছবিও সরবরাহ করেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জোর করে হাসপাতাল থেকে রাকিবের লাশ তাদের অফিসে নিয়ে গিয়ে  সেখানেই গোসল করিয়ে নিজেদের তত্ত্বাবধানে দাফন-কাফন করেছে। আমাদের অংশ নিতেও দেয়নি। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে নিহত রায়হানের বাবা শামসুল হক মিঠন, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী শাহ আলম, সহ-সভাপতি রহিম নেওয়াজ উপস্থিত ছিলেন।  সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে নিহত রায়হানের পিতা শামসুল হক মিঠন বলেন, আমি বিএনপি করি, আমার ছেলেও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদিকে প্রকৃত হত্যাকারীদের আটক করতে নিহত রাকিব মুন্সির পিতা চান মুন্সি নিজেদেরকে বিএনপি সমর্থক দাবি করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল মেম্বার, নাজিম উদ্দিন ও ময়েজ আলীসহ ২৫ জন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পৃথক এজাহার করেছেন।
এজাহারে তিনি বলেছেন, তার ছেলে রাকিব ও ছেলের বন্ধু রায়হান বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার সময় প্রধান অভিযুক্ত বাবুল মেম্বার তার ছেলে বিএনপি করার সাধ মিটানোর নির্দেশ দিলে অন্য আসামিদের নিয়ে সঙ্গে থাকা দুই নং আসামি নাজিম উদ্দিন বুকে গুলি করে রাকিবকে হত্যা করে। নাটোরের পুলিশ সুপার বাসুদেব বণিক বলেছেন, নিহত রাকিব মুন্সির ভাই মো. আনজুল বাদী হয়ে যে এজাহার দাখিল করেছেন তারপর নতুন করে কোন মামলা করার সুযোগ নেই। তবে তাদের পিতার দায়ের করা এজাহার মূল মামলার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম খান বলেন, প্রথম যে মামলাটি নেয়া হয়েছে তার সঙ্গে পরে করা অভিযোগও সংযুক্ত করে তদন্ত করে দেখা হবে। তবে এ ঘটনায় এখনও কেউ আটক বা গ্রেপ্তার হয়নি। তবে সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত কাজ চলছে।

No comments

Powered by Blogger.