চট্টগ্রামে হরতালে দুর্ভোগ

চট্টগ্রামে টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বিএনপির ডাকা সকাল সন্ধ্যা-হরতাল। সোমবার সন্ধ্যায় উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা-কর্মীর  গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার এই হরতাল ডাকে দলটি। এই সময় শহরজুড়ে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। নগরীর অধিকাংশ দোকানপাট ছিল  বন্ধ। ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোন বাস। তবে বিকালের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। শহরে কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে না যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। তবে আতঙ্কে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে অনেক। হরতালের সমর্থনে বহদ্দারহাট মোড়, বাকুলিয়া, দেওয়ান হাট, অলঙ্কার মোড়, খুলশি ও হালিশহর এলাকায়  একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় তারা এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। স্কুলের শিশুরা, কর্মমুখী মানুষজন বাসা থেকে বের হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারেননি বলে জানান। যারা পৌঁছেন তাদেরকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অন্যদিকে টানা অচলাবস্থার কারণে অচল হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক দুয়ার বলে খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর। গত কয়েকদিন ধরে সেখান থেকে পণ্য নিয়ে বড় ধরনের কোন ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেতে পারছে না।  এমনকি প্রবেশও করতে পারেছে না। এতে স্থবির হয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক লেনদেন। আটকা পড়েছে হাজার হাজার কনটেইনার। বন্দরের অভ্যন্তরে জাহাজে মালামাল উঠানামার কাজ চললেও যানবাহনের অভাবে মালামাল ডেলিভারি বন্ধ রয়েছে। রাতের বেলায় নগরীর কিছু কিছু ডিপোতে কন্টেইনার ডেলিভারী ও ডিপো থেকে কিছু কিছু কন্টেইনার বন্দরে এলেও তা খুবই সামান্য। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার বলেন, হরতালে সতর্ক রয়েছি আমরা। যেভাবে পুলিশের  উপর হামলা হচ্ছে তাতে প্রকৃত অপরাধীদের  ধরতে জীবনের ঝুঁকি নিতে হচ্ছে আমাদের। তবে আমরা যে কোন ধরনের নাশকতা এড়াতে প্রস্তুত রয়েছি। আজকের হরতালে কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে এক বিবৃতিতে জামায়াত নেতারা জানান, গত ৫ই  জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসে জামায়াতে ইসলামীসহ ২০দলীয় জোট ঘোষিত সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীর নাসিমন ভবনস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত ২০দলীয় জোটের সমাবেশ চলাকালে লক্ষাধিক লোকের উপর পুলিশি হামলা নিন্দনীয়। এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি  জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক আহছানুল্লাহ্‌ ভূঁইয়া ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ  নুরুল আমিন এক যুক্ত বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সভা-সমাবেশ করতে না দিয়ে পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসী ক্যাডার দিয়ে হামলা, হত্যা ও গণগ্রেপ্তার করে বিরোধী দলকে দমন-পীড়ন চালিয়ে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে। এদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ তা বরদাশত করবে না। সাধারণ মানুষ অতীতে যেমন একদলীয় বাকশাল এবং স্বৈরাচারকে প্রশ্রয় দেয়নি আগামীতেও দেবে না। সভা-সমাবেশ করার অধিকার গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক এবং নাগরিক অধিকার। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেখে সরকার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পুলিশ দিয়ে নির্বিচার গুলি চালিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পণ্ড করে দেয়। অর্ধশতাধিক আহত ও তিন শতাধিক নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করে। আমরা এই অগণতান্ত্রিক, পৈশাচিক ও ঘৃণ্য হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.