বাংলাদেশীরা কেন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে পারেন না?

বাংলাদেশীরা কেন শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে পারেন না- এমন প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ফরবিস। এতে গতকাল প্রকাশিত হয় ‘হোয়াই ক্যান্ট বাংলাদেশিজ প্রটেস্ট পিসফুলি?’ শীর্ষক একটি মন্তব্য প্রতিবেদন। এর লেখক এলিসা আয়রিস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সাবেক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও  অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স (সিএফআর)-এর  ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ফেলো। এতে তিনি বলেছেন, ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করার ঘোষণা দিয়েছিল বিরোধী দল বিএনপি। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তা নিষিদ্ধ করে। তা সত্ত্বেও রাস্তায় নামেন বিএনপির সমর্থকরা। তবে তাদের চেয়ে বেশি ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। এর ফলে সহিংসতা হয়েছে। এতে কমপক্ষে চার জন নিহত হয়েছেন। এমন সহিংসতা কারো রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে না। তিনি লিখেছেন, তাই আমি জিজ্ঞাসা করি: কেন বাংলাদেশীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে পারেন না? এমন একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভ কল্পনা করুন তো যে সময়ে দিন এনে দিন খান এমন একজন যুবতী মাকে কাজে যোগ দেয়া থেকে বিরত রাখে নি, হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এমন একটি রাজনৈতিক র‌্যালির কথা কল্পনা করুন তো যা জনজীবন বিঘ্নিত করা ছাড়া কোন বার্তা দিতে পারে কিনা। এ লেখায় তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের এক বছরের মাথায় রাজনৈতিক বিক্ষোভে ঢাকা ও বিভিন্ন শহরে সহিংসতা হয়। এতে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়। এতে তিনি ২০১৩ সালের হরতাল, ধর্মঘটের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বলেন, ওই সময় বিরোধী দল বিএনপি আহূত হরতালে বাংলাদেশ অচল হয়ে পড়েছিল। বিএনপি তখন দৃঢ়তার সঙ্গে অবস্থান নেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। তারা এর বাইরে যেতে রাজি হয় নি। তবে আওয়ামী লীগ সরকার সংলাপ আহ্বান করেছিল। বিএনপিও আলোচনার জন্য প্রস্তুত- এমনটা বলেছিল। কিন্তু দু’দলের দু’প্রধানের মধ্যে ফোনে যে সংলাপ হয়েছে তা সুখকর ছিল না। এরই মধ্যে গত বছর ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন ঘোষণা করে সরকার। ওই নির্বাচনে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একটি অংশ। এর ফলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য খর্ব হয়েছে। অবশেষে গত বছর ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন হয়। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। জাতীয় সংসদের অর্ধেকেরও বেশি আসনে প্রার্থী নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। আওয়ামী লীগ সরকার ৩০০ আসনের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ২৩২ আসন পায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নতুন সরকারকে সমর্থন দেয়। তবে প্রকাশ্য বিবৃতি সহ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সবার অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকার দৃশ্যত এমন একটি অবস্থায় চলে যায় যে, তারা পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় থাকবে এবং নতুন করে কোন নির্বাচন দেয়ার সম্ভাবনা নেই। ২০১৩ সালে চলমান হরতালে যেসব মানুষ দুর্ভোগে পড়েছিলেন তাদের কাছে ২০১৪ সালটি অপেক্ষাকৃত ভাল ছিল, শান্ত ছিল। কিন্তু এখন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সরকার বলছে, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে তিনি সারা দেশে সব ধরনের পরিবহন অবরোধ ঘোষণা করেছেন অনির্দিষ্টকালের জন্য। এই অবরোধে নিশ্চিতভাবে আর কেউ নন, ভুগবেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও দেশের অর্থনীতি। ২০০৫ সালের জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, একদিনের ধর্মঘট বা হরতালে দেশে জাতীয় প্রবৃদ্ধির শতকরা ০.৩ ভাগ ক্ষতি হয়। ঢাকা চেম্বারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এতে প্রতিদিন দেশে ২০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। হরতাল শুধু বিএনপির অন্যতম হাতিয়ার নয়, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছেই এটি যেন সর্বজনীন একটি হাতিয়ার প্রতিবাদ জানানোর জন্য। বাংলাদেশে হরতালে বাসে বা ট্রেনে আগুন দেয়া, রাজপথে সাধারণ মানুষের হয়রানি, নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর বাংলাদেশে সাধারণ খবর। এলিসা আয়রিস লিখেছেন, গত বছর আমি বলেছিলাম বাংলাদেশে বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে। এতে লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে অর্থনীতির ‘নেক্সট ১১’ হিসেবে উঠে আসতে সহায়তা করছে বাংলাদেশকে। এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকার দাবি রাখতে পারে বাংলাদেশ। এই সফলতার কাছে সহিংস প্রতিবাদের কোন স্থান নেই।

No comments

Powered by Blogger.