প্রথম দিনের অবরোধে বিচ্ছিন্ন ঢাকা, গাড়িতে আগুন, সংঘর্ষ-ভাঙচুর, পুলিশের গুলি, দুর্ভোগ: আসামি লক্ষাধিক

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের প্রথমদিনেই কার্যত সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অবরোধকে ঘিরে জেলায় জেলায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে ২০ দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রাস্তা অবরোধ গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে অবরোধকারীরা। গতকাল সকাল থেকে রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোন বাস চলেনি। তবে ট্রেন এবং লঞ্চ চলাচল ছিল অনেকটা স্বাভাবিক। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অভ্যন্তরীণ রুটে গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকায় দিনভর দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। অবরোধ চলাকালে রাজশাহীতে অবরোধকারীদের হামলার শিকার হয়েছেন দুই পুলিশ সদস্য। তাদেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজধানীতে অন্তত ৮টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় গতকাল রাত পর্যন্ত। এছাড়া বিক্ষিপ্ত মিছিল ও পিকেটিং হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। গত কয়েক দিনের ঘটনায় বিভিন্ন জেলায় কয়েকশ’ মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিরোধী জোটের লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গত দুইদিনে সারা দেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন কয়েকহাজার নেতাকর্মী। সোমবারের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের ২৫০ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এদিকে অবরোধ চলাকালে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ রংপুর বিভাগে হরতাল আহ্বান করেছে ২০ দল। এদিকে টানা তৃতীয় দিনের মতো অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
রাজধানীতে ৮টি গাড়িতে আগুন: অবরোধের প্রথমদিন রাজধানীতে একের পর এক গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। দুপুরের পর বিভিন্ন সড়কে এসব যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমতে থাকে। অনেক স্থানে পুলিশ ও পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই ঘটেছে এসব ঘটনা। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্নস্থানে আটটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। তাৎক্ষণিকভাবে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বিকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তারের পরই শাহবাগ মোড়ে একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে গুলিস্তান-মিরপুর রুটের শিকড় পরিবহনের এই বাসটি (ঢাকা মেট্টো ব-১১-২৩৩৭) ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর লালবাগ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে চালক দগ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার জিয়াউর রহমান। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পাশে মতিঝিল-গুলশান রুটের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।  রাত ৮টায় যাত্রাবাড়ী পোস্তগোলা ব্রিজে একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। একই সময়ে মহাখালীর আমতলী মোড়ে বনানী-মিরপুর রুটে চলাচলকারী একটি বাস পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তার আগে দুপুর ২টায় দু’টি বাস ও একটি প্রাইভেটকারে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ওই সময়ে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। একই সময়ে একই স্থানে বিআরটিসি’র একটি বাসেও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। ওই সময়ে রাজধানীর বংশাল থানার তাঁতীবাজার এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট কাজ করে ওই বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে বাসটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা জানিয়েছেন।
আসামি লক্ষাধিক: সোমবার সারা দেশে সংঘাতের ঘটনায় গণমামলা দেয়া হয়েছে সরকারবিরোধী ২০ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৪০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে। আগের কয়েক দিনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি হয়েছেন লক্ষাধিক নেতাকর্মী। গতকাল গ্রেপ্তার হয়েছেন আরও ২ শতাধিক। এছাড়া গতকালও দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও সরকারদলীয় সমর্থকদের সঙ্গে ২০-দলীয় জোটের সংঘর্ষ হয়েছে। রাজধানীতে গত সোমবার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশ দুই থানায় ৩টি মামলা দায়ের করেছে। গতকাল শাহবাগ ও পল্টন থানায় দায়ের হওয়া এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ তিন শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলার প্রধান আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পুলিশ জানায়, গত সোমবার গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে পল্টন থানার এসআই মুনিবুর রহমান সুজন ও এএসআই মুস্তাক আহমেদ বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেছেন। দুটি মামলায়ই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
পল্টন থানার এসআই শহীদুল্লাহ জানান, প্রত্যেক মামলায় ৫১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে গত সোমবার পুলিশের ওপর হামলা ও বিচারপতির গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ ৫০-৬০ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। শাহবাগ থানার এসআই মাহবুবুল হক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। পুলিশ জানিয়েছে, মামলায় ওই দু’জন ছাড়াও বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদিন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, সালাউদ্দিন হক ও অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ৫০-৬০ জন আইনজীবীকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। গতকাল সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা হয়েছে রাজশাহীতে। সেখানে ১৪ হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে মজির উদ্দিন নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা, বিস্ফোরক ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করেছে পুঠিয়া থানা পুলিশ। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২০-দলীয় জোটের সাত হাজার নেতাকর্মীকে। পুঠিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এসআই আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বিএনপি সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে সাত হাজার জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। এছাড়া এসআই ডেভিট হেমাদ্রী বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় সাত হাজার জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় মামলা হয়েছে ৩ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। সেমাবার পুলিশের গুলিতে এক বিএনপি কর্মী নিহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গতকাল মামলাটি দায়ের করে। সর্বাধিক মামলা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। এ জেলায় মামলা হয়েছে ৬টি। এসব মামলায় ৩০০ জনের নাম উল্লেখ করে আসামী হয়েছেন হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী।
পুলিশ এসল্ট এসব মামলায় গতকাল জেলা বিএনপির ৮ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের মধ্যে রয়েছন শহর বিএনপির সভাপতি সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার খোকন, অ্যাডভোকেট ইমাম, অ্যাডভোকেট সামছুজ্জামান চৌধুরী কানন ও অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন। চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংর্ঘষের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেছে। দুটি মামলাই হয়েছে চকবাজার ও কোতোয়ালি থানায়। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৭০০ জনকে। এর বেশির ভাগ অজ্ঞাত। সোমবার পুলিশ এসল্টের অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জে ৫৬৭ জনের নাম উল্লেখ করে ১৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দিনাজপুরে মামলা হয়েছে ৬৩ জনের বিরুদ্ধে। সোমবার বিকালে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় ওইদিন রাতেই কোতোয়ালি থানায় এ মামলা করেন থানার এসআই নাজমুল হক। ময়মনসিংহে জেলা ছাত্রদল ও যুবদলের সভাপতি, সম্পাদকসহ ২০দলীয় ঐকজোটের ৭০৯ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে ২টি মামলা দায়ের করেছে।  মৌলভীবাজারে বিএনপি-জামায়াতের ৪০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা জামাতের আমীর আবদুল মান্নান, জেলা খেলাফত মজলিশের আমীর অধ্যাপক আবদুস সবুর, জেলা জমিয়তের আমীর সৈয়দ মাওলানা মাশহু আহমদসহ ২০-দলীয় জোটের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জেলা ও পৌর কমিটির ১৩০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে এ মামলায়। লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ২ মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩০০ জনকে। গতকাল সকালে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান রাছেল ৩৭ বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এসআই সিরাজ মিয়া বাদী হয়ে রায়পুর থানায় এ দু’টি মামলা দায়ের করেন। রাসেলের মামলায় বিএনপি নেতাসহ ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলাটি দায়েক করা হয়েছে। পুলিশের এসআই সিরাজ মিয়ার মামলার যুবদল ও ছাত্রদল নেতাসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়েছে।
সোনারগাঁয়ে ৬৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৮৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সোমবার রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে পুলিশের এএসআই রমজান। চাঁদপুরের কচুয়ায় বিএনপির ৫২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সোমবার বিকালে কচুয়ার জগৎপুর বাজার এলাকায় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এ মামলা করে পুলিশ। মামলার ২০ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৬৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। নবীগঞ্জে মামলা হয়েছে শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ আবুল কাশেমসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুুলিশ। পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও বিএনপির সভাপতি আলহাজ ছাবির আহমদ চৌধুরীকে প্রধান করে দ্রুত বিচার আইনে এসআই মো. আবদুল করিম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার শৈলকুপা থানায় স্থানীয় বিএনপির সাড়ে তিনশ’ নেতাকর্মীর নামে মামলাটি করেন থানার উপ-পরিদর্শক আবদুর রউফ।
মামলায় ৭০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। চাঁদপুরে জেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে ৬ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৪টি মামলা হয়েছে। সোমবার চিত্রলেখা ও  ঘোষেরহাট এলাকায় সংঘর্ষ ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় আলাদা দু’টি মামলায় ৫৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও চাঁদপুর নতুন বাজার ও পুরান বাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় আরও দুটি মামলা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ শহরের ২ নং পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট হাবিবুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার রাতে ৪৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা দেড়শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা করেছেন। হবিগঞ্জের বাহুবলের মিরপুরে বিএনপি-পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত তিনশ’ জনের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার রাতে বাহুবল মডেল থানা পুলিশ মামলা দু’টি দায়ের করে। এ মামলায় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৬৮ জনের নাম উল্লেখসহ ২২০-২৩০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। এ মামলায় জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি জয়নাল আবেদীনকে আটক করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জে বিকালে ককটেল উদ্ধার মামলায় সালেক ও হৃদয় নামে দু’জনকে এজাহারনামীয় ও আরও অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে আসামি করে এসআই এসএম নুরুল কাদির সৈকত বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল তিন থানায় ৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের আসামি করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল,  জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাকসুদুল আলম খোরশেদ।ড়মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে অনেককে। বন্দরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলায়ড়সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, নাসিকের কাউন্সিলর হান্নান সরকার ও মো. সুলতান, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশাকে আসামি করা হয়েছে।ড়দুটি মামলায় অজ্ঞাত আসামিও রয়েছে। নাম উল্লেখ করে ৮৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। সোমবার নাটোরে ২ জন নিহতের ঘটনায় ২টি পৃথক মামলা হয়েছে। একটি মামলা করেছেন নিহত রাকিব আলীর বড় ভাই। তিনি নাম না উল্লেখ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অপর নিহত রাকিব মুন্সির পিতা চান মুন্সি ২৫ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছেন। খুলনার খালিশপুর থানার ওসি এসএম কামরুজ্জামান মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর মাস্টার শফিকুল আলম ও থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলে হালিম লিটনসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন।
রাজশাহীতে হরতালে ৩ এলাকায় ১৪৪ ধারা অবরোধে সংঘর্ষ, ২ পুলিশ কনস্টেবল আহত
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহীর পুঠিয়া বানেশ্বর এলাকায় পুলিশের চায়না গুলিতে বিএনপিকর্মী মজিরউদ্দিন নিহতের প্রতিবাদে জেলা বিএনপির ডাকে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে জেলা ও মহানগর বিএনপি। হরতাল শুরুর আগেই উপজেলার বানেশ্বরহাট, বেলপুকুর ও শিবপুরহাট এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১৪৪ ধারা অনির্দিষ্টকালের জন্য বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার ফরহাদ আহম্মেদ। তিনি বলেন, উপজেলার বানেশ্বরে সোমবার বিকালে বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষের পর উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বানেশ্বর, বেলপুকুর ও শিবপুরহাট এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ওই এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এদিকে গতকাল দুপুর ২টায় নিহত বিএনপিকর্মী মজির উদ্দিনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, জেলা ছাত্রদল সভাপতি শফিকুল আলম সমাপ্তসহ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশ নেন। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শফিকুল আলম সমাপ্ত মানবজমিনকে জানান, পুলিশের ছোড়া গুলিতে বিএনপিকর্মী মজিরউদ্দিনের বাম চোখে গভীর ক্ষত তৈরি হয়।
এতে ধারণা করা হচ্ছে পুলিশের চায়না গুলিতেই তিনি মরা গেছেন। এ ছাড়া পুঠিয়া থানার এসআই ডেভিটকে অনেকেই বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে দেখেছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতা নাদিম মোস্তফার নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বিক্ষিপ্তভাবে পিকেটিং ও মিছিল বের করেছে। তবে পুঠিয়া তিনটি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকায় জেলা বিএনপির একক মিছিল করা হয়নি। অন্যদিকে ভোর থেকে নগরীর কুমারপাড়া, আলুপট্টি, সাহেববাজার, সোনাদীঘি, লক্ষ্মীপুর, তালাইমারী, রেলগেট, ভদ্রা, শালগান, আমচত্বর, সিটি বাইপাস, কাশিয়াডাঙ্গাসহ সব কয়টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও প্রবেশমুখে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। পাশাপাশি পুলিশ ও র‌্যাবের টহল অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। হরতাল ও অবরোধের সমর্থনে সকাল ৮টায় নগরীর দড়িখরবোনা মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর বিএনপি। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ভুবনমোহন পার্কে গিয়ে অবস্থান নেয়। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, কেন্দ্রীয় সদস্য রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন বলেন, সোমবার রাতে রাজশাহীর মতিহারে ফল গবেষণা কেন্দ্রের সামনে অবরোধ ও হরতাল সমর্থকরা একটি ট্রাক ভাঙচুর ও একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে।
এ ছাড়া নগরীর আলিফ-লাল-মিম ভাটার সামনের মহাসড়কে হামলা চালিয়ে দুই পুলিশ কনস্টেবলকে আহত করেছে শিবিরকর্মীরা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি’র টহল জোরদার করা হয়েছে। হরতালের নামে কোথায় কোন ধরনের সহিংসতার চেষ্টা করলে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। সাত হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা: রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে মজিরউদ্দিন নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা, বিস্ফোরক ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় তিনটি মামলা করেছে পুঠিয়া থানা পুলিশ। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২০ দলীয় জোটের সাত হাজার নেতাকর্মীকে। পুঠিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এসআই আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বিএনপির সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে সাত হাজারজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। এ ছাড়া এসআই ডেভিট হেমাদ্রি বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় সাত হাজারজনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছেন।
অবরোধে শিবির পুলিশ সংঘর্ষ, ২ পুলিশ সদস্য আহত: গতকাল সকাল ১০টায় অবরোধের সমর্থনে ছাত্রশিবির কর্মীরা আলিফ-লাল-মিম ভাটার সামনের মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ও পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি পিকআপভ্যান সেখানে উপস্থিত হলে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা পুলিশ কনস্টেবল আমজাদ ও শফিকুল গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে শিবিরকর্মীরা তাদের ঘিরে ধরে ইট ও লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে। এ সময় শিবিরকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে থাকা অস্ত্রও কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তবে কিছু সময় পরে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শিবিরকর্মীরা পালিয়ে যায়। এ ছাড়া দুপুর ২টায় নগরীর কোর্ট এলাকায় মিছিল বের করেছে মহানগর জামায়তে ইসলাম।
মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম জানান, আহত পুলিশ সদস্যরা বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত। তাদের জরুরি চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ওই এলাকায় পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে হরতাল ও অবরোধে রাজশাহী থেকে কোন রুটে বাস-ট্রাক ছেড়ে যায়নি। তবে বিভিন্ন সড়কে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি, হিউম্যান হলার, মাইক্রোবাসসহ সব ধরনের হালকা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সকালে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি ও খুলনাগামী কপতক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনসহ বিভিন্ন রুটের আন্তঃনগর এবং লোকাল মেইল ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.