যে গ্রামে দরজা রাত-দিন খোলা

(ভারতের শনি শিংনাপুর গ্রামের সব ঘরের দরজাই এমন কবাটহীন। ঘরের বাইরে খেলছে দুই শিশু। ছবি: এএফপি) ঘরের দরজা আছে বটে, কবাট নেই। এক্কেবারে উদোম। তাই বলে চোর গিয়ে হানা দেবে—উঁহু, তা হবে না। শনি দেবীর কোপানলে পড়তে হবে। এই বিশ্বাস ও ভরসা থেকেই ভারতের ওই গ্রামের কোনো বাড়িতে দরজায় কবাট নেই। এমনকি ব্যাংকের দরজায়ও তালা নেই। ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় শনি শিংনাপুর গ্রামে এমন অরক্ষিত দরজা রয়েছে প্রতিটি বাড়িতে। দরজা উদোম ঘরে নিশ্চিন্তে টাকাপয়সা, গয়নাগাঁটি রেখে বাইরে কাজে যান গ্রামের বাসিন্দারা। থাকেন নির্ভাবনায়। বংশপরম্পরা চলে আসছে এভাবেই। এএফপির খবরে জানা যায়, ঘরে দরজার কবাট না থাকার কারণ জানতে চাইলে গৃহবধূ জয়শ্রী গাড়ে বলেন, বহু বছর আগে শনি দেবী গ্রামের বাসিন্দাদের স্বপ্নে দেখা দেন। দেবী বলেন, তিনিই তাঁদের সবকিছু রক্ষা করবেন। এর পর থেকে গ্রামে এই প্রথা চলে আসছে। কারখানার শ্রমিক বালাসাহেব বরুদ জানান, শনি দেবী শক্তিমতী ও করুণাময়ী। রাতের আঁধারে ঘরে ঢুকে চুরি করলেও দেবীর কৃপায় সকালে সে আবার সেই বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হবে। তবে কয়েকজন গ্রামবাসীর ভাষ্য, বুনো জন্তুর হাত থেকে রক্ষা পেতে রাতে তাঁরা ঘরের কবাট হালকাভাবে চাপিয়ে রাখেন। ৩০০ বছর আগে গ্রামটিতে বন্যা হয়। সে সময় লোহা ও পাথর দিয়ে দেবীর স্তম্ভ বানানো হয়। ফুল দিয়ে দেবীকে পূজা দেন গ্রামের বাসিন্দারা। তবে কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, বন্যপ্রাণীর কবল থেকে রক্ষা পেতে তাঁরা কয়েকটি বাড়ির দরজা আলগাভাবে বন্ধ করে রাখেন। গ্রামের সরকারি ব্যাংক ইউসিওর কাচের দরজাতেও কোনো তালা লাগানো হয় না। ব্যাংক কর্মকর্তা নগেন্দ্র সেহওয়াত বলেন, এ ব্যবস্থায় তাঁদের কোনো সমস্যা হয় না। গ্রামটি থেকে মহারাষ্ট্রে ফুল সরবরাহ করা হয়। সেই ফুল বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করা হয়। পর্যটকদের কাছেও ফুলের চাহিদা রয়েছে। সিংনাপুরের গোলাপ এখন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবীর ওই স্তম্ভের ট্রাস্টি ছায়ারাম ব্যাংকার বলেন, সবাই জানে সিংনাপুরের গ্রামের ঘরে কোনো দরজা নেই। গাছ আছে, ছায়া নেই। দেবী আছেন, মন্দির নেই।’
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, গ্রামে চুরির ঘটনাও ঘটে খুব কম। ২০১০ সালে সেখানে আসা এক পর্যটক অভিযোগ করেছিলেন তাঁর গাড়ি থেকে ৩৫ হাজার রুপি চুরি গেছে। তবে তা গ্রামের বাইরের ঘটনা। গ্রামে চোর-ডাকাত ও দুষ্ট সংখ্যাও কম। গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন, ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত থাকবে। দেবীই তাঁদের গ্রামের অভিভাবক। হোটেলের ব্যবস্থাপক অমিত শর্মা বলেন, এটিই হলো এই দেবীর বিশেষত্ব। তিনিই এই গ্রামের অভিভাবক।

No comments

Powered by Blogger.