১১ কারখানায় ৭৯ লাখ ডলারের রপ্তানি অর্ডার বাতিল by এমএম মাসুদ

চলমান হরতাল-অবরোধের কারণে ক্ষতির পরিমাণ জানিয়ে তথ্য পাঠাতে শুরু করেছে পোশাক কারখানাগুলো। পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ কার্যালয়ে গতকাল পর্যন্ত এ ক্ষতির হিসাব পাঠিয়েছে ১১টি কারখানা। ১১টি কারখানার ১৫১ লাখ ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পোশাক মালিকরা। এর মধ্যে শুধু রপ্তানি অর্ডার বাতিল হয়েছে ৭৯ লাখ ৮৩,০৭৬ ডলারের। কারখানাগুলো হচ্ছে ম্যাগপাই নিটওয়্যার, ম্যাগপাই কম্পোজিট, ক্রিয়েটিভ উলওয়্যার, বেঙ্গল পোশাক ও আর্ভা টেক্সটাইল, হাই-ফ্যাশন কম্পোজিট, জেটএসবি গার্মেন্টস লি., করিম টেক্সটাইল লি., ফ্রেন্ডস স্টাইলওয়ার লি., সাসকোটেক্স (বিডি) লি. ও জুলফিকার ফ্যাশন লি.। বিজিএমইএ তথ্যমতে, গত ১৪ থেকে ২৪শে জানুয়ারি পর্যন্ত অবরোধে ১১টি কারখানার ক্ষতি হয়েছে ১৫১ লাখ ১১,৩৫৯ ডলার। টাকার অঙ্কে ১১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে ৭৯ লাখ ৮৩,০৭৬ ডলারের, ডিসকাউন্ট বা মূল্যছাড় দিতে হয়েছে ১ লাখ ৬৭,৮১৮ ডলার, বিমানে পণ্য পাঠানোর কারণে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৫,৬৮৩ ডলার, দেরিতে পণ্য পাঠানোর কারণে ক্ষতি হয় ২৭ লাখ ১৩,৮৮১ ডলার আর ভাঙচুরে ক্ষতি হয় ৩৮ লাখ ৪০,৯০১ ডলার। এর আগে ২০১৩ সালে সহিংসতার সময় একই ভাবে ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করে বিজিএমইএ। ওই বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পোশাকশিল্প মালিকদের মূল্যছাড় দিতে হয়েছিল ৯ হাজার কোটি টাকার পণ্য। আর বেশি অর্থ দিয়ে উড়োজাহাজে পাঠাতে হয়েছিল ৫৫০০ কোটি টাকার পণ্য। বিজিএমইএ বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, তার হিসাব চেয়ে সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠায়। তারপর ১৪ই জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পাঠিয়েছে কারখানাগুলো। বিজিএমইএ’র সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম মানবজমিনকে বলেন, বায়ারস ফোরামের সঙ্গে কয়েকদিন আগে আমরা বৈঠক করি। ইউরোপ ও আমেরিকার ৯টি শীর্ষস্থানীয় বায়ার আমাদেরকে জানিয়েছেন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কাছে তারা সাময়িকভারে অন্যত্র অর্ডার শিফট করছে। তারাও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। তিনি বলেন, একই কারণে অনেক বায়ার অর্ডার বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া কেউ কেউ হংকং, চীন, থাইল্যান্ডের মতো তৃতীয় দেশে গিয়ে অর্ডার আনতে বলছে। শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, তার ঘনিষ্ঠজনের কারখানার অর্ডার বিদেশে গিয়ে আনতে হয়েছে। এতে দেখা যায়, কথা ছিল আড়াই লাখ পিস শার্টের অর্ডার করা হবে। শেষ মুহূর্তে বায়ার দেড় লাখ পিসের অর্ডার দিয়ে বিদায় করছে। আজিম বলেন, আগের চেয়ে এ বছর ইউরোপ ও আমেরিকায় পোশাকের খুচরা বিক্রি বেড়েছে। সেই হিসাবে আমরা বেশি ক্রয়াদেশ পাওয়ার আশা করছিলাম। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ক্রয়াদেশই বাতিল হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক কারখানার মালিকই স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৫ শতাংশ কম কার্যাদেশ পাচ্ছেন। একই সঙ্গে উৎপাদন ক্ষমতাও কমিয়ে দিয়েছেন। জানা যায়, ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ পর পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের পাহারায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পাঠানো শুরু হয়। তত দিনে অনেকের গুদামেই রপ্তানিপণ্য জমে গিয়েছিল। সে জন্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি ছিল। এবার টানা অবরোধের প্রথম দিন ৬ই জানুয়ারি থেকেই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ায় সমস্যা কম হচ্ছে। তাছাড়া, এখন রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে মূলত গ্রীষ্ম মওসুমের পোশাক হওয়ায় পরিবহন কম লাগছে। শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, গত বারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর কারণে এবার ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। তিনি বলেন, এখন ক্রয়াদেশ কম পেলে বিরাট সমস্যা হবে। কারণ ক্রয়াদেশের বিপরীতে ঋণপত্র খুলে মালিকেরা প্যাকিং ক্রেডিট নিতে পারেন। এটি না হলে অর্থসঙ্কটে পড়ে অনেকেই শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারবেন না। বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, পোশাকখাতের প্রতিদিনের উৎপাদন মূল্য প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা। যদি কোন কারণে দিনের অর্ধবেলার উৎপাদন বিঘ্নিত হয় এতে ক্ষতি হয় ২১৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালে পোশাকখাতের রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলার অর্জন করতে হলে প্রয়োজন দৈনিক ৯০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করা। গড়ে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ১১ শতাংশে রাখা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.