মহাসড়কের নিরাপত্তায় নামছে আনসার

রেল লাইনের পর সড়ক ও মহাসড়কের নিরাপত্তায় আনসার নামানো হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে রাজশাহী বিভাগের মহাসড়কগুলোতে ৬০০ জন আনসার নিয়োগ করা হবে। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে রংপুর বিভাগের সড়ক ও মহাসড়কের পাহারায় আরও ৪০ জন আনসার নিয়োগ হবে। গত বৃহস্পতিবার ৬০০ আনসার নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আনসার ও ভিডিপি’র মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো ওই নির্দেশনায় এ নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এর আগে গত ১২ই জানুয়ারি রেলপথের নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ ১০৪১টি পয়েন্টে ৮৩২৮ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা অবরোধ চলাকালে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি পয়েন্টে চারজন করে দুই শিফটে আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ই জানুয়ারি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে লেখা এক চিঠিতে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় আনসার নিয়োগের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন। বিভাগীয় কমিশনারের চিঠিতে বলা হয়েছে, চলমান সহিংস কর্মসূচি ও চোরাগোপ্তা হামলার কারণে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার সোনা মসজিদ স্থলবন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল ও সিরাজগঞ্জ বাঘাবাড়ি থেকে সার ও জ্বালানি পরিবহন সর্বোপরি বিভাগের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের সব জেলায় রেললাইন এবং বিস্তীর্ণ সড়ক ও মহাসড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং জানমালের নিরাপত্তাসহ কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ সংরক্ষণের জন্য ৬০০ আনসার মোতায়েনের অনুরোধ সংক্রান্ত ওই চিঠি’র ভিত্তিতে ফাইলটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। তিনি ওই প্রস্তাবে অনুমোদন দেন। এরপর ২২শে জানুয়ারি একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশে বিভাগীয় কমিশনারের চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, রাজশাহী বিভাগের বিশেষ আইনশৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসরণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা দেয়ার জন্য তাদের চাহিদা ও বাস্তব অবস্থার মধ্যে সমন্বয় করে আনসার মোতায়েনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এদিকে রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ৪০ জন আনসার নিয়োগ করার অনুরোধ জানিয়ে গত ১৫ই জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (গোপনীয়) মাহফুজুর রহমান। চিঠিতে বলা হয়েছে, গাইবান্ধা জেলার সাদুল্ল্যাপুর, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকার মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় দীর্ঘ মহাসড়ক রয়েছে। মহাসড়কের আশেপাশের এলাকা জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত। ২০দলীয় জোটের উগ্র নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই বিভিন্ন গোলযোগপূর্ণ স্থানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যানবাহন ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করে আসছে। শুধুমাত্র পলাশবাড়ি থানা এলাকার মহাসড়কেই ১৪টি গোলযোগপূর্ণ স্থান রয়েছে। জেলা পুলিশ ও অন্যদের নিয়ে দিন-রাত মহাসড়কে নিরাপত্তা দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই মহাসড়কের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ৪০ জন আনসার নিয়োগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। এ চিঠি’র ভিত্তিতে এখন রংপুর বিভাগে ৪০ জন আনসার দেয়া হচ্ছে। এর আগে হাইকমান্ডের নির্দেশে রেললাইনের পাহারায় আনসার নিয়োগ করা হয়। রেলওয়ে ফিশপ্লেট খুলে ফেলা, রেললাইন কেটে ফেলা, রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের চেষ্টাসহ বিভিন্ন স্থানে নাশকতার ঘটনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে গত বছরের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে বিএনপি জোট কয়েক দফা অবরোধ পালন করে। সে সময়ও রেলপথে প্রচুর নাশকতা হয়। এতে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ওই সময়ও আনসার ও ভিডিপি মোতায়েন করা হয়েছিল রেলপথে।

No comments

Powered by Blogger.