চা ও রাবার শিল্পে বিপর্যয় by ইমাদ উদ দীন

রাজনৈতিক অস্থিরতায় চা ও রাবার শিল্পে বিপর্যয়ের আশঙ্কায় মৌলভীবাজারে প্রতিদিন ক্ষতি প্রায় ৪ কোটি টাকা। এ অবস্থায় চা ও রাবার বাগান অধ্যুষিত এ জেলায় এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ভুগছেন চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। চলমান অবরোধের কারণে প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। আর  অনেকটা কাজ ছাড়াই বেতন ভাতা দিতে হচ্ছে অর্ধ লাখের বেশি শ্রমিককে। অবরোধের কারণে প্রতিনিয়তই শিল্প দু’টির ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত মালিক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় কারণেই ব্যাপক প্রভাব পড়েছে চা ও রাবার শিল্পে। বাগান থেকে প্রতিদিনের উত্তোলিত স্টকে থাকা কাঁচা রাবার ও চা পাতা চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাঠাতে না পারায় এগুলোর প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে সংগৃহীত কাঁচা রাবার ও চা পাতা শুধু পরিবহন করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে না পারায় এ মালামাল নষ্ট হচ্ছে। মওসুম না থাকার পরও এই দুই শিল্পের কাঁচামাল সময় মতো বিক্রি করতে না পারায় প্রতিদিনের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা। আর মওসুম হলে ক্ষতির পরিমাণ ২ থেকে ৩ গুণ বেশি হতো। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক সহিংসতা অব্যাহত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চা ও রাবারের দৈন্দিন কার্যক্রম। ফলে মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কায় বিপর্যস্ত এই দু’টি অর্থকরী শিল্প। মূলত এ শিল্প দু’টি সরাসরি কাঁচামাল উৎপাদনকারী হওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কাও বেশি। বাগান মালিকরা জানান, তাদের বাগানের উৎপাদিত কাঁচা চা পাতা চলমান অবরোধের কারণে পরিবহন করে চট্টগ্রাম ওয়্যার হাউজে প্রেরণ করতে পারছেন না তারা। আর বাগান থেকে আগের  উত্তোলিত পাতাও জমা করে রাখা যাচ্ছে না। আর  শুষ্ক মওসুম থাকায় নতুন করে পাতা উত্তোলন বন্ধ থাকায় স্টকের পরিমাণ না বাড়লেও আগের পাতাগুলোর গুণগত মানও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে একই অবস্থা রাবার শিল্পের। প্রতিদিনের সংগৃহীত কাঁচা রাবার তারা না পারছেন প্রক্রিয়াজাত করতে, না পারছেন তা ঢাকায় পাঠাতে। আর বাগানগুলোর প্রতিদিনের নির্দিষ্ট শ্রমিকদের না বসিয়ে রাখায় তাদের বেতন ভাতাও দিতে হচ্ছে। এতে উভয় সঙ্কটে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মালিকরা। শ্রমিকরা জানান, মালিক পক্ষ থেকে প্রতিদিন ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে তাদেরকে ছাঁটাই করার কথা শোনানো হচ্ছে। এতে তারা চাকরি হারানোর ভয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছেন। আর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন থেকে পুঁজি বিনিয়োগ করেও পর্যাপ্ত মাল না পাওয়ায় প্রতিদিন আর্থিক লোকসান গুনছেন। তাছাড়া শুষ্ক মওসুম থাকায় সেচের জন্য পানির পাম্প চালাতে হয়। অনেক বাগানে ডিজেল সঙ্কটের কারণে পাম্প চালাতে না পারায় ইয়াং টি ও নার্সিং টি মরে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,  মৌলভীবাজার জেলায়ই দেশের সবচেয়ে বেশি চা বাগান। দেশের ১৬৬টি চা বাগানের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় ৯২টি। আর এই ৯২টি চা বাগানে শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা। বাংলাদেশ রাবার মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা রাবার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক একেএম শাহজালাল বলেন, চলমান অবরোধের কারণে তাদের উৎপাদিত কাঁচামাল যেমন ঢাকায় পাঠাতে পারছেন না, তেমনি জ্বালানি সঙ্কটে কাঁচামালগুলো প্রক্রিয়াজাতও করা যাচ্ছে না। স্টকে থাকা কাঁচামালগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অবরোধের কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে কাঁচামাল না কেনায় এখন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। দ্রুত এ সমস্যার  সমাধান না হলে মালিকরা এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবেন কিনা তা নিয়ে তারা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টি স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া জানান, চলমান অবরোধের কারণে ওয়্যার হাউজের নিলাম কাজ বন্ধ না হলেও অবরোধের শুরু থেকে ট্রান্সপোর্টের অভাবে চট্টগ্রামে বাগানের উৎপাদিত চা নিলামের জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে বাগানগুলোতে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, এ অবস্থা সিলেটের সবক’টি চা বাগানের। এ সমস্যা দ্রুত নিরসন না হলে চা শিল্পে আরও তীব্র সঙ্কট দেখা দেবে। বর্তমানে জ্বালানি সঙ্কটের কারণেও অনেক বাগানের সেচ পাম্পগুলোও বন্ধ রয়েছে। শুষ্ক মওসুম থাকায় সেচ দিয়ে পর্যাপ্ত পানি না দেয়ায় ইয়াং টি ও নার্সিং টিগুলো মরে যাচ্ছে। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার জানান, চা বাগানগুলোতে এখন অফ সিজন থাকায় চা পাতা উত্তোলন বন্ধ থাকলেও চা গাছ পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন শ্রমিকরা। অবরোধের কারণে চা পাতা নিলামে না পাঠানোর কারণে আর্থিক সঙ্কটে থাকা বাগানগুলো চা শ্রমিকদের বেতন ভাতা ঠিকমতো দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায়  শ্রমিকরা তাদের চাকরি ও বেতন ভাতা নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.