সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বার্ন ইউনিট কতটা প্রস্তুত? by মানসুরা হোসাইন

(শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন, প্লাস্টিক অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি বিভাগ। ছবি: জাহিদুল করিম) রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট হরতাল-অবরোধে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে পাঁচটি শয্যা খালি রাখা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ ইউনিটে কেউ সেবা নিতে আসেনি। এখানকার চিকিৎসকেরা বলছেন, এ হাসপাতালে যে বার্ন ইউনিট আছে, তা জনগণ তেমনভাবে জানে না। ফলে ঢাকা বা ঢাকার বাইরে যেখানেই লোকজন দগ্ধ হচ্ছে, তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিড় করছে। ঘটনা ঘটার পর যারা আহত ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন, তাঁদের কাছেও এ হাসপাতালের সেবার বিষয়ে তথ্য নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ​বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ডাকা চলমান হরতাল-অবরোধে আজ রোববার পর্যন্ত মোট ৮৬ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হন। এখন ভর্তি আছেন ৫০ জন। তবে রাজধানীতেই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে হরতাল-অবরোধে দগ্ধ ব্যক্তিদের একজনও যাননি। আজ সকালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের কর্মরত চিকিৎসকেরা জানালেন, তাঁরা দগ্ধ ও পোড়া রোগীদের চিকিৎসায় প্রস্তুত আছেন। তবে শ্বাসনা​লি পুড়ে যাওয়া (গরম বাতাস নিঃশ্বাস দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলে) এবং পোড়ার পরিমাণ অনেক বেশি হলে এ মুহূর্তে তাঁদের ভর্তি করা যাবে না। কারণ, চার শয্যার নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রটি (আইসিইউ) চালু করা সম্ভব হয়নি। কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য চারটি ভেনটিলেটর বাক্সবন্দী হয়ে আছে। গ্যাসের লাইনসহ আরও বেশ কিছু বাকি আছে। আইসিইউর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও এনেসথেসিস্টও নেই। এ দুটি পদ সৃষ্টির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। বর্তমানে এখানে সরকার ‘সংযুক্তিতে’ এ পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছে।
২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর হাসপাতালটির বার্ন, প্লাস্টিক অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি বিভাগ, আইসিইউ ও জরুরি বিভাগ কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যান্য বিভাগ চালু হলেও আইসিইউ চালু হয়নি। ইউনিটের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা আশা করছেন, খুব দ্রুতই এটি চালু করা সম্ভব হবে। হাসপাতালের বার্ন, প্লাস্টিক অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ সিরাজী প্রথম আলোকে বলেন, হরতাল-অবরোধে যারা তুলনামূলকভাবে কম পুড়েছে তাদের ভর্তি করতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এই রোগীরাও ঢাকা মেডিকেলে ভিড় করছে। এ ছাড়া দগ্ধ ও পুড়ে যাওয়ার পরই স্যালাইন দেওয়া, ড্রেসিং করাসহ প্রাথমিক পরিচর্যাটা খুব জরুরি। এখানকার ইউনিটে যে ধরনের রোগীই আসুক না কেন, তাদের প্রাথমিক পরিচর্যা দেওয়ার পরই অন্য হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। এতে করে রোগীদের জটিলতা ও মৃত্যুহার কমানো সম্ভব হচ্ছে। মিরপুর, আগারগাঁও বা এ হাসপাতালের আশেপাশে যারা দগ্ধ হচ্ছে, তাদেরও ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছাতে সময় লাগছে বেশি। ফলে প্রাথমিক পরিচর্যাটা ব্যাহত হচ্ছে।
বার্ন ইউনিটে ১০টি পুরুষ এবং নারী ও শিশুদের জন্য ১০টিসহ মোট ২০টি শয্যা আছে। এ ছাড়া প্লাস্টিক সার্জারির জন্য আলাদা আটটি শয্যা আছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের দোতলায় অবস্থিত এ ইউনিটে স্থায়ী চিকিৎসক আছেন আটজন। প্রতি সপ্তাহে ছয়জন করে ইন্টার্নি চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। নার্স আছেন ১০ জন। বার্ন ও প্লাস্টিক ইউনিটের জন্য দুটি অপারেশন থিয়েটার আছে। তবে একটি অপারেশন থিয়েটার এখন পর্যন্ত চালু হয়নি। উন্নতমানের লাইটসহ অন্যান্য সরঞ্জাম এখানে বাক্সবন্দী করে রাখা আছে। ইউনিটের জন্য আলাদা অটোক্লেভ মেশিন, আলাদা ড্রেসিং রুম, দর্শনার্থীদের কাপড় পরিবর্তন করার জন্য নারী ও পুরুষের আলাদা ব্যবস্থা আছে। ভবিষ্যতে এটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ইউনিট হবে, সে প্রস্তুতি চলছে। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটটি চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত এখানে দুজন রোগী মারা গেছেন। একজনের বয়স ছিল ৯৫ এবং আরেকজনের ৬৫ বছর। এ ছাড়া তাঁরা হাসপাতালে এসেছিলেন অনেক দেরি করে। আহমেদ সিরাজী বলেন, বিদেশে ঘটনা ঘটার পরপরই রোগীরা বার্ন ইউনিটে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ততটা আশা করা কঠিন। তবে থানা পর্যায়ে অবস্থিত স্বাস্থ্য অবকাঠামোগুলোতে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দিলে অন্ততপক্ষে প্রাথমিক সেবাটা পেতে পারে রোগীরা। এরপর তারা ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ যেসব জায়গায় বার্ন ইউনিট আছে, সেখানে যেতে পারে। আর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ইউনিটটিতে দক্ষ জনবল বাড়ানোর কথা বলেন তিনি। এই চিকিৎসকের পরামর্শ, পোড়ার পরই কমপক্ষে আধা ঘণ্টা পোড়া জায়গায় সাধারণ পানি ঢালতে হবে। ডিম, পেস্ট, গোবর, আলু বাটাসহ কোনো কিছুই পোড়া জায়গায় না লাগিয়ে পরিষ্কার কাপড় পেচিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.