বার্ন ইউনিটই এখন বিপর্যয়ের মুখে

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট ১০০ শয্যার হলেও পোড়া রোগীর সংখ্যা এখন ৬০০। এর মধ্যে ৫১ জন হরতাল-অবরোধের আগুনে পোড়া। পেট্রলবোমায় দগ্ধ এত রোগীকে সামাল দিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক-নার্স-ওয়ার্ডবয়-পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকট নিয়ে বার্ন ইউনিট নিজেই এখন বিপর্যয়ের মুখে। গতকাল শনিবার হরতাল-অবরোধে দগ্ধদের জন্য বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের দোতলার একটি কক্ষ ও বারান্দায় নতুন একটি ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। রোগীর চাপ সামলাতে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে ৫০ জন নার্স আনা হয়েছে, চাওয়া হচ্ছে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসক। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান আবুল কালাম সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ৪৭ ধরনের সেবাসামগ্রী চেয়েছেন। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান আবুল কালাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক জুলফিকার আলী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক শামিউল ইসলাম এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু, নিউরোলজি, অর্থোপেডিকস ও নাক-কান-গলা বিভাগের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা গতকাল চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। বিভিন্ন ব্যক্তি দগ্ধ রোগীদের জন্য অনুদান দিয়েছেন। সেখান থেকে যখন যা প্রয়োজন তার জোগান দিয়েছেন। দিন-রাত ভুলে কাজ করছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, এ মুহূর্তে ইউনিটে ৩১ জন চিকিৎসক ৬০০ রোগীর জন্য তিনটি পালায় কাজ করছেন। তাঁরা হলেন সরকারের অনুমোদিত চিকিৎসক ৯ জন, ১৯ জন চিকিৎসক স্নাতকোত্তর শিক্ষা নিচ্ছেন এবং তিনজন অবৈতনিক চিকিৎসক। তিনটি পালায় নার্স কাজ করছেন ৭১ জন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন ১৬ জন। একজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁরা ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁরা বলছিলেন, শুক্রবার যখন একসঙ্গে ২৯ দগ্ধ যাত্রী আসে, তখন নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের সঙ্গে আনসারদেরও হাত লাগাতে হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দিনরাত কাজ করলেও রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন, সে কথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। প্রতি পালায় ১০ জন চিকিৎসক। এঁরাই রোগী দেখছেন, এঁরাই জরুরি অস্ত্রোপচার করছেন, ভিআইপিরা আসছেন, তাঁদের প্রটোকলও দিচ্ছেন। আমি শুক্রবার ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম। বাসায় ফিরেই হাসপাতালের ফোন। ভোররাত সাড়ে চারটা পর্যন্ত হাসপাতালে থেকে দুপুরে আবার এসেছি।’
গায়ে গায়ে রোগী: বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে শয্যা ১০০টি। গড়ে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী থাকেন। এই সংখ্যা এখন আরও বেড়েছে। গত শুক্রবার বাসে পেট্রলবোমা হামলায় ২৯ জনকে জায়গা দিতে বার্ন ইউনিটের দোতলায় গায়ে গায়ে বিছানা ফেলা হয়েছে। হরতাল-অবরোধে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাকাজের সমন্বয় করছেন চিকিৎসক লুৎফর কাদের। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আরও ছয়-সাতজন রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রটি ১০ শয্যার। এর পাঁচটিতে আগে থেকেই হরতাল-অবরোধে দগ্ধ রোগীরা আছেন। আর কোনো শয্যা খালি নেই। ফলে বাকিদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসকেরা বলেন, শ্বাসতন্ত্র পুড়ে গেছে যেসব রোগীর, তাঁদের শয্যার পাশেই ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এখন সংকটাপন্ন রোগীদের মধ্য থেকে যাঁরা বেশি সংকটাপন্ন, তাঁদের বেছে জায়গা দেওয়া হচ্ছে। রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়ও। পুরো বার্ন ইউনিট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

No comments

Powered by Blogger.