‘মুই কি বাচিম? মোর মেয়ে দুইটার কী হইবে?’

(রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবদুর রশিদ l ছবি: প্রথম আলো) ‘মুই কি বাচিম (বাঁচব)? মোর দুই মেয়ের বিয়া দিছি। বাকি মেয়ের দুইটার কী হইবে।’ ভেঙে ভেঙে কথাগুলো বলছিলেন পেট্রলবোমার শিকার আবদুর রশিদ। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন তিনি। তাঁর মুখমণ্ডলসহ শরীরের বেশির ভাগ অংশই পুড়ে গেছে। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ভূষিরবন্দর সেতু এলাকায় গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ট্রাকে পেট্রলবোমায় চালকের সহকারী রশিদ ও চালক হামিদুর রহমান দগ্ধ হন। তাঁদের বাড়ি দিনাজপুর সদরে। দুজনেই এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই দুজনসহ বিভিন্ন স্থানে পেট্রলবোমার শিকার হয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন মোট আটজন। রশিদের সঙ্গে আছেন তাঁর স্ত্রী সুলতানা আকতার। কিছু বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। অঝোরে কাঁদছেন। একপর্যায়ে বলেন, ‘ওমার (রশিদ) কিছু হইলে হামার সংসার চলবে কেমন করি। প্রতিদিনই চাউল লাগে। ভাত খাওয়া লাগে। পেট চলবে কেমন করি। যামরা (যারা) এইগলা (এগুলো) করেছে, তামারগুলার (তাদের) কি কোনো দয়া-মায়া নাই। ওমারগুলার কি কোনো ধর্ম নাই।’ রশিদের চেয়ে ট্রাকচালক হামিদুর রহমানের অবস্থা কিছুটা ভালো। তাঁর মুখসহ শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। হামিদুর জানান, পণ্য নিয়ে দিনাজপুর থেকে রংপুর এসেছিলেন। খালি ট্রাক নিয়া বাড়ি ফিরছিলেন। ভূষিরবন্দর সেতু এলাকায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করেই পাথর দিয়ে ট্রাকে ঢিল ছোড়া শুরু করে দুর্বৃত্তরা। পরে পেট্রলবোমা মারে। মুহূর্তেই ট্রাকে আগুন ধরে যায়। তিনি জানান, দুর্বৃত্তরা সাত থেকে আটজন আগে থেকেই ওত পেতে ছিলেন। হামিদুরের স্ত্রী রেনু আকতার বলেন, ‘দুইটা ছাওয়া। এলা যে কী খামো, কেমন করি চলবে। দেশটাত কী যে আজাব পড়িল।’ বার্ন ইউনিট সূত্র জানায়, আবদুর রশিদের শরীরের শতকরা ৯৫ ভাগ পুড়ে গেছে। হামিদুর রহমানের মুখসহ শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। দগ্ধ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি করা হচ্ছে না। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আবদুল কাদের খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবরোধে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’

No comments

Powered by Blogger.