প্রধানমন্ত্রীকে খালেদার ধন্যবাদ, কোকোর মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি না করার অনুরোধ শিমুল বিশ্বাসের

ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ ও সমবেদনা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কার্যালয়ে আসায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের একথা জানান। তিনি বলেন, “ঘুম ভাঙার পর খালেদা জিয়া যখন জানতে পারলেন সমবেদনা জানাতে প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন, তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।” এখনও তিনি (খালেদা জিয়া) মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত বলে জানান মারুফ কামাল খান। প্রধানমন্ত্রী  গেটে এসে ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এখানে এসেছেন, এটাই বড় কথা। এটা একটা মানবিক বিষয়, রাজনৈতিক বিষয় নয়। দয়া করে কেউ এটিকে রাজনৈতিক রঙে রঞ্জিত করবেন না। প্রধানমন্ত্রী আসবেন বলেছিলেন। আমরা এটা জানার পর তাদের জানিয়েছিলাম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার মতো কোনো অবস্থা তার ছিল না। আমাদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। খালেদা জিয়া স্বাভাবিক হলে প্রধানমন্ত্রীকে আসার আহ্বান করেছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ এসেছেন।” প্রধানমন্ত্রীকে কোনো অসৌজন্যতা দেখানো হয়নি জানিয়ে সোহেল বলেন,  “প্রধানমন্ত্রী আসার পর আমাদের সিনিয়র নেতারা যখন জানতে পারলেন তখন তাকে স্বাগত জানানোর জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে ঘটনা দ্রুত ঘটে গেছে। শেখ হাসিনা যদি আবার আসতে চান তাহলে আমরা তাকে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।”
কোকোর মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি না করার অনুরোধ শিমুল বিশ্বাসের
আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর শোক নিয়ে কোনো পক্ষকে রাজনীতি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। রাত ৯টা ১৯ মিনিটে গুলশান কার্যালয়ের ভেতরে অপেক্ষামান সাংবাদিকদের কাছে এই অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে এখানে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এপিএস শেখর সাহেব (সাইফুজ্জামান শেখর) যোগাযোগ করলে আমি তাকে বেগম জিয়ার অবস্থা জানিয়েছিলাম।’’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘উনার অফিসের কেউ কেউ বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে গেইটে ঢুকতে দেয়া হয়নি, প্রধানমন্ত্রী ফেরত গেছেন- এরকম প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এই শোককে কেউ যদি ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করে, এটা হবে দুঃখজনক।’’   তিনি বলেন, ‘‘আমি সকল পক্ষকে অনুরোধ জানাব, এই শোক নিয়ে কেউ যেন কুৎসিত ও নোংরা রাজনীতি না করেন। শোককে নিয়ে কেউ রাজনীতি করতে আমরা তা চাই না।’’ বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি শিমুল বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর আগমনের পুরো পটভুমি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর এপিএস আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আসার ইচ্ছার কথা জানান। আমি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বেগম জিয়ার কক্ষে যাই। কিন্তু তার ছেলের মুত্যুতে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়লে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা ম্যাডামকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর এপিএসকে জানিয়েছিলাম। এরপর আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কোনো যোগাযোগ কেউ করেনি।’’ ৮টা ৩৬ মিনিটে আকস্মিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘উনি এখানে এসেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সদ্দিচ্ছা ও আন্তরিকতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।’’ এক প্রশ্নের জবাবে শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ম্যাডাম এখনো ঘুমিয়ে আছেন। তিনি উঠলে তাকে আমরা প্রধানমন্ত্রীর আগমনের বিষয়টি অবহিত করব।’’ তিনি জানান, “প্রধানমন্ত্রীর কর্মকর্তাদের আমি আগেই জানিয়েছিলাম, বেগম জিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। তিনি উঠলে তাকে বিষয়টি জানিয়ে একটি সময় নির্ধারণ করা যাবে, যাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাইলে এখানে আসতে পারেন।’’ শিমুল বিশ্বাস অভিযোগ করেন, “প্রধানমন্ত্রী গুলশানের কার্যালয়ের সামনে এসেছেন শুনে আমি একরম দৌড়ে এসেছিলাম শোকবই নিয়ে। এটি এখনো আমরা হাতে আছে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ততক্ষণে চলে গেলেন।’’ এদিকে গুলশানের কার্যালয়ে রাতে জাসদ সভাপতি আসম আবদুর রব, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, গণস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট্রি ড. জাফরুল্লাহ সিদ্দিকীসহ অনেকে পেশাজীবী নেতারা এসেছিলেন। কিন্তু বেগম জিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে রাখায় তার সঙ্গে কেউই দেখা করতে পারেননি।

No comments

Powered by Blogger.