প্রতি রাতে সোনিয়ার সম্মানী ১৬ শ’ টাকা by সিদ্দিক আলম দয়াল

নাচতে নাচতে মানুষকে নাচাই। সেজন্য প্রতি রাতে সম্মানী নিই ১ হাজার ৬০০ টাকা। নগ্ননৃত্যের বিনিময়ে মুখের খাবার জোগাড় করি। শরীরের কাপড় খুলে এবং নেচে-গেয়ে দর্শককে মাৎ করতে হয়- সেজন্য। এভাবে নাচতেও ইচ্ছা হয় না, শরীর দেখাতেও ইচ্ছা হয় না। কিন্তু দর্শক আর মালিকের মন জয় করতে না পারলে পেটের ভাত বন্ধ হয়ে যাবে। এ কথাগুলো যাত্রাদলের নৃত্যশিল্পী সোনিয়ার। কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার একাধিক বালুচরেও এবার বসেছে যাত্রাপালার আসর। তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের নিঝুম বালুচরে সন্ধ্যার পর জ্বলে ওঠে বিজলিবাতি। নির্জন বালুচরে সোলার সিস্টেমে আলোকিত করা হয়েছে। বালুচরের বিজলিবাতির আলোতে ঝলমলে হয়ে ওঠে বালুচর। দূরদূরন্ত থেকে বালুচরের মানুষ মুখ-চোখ বেঁধে জমায়েত হয় যাত্রা প্যান্ডেলে। একদিকে জুয়া, অন্যদিকে মানুষকে আকর্শন করতে চলে নগ্ননৃত্য। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে চলে কিশোরী-যুবতীদের উদোম নাচ। কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর, গাইবান্ধার মোল্লারচরে চলছে এসব। সার্কাস ও যাত্রার নামে জুয়ার আসরসহ চলে নৃত্যের নামে নারীদের শরীর প্রদর্শন। অন্তত ৩০টি স্পটে জুয়া, সার্কাস ও মেলার নামে শুরু হয়েছে উলঙ্গ নৃত্য। আর বেশির ভাগই চলছে মহাসড়কঘেঁষে। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে কাটাখালী বালুয়া, ফাসিতলা, ফুলপুকুরিয়া সাদুল্যাপুরের অন্তত ৬টি। গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের পাশে সাকোয়া ব্রিজের পাশে, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উদিয়াখালী, বাদিয়াখালী, সুন্দরগঞ্জের লখিয়ারপাড়া, সাদুল্লাপুর উপজেলার গাইবান্ধা সড়কের পাশে ঢোলভাঙা। সার্কাসের প্যান্ডেল। ঢোল বাজিয়ে বলা হয় সার্কাস। কিন্তু নেই সার্কাসের জাদু ও পশুপাখি। দিনের বেলায় থাকে জনশূন্য। সন্ধ্যায় জ্বালানো হয় বাতি। রাতে সরগরম হয়ে ওঠে। গ্রামাঞ্চল থেকে ছুটে আসে ছেলে, বুড়ো, যুবক ও কিশোর। তারপর টিকিট কেটে নগ্ন নাচ দেখতে অংশ নেয় তারা। দর্শকদের ছিটিয়ে দেয়া টাকা কুড়িয়ে নেয়ার মতো লোক পাশেই থাকে। তারা থলেতে ভর্তি করে রাখে টাকা। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, ঢোলভাঙায় প্রকাশ্যে চলে এমন কারবার। চলে দর্শকদের উল্লাস, চিৎকার, টাকা ছুড়ে দেয়া আর মানুষের আনন্দ। একসময় ভোরের আলো ফুটে ওঠে আর শরীর নেতিয়ে পড়ে সোনিয়ার। তারপর আরেকজন ও অন্যরা। তারা হলো বিউটি, মঞ্চুয়ারা, শামীমা, স্বপ্না, রতনা, দীপালী, মন্টিসহ এক ঝাঁক তরুণী।

No comments

Powered by Blogger.