আরাফাত রহমান কোকো আর নেই

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ইন্তিকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের একটি হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৪৫ বছর। আজ মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় বাদ জোহর দেশটির কেন্দ্রীয় মসজিদে আরাফাত রহমানের প্রথম জানাজা হবে। তবে লাশ দেশে আনার বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত পরিবার বা বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। ছোট ভাইয়ের লাশ দেখতে লন্ডন থেকে তারেক রহমানের মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমাদের লন্ডন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আরাফাত রহমানের মৃত্যুর খবরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের বাসায় ভিড় করেন। সেখানে মিলাদ মাহফিলও হয়। শোকাহত তারেক রহমান মালয়েশিয়া যাবেন না বলেও তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। লন্ডনের স্থানীয় সময় আজ বাদ আসর আরাফাত রহমানের গায়েবানা জানাজা হবে বলে লন্ডন বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন। এদিকে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করা বিএনপি চেয়ারপারসন ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পান সেখানে বসেই। দুপুরের পর পরিবারের সদস্যরা তাকে ছেলের মৃত্যু-সংবাদ দেন। এ খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন খালেদা। এরপর থেকে ছেলের শোকে মুহ্যমান খালেদা একান্তে নিজ কক্ষে অবস্থান করেন। দলের নেতারাও তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। রাতে খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস জানান, শোকে বিহবল খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবেদনা জানাতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বাইরে গেলেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। কার্যালয়ের বাইরে কিছুক্ষণ অবস্থান করে ফিরে যান। এদিকে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর খবরে দুপুরের পর থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে ভিড় করেন দলীয় নেতাকর্মী, ২০ দলের নেতা ও বিশিষ্টজনরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ওই বছর ৩রা সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি থেকে আরাফাত রহমান কোকোকে আটক করা হয়। ২০০৭ সালের ১৭ই জুলাই কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রী সৈয়দ শর্মিলী রহমান সিঁথি, দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান কোকো। এরপর থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ায় চলে যান তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ার একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। বিএনপি ও পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় অসুস্থ থাকায় তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই কোকোর বিরুদ্ধে মুদ্রাপাচারের একটিসহ মোট পাঁচটি মামলা হয়েছিল। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কোকোর প্যারোলের মুক্তির সময়সীমা আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। মা ও বড় ভাই রাজনীতিতে থাকলেও আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন রাজনীতির আড়ালে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর অবশ্য তাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উপদেষ্টা করা হয়েছিল। এদিকে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে বিএনপি ও ২০ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে আসে। জোটের নেতাকর্মীরা সমবেদনা জানাতে দিনভর খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে যান। গতকাল বিকাল থেকে গুলশানের কার্যালয়ে পাশের একটি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা কোরানখানিতে অংশ নেন। সন্ধ্যার পর নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন হাফেজ বেলালী। এ সময় বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ। খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে তার কার্যালয়ে যান প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে যান বোন সেলিমা ইসলাম, ভাই সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন সাঈদ, শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম, বেগম সারোয়ারী রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, রুহুল আমিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দীন আহমেদ, ঢাবি সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক সদরুল আমিন, শিক্ষক আ খ ম আখতার হোসেন খান, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ইব্রাহিম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.