কখন আসবে মোর বুকের ধন by আব্বাছ হোসেন

জাকির তার নিজের এবং পরিবারের ভাগ্য ফিরাতে উগান্ডায় গিয়েছিল। তার পরিবারের আশা ছিল জাকির বিদেশে গেলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। ৪ লাখ টাকা সংগ্রহ হয় জমি বিক্রি করে। এরপর গত ১৩ই নভেম্বর তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। কিন্তু সেখানে তাকে না নিয়ে; নেয়া হয় উগান্ডায়। তাকে নিয়ে যায় মানবপাচারকারী দালাল শরিফ ও তার লোকজন। জাকিরের পরিবার এখন কাঁদছে। জাকিরের টাকার আশায় নয় তার লাশ একবার হলেও দেখার। তাকে সেখানে নির্যাতন করে হত্যা করেছে দালাল শরিফ হোসেনসহ অন্যরা। ছেলের এমন মৃত্যুর সংবাদ শুনে কাঁদছেন তার বৃদ্ধ মা সামছুন নাহার। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার আটিয়াতলী গ্রামে গিয়ে এমন সংবাদ দিলেন গ্রামবাসী। এলাকায় ও পরিবারের মধ্যে চলছে শোকর মাতম। বুক চাপড়িয়ে মা বলছেন, কখন আসবে মোর বুকের ধন। সোনামানিক। কাঁদতে কাঁদতে তার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। দালাল শরিফ হোসেন ও অন্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচার দাবি করে বুধবার বিকালে বাগবাড়ির একটি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বড় ভাই সামছুদ্দিন। তিনি তার ভাইয়ের লাশটি ফেরত পেতে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শ্রম ও কর্মসংস্থান  মন্ত্রণালয়ের  সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, জমিজমা বিক্রি করে ও সুদের ওপর ৪ লাখ টাকা নিয়ে গত ১৩ই নভেম্বর ছোট ভাই জাকির হোসেনকে আদম ব্যাপারী (দালাল) একই উপজেলার বিজয়নগর গ্রামের ফখরুল ইসলামের ছেলে শরিফ হোসেনের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো হয়। কিন্তু দালাল শরিফ ও তার লোকজন দক্ষিণ আফ্রিকায় না নিয়ে ১৪ই নভেম্বর সকালে দুবাই হয়ে উগান্ডায় নেয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় না নিয়ে উগান্ডায় কেন নেয়া হলো- এ বিষয়ে দালাল শরিফের লোক দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়। এসময় দেলোয়ার হোসেন আমার ভাই জাকির হোসেনকে বলে আপাতত কয়েকদিন এইখানে থাকতে হবে। পরিস্থিতি ভালো হলে পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় নেয়া হবে। এভাবে কেটে যায় জাকির হোসেনের দেড় মাস। এ সময় জাকির হোসেন তার চাকরির কথা বললে শরিফ হোসেনের লোকজন তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। এসব নিয়ে জাকির হোসেনের সঙ্গে দালাল শরিফ হোসেনের লোক দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যদের প্রায়ই কথাকাটাকাটি হতো। এর জের ধরে ৯ই জানুয়ারি সকালে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার অদূরে বেদম মারধর করা হয় তাকে। এতে জাকির হোসেন গুরুতর আহত হলে রাজধানীর অদূরে ফেইস হাসপাতাল নামে একটি হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। এ খবর আমাদেরকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে থাকা একাধিক লোক। কিন্তু পরের দিন রাতে দেলোয়ার হোসেন ২৫৬৭৫৯৫১২৭৪২ এ নাম্বার থেকে মোবাইল ফোনে আমাদেরকে জানায়, জাকির হোসেন অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। বর্তমানে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার ফেইস হাসপাতাল মর্গে লাশ পড়ে আছে। লাশ বাড়িতে নিতে ৮ লাখ টাকা তার কাছে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য সে চাপ সৃষ্টি করে। সামছুদ্দিন জানান, কোথায় টাকা পাবো? তিনি তার মায়ের মতোই শোকে কাতর। দিনরাত কাঁদছেন জাকিরকে একবার দেখার জন্য। কিন্তু কে দাঁড়াবে তাদের পাশে।

No comments

Powered by Blogger.