তৈরি হচ্ছে প্লট, চট্টগ্রামে রাতের আঁধারে পাহাড় কাটার মহোৎসব by মহিউদ্দীন জুয়েল

ট্টগ্রামে রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে হাউজিং সোসাইটি বানাচ্ছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পুলিশ সদস্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নাকের ডগায় এই কাজ চললেও তারা বলছেন ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কতিপয় অসৎ সদস্যকে ম্যানেজ করে এই কাজ করছি চক্রটি। ইতিমধ্যে পাহাড় কেটে সেখানে প্লট বিক্রির জন্য সাইনবোর্ডও ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সরজমিনে দেখা যায়, শহরের পূর্ব পাহাড়তলীর পশ্চিম খুলশী জালালাবাদ এলাকায় গ্রিনল্যান্ড হাউজিং লিমিটেডের প্রকল্প বলে বিশাল আয়তনের একটি পাহাড় কেটে সাফ করে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গেলে বাধা দেন স্থানীয় কয়েকজন সন্ত্রাসী। স্থানীয় সূত্র জানায়, পাহাড়ের প্রবেশ মুখে সিন্ডিকেটটি কৃষ্ণচূড়া আবাসিক এলাকা বলে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে রাতের বেলায় বড় বড় মাটি কাটার মেশিন দিয়ে এই কাজটি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পাহাড় কেটে খোলা জায়গায় বাড়ি-ঘর বরাদ্দ দেয়া ছাড়াও চলছে দোকান পাট তৈরি ও বিকিকিনির মহোৎসব। এতে অবাধে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে হাজার বছরের চট্টগ্রাম নগরীর সৌন্দর্য বর্ধক প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী পাহাড়টি। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলাকার কিছু পাহাড়খেকো ব্যক্তি তাদের ব্যক্তি স্বার্থে সরকারি খাস পাহাড় কেটে সেখানে ঘর-বাড়ি, দোকানপাট নির্মাণ ও মাটি বিক্রি করছে। এসব বিক্রি করে রাতারাতি তারা শত-কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে তাদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় হিসেবে পরিচিত মুস্তাফিজুর রহমান, কবির আহমদ, ফয়জ আহমদ, রিপন চৌধুরী, প্রকল্পের ঠিকাদার শামসু, প্রকল্পের ম্যানেজার আইয়ুবসহ অন্তত ২০ জনের একটি সিন্ডিকেট। স্থানীয় এমপির নাম ব্যবহার করে ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে তারা এসব অপকর্ম করছে বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অনেকে। তাদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। মূলত এরা সবাই মিলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে আড়ালে করতে চাইছে পুরো কাজটি। পাহাড়তলী এলাকার সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, শুনেছি এখানে পাহাড় কেটে একটি বহুতল পর্যটন কমপ্লেক্স হবে। বিশাল আয়তনের পাহাড়টি কেটে সৌন্দর্যহানিসহ গোটা এলাকার পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।  স্থানীয় লোকজন আরও জানান, রাত হলেই এখানে শুরু হয় পাহাড়কাটা। স্কেভেটর ও বুলডোজার দিয়ে চলে সারারাত পাহাড় কাটা। নগরীর জাকির হোসেন রোড থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে এই চিত্র। নিচ থেকে ওপরে অন্তত ২০০ ফুট এলাকা পাহাড়ের কাটা মাটি দিয়ে সমান করা হয়েছে। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল আলম বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাহাড় কাটা পরিবেশের জন্য হুমকি। কেউ এই কাজ করলে প্রচলিত পরিবেশ আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে।

No comments

Powered by Blogger.