চাঁপাই নবাবগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযান, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

যৌথবাহিনীর অভিযান। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের পালিয়ে যাওয়া। ভুক্তভোগী বহু নিরীহ পরিবার। লেলিহান আগুনে পুড়ে যাওয়া স্বপ্ন। কান্না আর আর্তনাদের শব্দ। এ দৃশ্য চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের। ঢাকা থেকে ৩৩৬ কিলোমিটার দূরের এই উপজেলার মানুষের গতকালের দিনটি শুরু হয়েছিল অন্যদিনের মতোই। কিন্তু সকালে শুরু হওয়া যৌথবাহিনীর অভিযান মুহূর্তে বদলে দেয় সবকিছু। শিবগঞ্জ থেকে একাধিক ব্যক্তি ঢাকায় মানবজমিন কার্যালয়কে নানা মাধ্যমে জানিয়েছেন সে অভিযানের খবর। তাদের বর্ণনামতে, সকাল থেকে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি’র সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর একাধিক দল বিভক্ত হয়ে অভিযান শুরু করে। পুরো উপজেলায় পরিচালিত হয় এ অভিযান। অভিযানে বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশির নামে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে কমপক্ষে ৩০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছাই হয়েছে বাড়ির আসবাবপত্র। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় পুরো এলাকা এখন পুরুষশূন্য। এলাকার সকল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত এসব এলাকা সন্ত্রাসমুক্ত না হবে ততক্ষণ তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযানে ২৫ জামায়াত-বিএনপি’র কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে শিবগঞ্জ থানার ওসি জানিয়েছেন। শিবগঞ্জ পৌর এলাকার রসূলপুর, শ্যামপুর এলাকার উমরপুর, চামাবাজার, বাবুপুর, শাহবাজপুর এলাকার ধোবড়া, মুসলিমপুর এলাকায় অভিযানের সময় তল্লাশির নামে ব্যাপক ভাঙচুর ও কিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানিয়েছে। রসূলপুর এলাকার মো. ইয়াসিনের বাড়িতে ঘরের শোকেস, আসবাবপত্র ও ফ্রিজ ভাঙচুর শেষে একটি  মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া ওই এলাকার মো. আলম, একরামুল হক, আবু সুফিয়ানের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা, মাওলানা আবদুল মালেক, আনসারুল ইসলাম, মংলু সরদার, জয়নাল আবেদীন ও মজিবুর রহমানের বাড়িসহ আরও ৭/৮টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। অন্যদিকে যৌথবাহিনীর অপর একটি দল শাহবাজপুর (ধোবড়া) এলাকায় অভিযানের সময় দুরুল হুদা, আবদুল মকিমের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ আরও ৫/৬টি বাড়িতে হামলা, ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে দুরুল হুদা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এমএম ময়নুল ইসলাম বলেন, অভিযানে সাধারণ মানুষকে হয়রানি বা আটক করা হচ্ছে না। যারা বোমাবাজ, দুষ্কৃতিকারী এবং একাধিক মামলার পলাতক আসামি শুধু তাদের ধরতেই এ অভিযান। প্রশাসনের পক্ষে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, রসূলপুর, কানসাট, ধোবড়া ও মুসলিমপুরে সন্ত্রাসীরা হরতাল ও অবরোধের নামে মানুষ হত্যাসহ ব্যাপক সহিংসতা চালিয়ে আসছিল। বিশেষ করে সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবোঝায় ট্রাক পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব’র প্রহরায় পারাপার করা হলেও হামলাকারীদের নিবৃত করা যাচ্ছে না। তাদের হামলায় বেশ কয়েকটি পণ্যবোঝায় ট্রাক পুড়ে গেছে। আহত হয়েছে অনেক চালক ও তার সহযোগী। অভিযানের সময় যৌথবাহিনীর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার বানী ইসরাইল বলেন, দুর্বৃত্তরা কয়েকটি বাড়িতে আগুন দিলে যৌথবাহিনীর সহায়তায় স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার আফাজ উদ্দিন বলেন, সকাল ১১টার দিকে শিবগঞ্জের রসূলপুর মোড়ে যৌথবাহিনী জননিরাপত্তার উদ্দেশে টহল দেয়। তবে, বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই।
শিবগঞ্জের ৫০টি বাড়িতে হামলার অভিযোগ জামায়াতের
সরকার গণআন্দোলন দমনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। তিনি এই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ সরকারের সন্ত্রাসী হামলা, মামলা, গণগ্রেপ্তার ও জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। হরতাল ও অবরোধ চলাকালে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, চাঁদপুর, রংপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, গাজীপুর, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, সিলেট, নেত্রকোনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, ভোলা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, মেহেরপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০ দলীয় জোটের প্রায় চারশ’ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জামায়াত-শিবির নেতাদের ৫০টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও বাড়ির আসবাবপত্র জ্বালিয়ে দিয়েছে। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ সারা দেশে প্রায় চারশ’ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণ বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকারসহ যাবতীয় গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে একদলীয় ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন করছে। এ আন্দোলন জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও বাঁচার অধিকার আদায়ের আন্দোলন। স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। জনগণ স্বৈরাচারী সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর। তাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মিছিল, সমাবেশ ও অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.